২০৩০ সালের মধ্যে চাঁদের মাটিতে পারমাণবিক চুল্লি বসানোর পরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়নের পথে এগোচ্ছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। এমনটাই জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যমগুলো।
এই উদ্যোগের লক্ষ্য চাঁদের মাটিতে মানুষের জন্য স্থায়ী ঘাঁটি নির্মাণ, যেখানে দীর্ঘমেয়াদে বসবাস এবং গবেষণা সম্ভব হবে।
প্রসঙ্গত, নাসার ভারপ্রাপ্ত প্রধান হিসেবে নিযুক্ত মার্কিন পরিবহন সচিব শন ডাফি এক চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, চীন ও রাশিয়ার মতো দেশগুলো চাঁদের কোনো নির্দিষ্ট অংশকে ‘প্রবেশ নিষিদ্ধ এলাকা’ ঘোষণা করতে পারে। নতুন এই পরিকল্পনার পেছনে বৈজ্ঞানিক কারণ যেমন আছে, তেমনই রয়েছে ভৌগোলিক প্রতিযোগিতার বিষয়টিও। কিছু বিজ্ঞানীর মতে, এই উদ্যোগটি মূলত একটি নতুন মহাকাশ প্রতিযোগিতার অংশ যেখানে জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে বিজ্ঞানচর্চার চেয়ে।
চিঠিতে শন ডাফি বাণিজ্যিক কোম্পানিগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, এমন একটি পারমাণবিক চুল্লির নকশা জমা দিতে যা অন্তত ১০০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারবে। তুলনামূলকভাবে এটি ক্ষুদ্র ক্ষমতার, কারণ একটি সাধারণ স্থলভিত্তিক উইন্ড টারবাইন ২-৩ মেগাওয়াট শক্তি উৎপাদন করে।
২০২২ সালে নাসা তিনটি কোম্পানিকে ৫০ লাখ ডলারের চুক্তি দিয়েছিল চুল্লির প্রাথমিক নকশা তৈরির জন্য। চাঁদের একদিন পৃথিবীর চার সপ্তাহের সমান—যার মধ্যে দুই সপ্তাহ দিন এবং দুই সপ্তাহ রাত। ফলে সৌরশক্তির উপর নির্ভর করা কঠিন।
ইউনিভার্সিটি অব সারের ড. সাংউ লিম বলেন, চাঁদের উপর একটি ছোট ক্রু রাখার জন্য যেটুকু বিদ্যুৎ দরকার, তা পূরণে সৌর শক্তি ও ব্যাটারি যথেষ্ট নয়। পারমাণবিক শক্তিই একমাত্র কার্যকর সমাধান।
নাসার বাজেটে ২০২৬ সালে ২৪ শতাংশ কাটছাঁটের ঘোষণা এসেছে ট্রাম্প প্রশাসনের তরফে। এতে মারাত্মকভাবে প্রভাব পড়েছে মঙ্গলগ্রহের নমুনা ফেরত আনার প্রকল্পসহ অনেক বিজ্ঞানভিত্তিক উদ্যোগে। ল্যাঙ্কাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লায়নেল উইলসন বলেন, প্রযুক্তিগতভাবে এটি সম্ভব, তবে অর্থায়ন ও যথেষ্ট সংখ্যক আর্টেমিস লঞ্চের প্রয়োজন আছে।
তবে চাঁদে পারমাণবিক চুল্লি পাঠানোর আগে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো চুল্লির তেজস্ক্রিয় উপাদান পৃথিবী থেকে মহাকাশে পাঠানো। ওপেন ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানী ড. সাইমন বারবার বলেন, এতে নিরাপত্তার বিষয়টি জড়িত। যদিও বিশেষ অনুমোদনের মাধ্যমে এটি সম্ভব, তবে তা সহজ নয়।
ড. বারবারের মতে, বর্তমানে যে ধরনের ভাষা ও কৌশল ব্যবহার হচ্ছে, তা পূর্ববর্তী স্পেস রেসের কথাই মনে করিয়ে দেয়, যেখানে জাতীয়তাবাদী লক্ষ্যগুলো বিজ্ঞানকে ছাপিয়ে যায়। তিনি আরও বলেন, নতুন করে চাঁদের অংশবিশেষকে নিজেদের অধিকারভুক্ত হিসেবে দাবি করার ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে, যেটা একটি উদ্বেগজনক প্রবণতা।
২০২০ সালে চালু হওয়া ‘আর্টেমিস অ্যাকর্ডস’ অনুযায়ী, যেসব দেশ চাঁদে স্থাপন কার্যক্রম চালাবে, তারা ওই এলাকার চারপাশে নিরাপত্তা অঞ্চল ঘোষণা করতে পারবে। কিন্তু সমালোচকদের মতে, এটি অনেকটা এই অংশ আমাদের, কেউ ঢুকতে পারবে না ধরনের মনোভাব তৈরি করতে পারে।
নাসার আর্টেমিস-৩ মিশনের মাধ্যমে ২০২৭ সালে মানুষকে চাঁদে পাঠানোর পরিকল্পনা থাকলেও বাজেট ঘাটতি ও অন্যান্য বিলম্বের কারণে সেই লক্ষ্য অনিশ্চিত। ড. বারবারের মন্তব্য, আপনি যদি একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করেন কিন্তু সেখানে মানুষ বা যন্ত্রপাতি পাঠাতে না পারেন, তাহলে সেটা কোনও কাজে আসবে না।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল