সোমবার, ১৫ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

ফিরে আসুক ফুটবলে সোনালি দিন

কায়সার হামিদ

ফিরে আসুক ফুটবলে সোনালি দিন

আগে সংগঠকরা খেলোয়াড় খুঁজতে ব্যস্ত থাকতেন। জেলায় জেলায় ঘুরে বেড়াতেন প্রতিভার সন্ধানে। তাই ঢাকার বাইরে থেকে কত ফুটবলার যে এসেছেন তার হিসাব মেলানো মুশকিল। বাদল রায়, মোসাব্বের, সালাম মুর্শেদী, আশিস ভদ্র, রামা লুসাই, আবুল কোহিনুর, লোভন, মোনেম মুন্না, রুমি, সম্রাট হোসেন এমিলি। কত যে নাম বলে শেষ করা যাবে না। তারা তো শুধু ঘরোয়া নয়, আন্তর্জাতিক ফুটবলেও মাঠ কাঁপিয়েছেন। ১০ বছর ধরে দেশে কি সেই মানের নতুন ফুটবলারের সন্ধান মিলেছে? এতটা করুণ অবস্থা যে, এখন জাতীয় দল গড়তেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। চারদিকে শুধুই শূন্যতা। ঢাকার বাইরে ফুটবলের মৃত্যু ঘটেছে এ কথা বললেও ভুল হবে না।

কর্মকর্তারা এখন উন্নয়নের চেয়ে চেয়ারকে গুরুত্ব দিচ্ছেন বেশি। ফেডারেশন বা ক্লাব সব ক্ষেত্রে একই অবস্থা। ফুটবল নিয়ে হাহাকারের প্রধান কারণ এটিই। দেখেন আমরা যখন খেলতাম তখনো দেশকে বড় কোনো উপহার দিতে পারিনি। তবে জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে। কাজী সালাউদ্দিন ভাই এক অনুষ্ঠানে নাকি বলেছিলেন, ভিশন তাঁর ২০২২ বিশ্বকাপ। এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে গেছে। যে বাংলাদেশ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে হতাশা ছাড়া কিছুই দিতে পারছে না, সেখানে লক্ষ্য বিশ্বকাপ হয় কীভাবে? তবে এটা ঠিক যে, কোনো কাজে একটা লক্ষ্য থাকতে হয়। তা না হলে এগোনো যায় না। সালাউদ্দিন ভাই ২০০৮ সাল থেকেই বাফুফে সভাপতি। বিস্ময় হলেও সত্যি যে, তিনি কোন লক্ষ্যে কাজ করছেন তা নিজেই জানেন কিনা সন্দেহ রয়েছে।

অনির্বাচিত বা নির্বাচিত বাফুফের আগের কমিটিও ফুটবল উন্নয়নে তেমন ভূমিকা রাখতে পারেনি। সালাউদ্দিন ভাই, সালাম ভাইরা ফুটবলের দায়িত্ব নেওয়ার পর আমরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলাম। একজন জাত ফুটবলারই পারেন ভালো-মন্দ দিকটা চিহ্নিত করতে। ফুটবল অনেকেই বোঝেন। কিন্তু এ জায়গায় আমি সালাউদ্দিন ভাইকে আলাদা রাখতে চাই। তিনি শুধু সুপার স্টারই ছিলেন না, জাতীয় দলের অধিনায়ক, কোচ ও ম্যানেজমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। তাঁর মাধ্যমে আকাশছোঁয়া না হোক পরিবর্তন আসবে এ প্রত্যাশা সবারই ছিল।

দায়িত্ব নেওয়ার পর সালাউদ্দিন ভাই সেই স্বপ্নও দেখিয়েছিলেন। কোটি টাকার সুপার কাপ আয়োজন করে দর্শক ফেরান মাঠে। মনে হচ্ছিল শুরু হয়ে গেল সালাউদ্দিনের ক্যারিশমা। এরপর শুধু হতাশা আর হতাশা। টানা চার মেয়াদ ধরে সালাউদ্দিন ভাই সভাপতির দায়িত্বে আছেন। সালাম ভাইসহ অনেকে আছেন। কিন্তু কী পেলাম আমরা। না আছে মান, না জনপ্রিয়তা।

নতুন ফুটবলার সৃষ্টি হবে তার কোনো লক্ষণ দেখছি না। সালাউদ্দিন ভাইকে বোঝানো দরকার নেই উন্নয়নে তৃণমূল পর্যায় থেকে কাজ করতে হবে। আমি মোহামেডানে খেলেই দেশব্যাপী পরিচয় পেয়েছি। আমি তো আর হুট করে ফুটবলার হয়ে যাইনি। স্কুল পর্যায়ে থেকে খেলা শুরু করে এ পথে এসেছি। এখন তো না আছে স্কুল না বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্ট। জেলার ফুটবল তো পুরোপুরি অচল হয়ে পড়েছে। এভাবে চললে ফুটবলারের সন্ধান মিলবে কীভাবে?

অনেকের সঙ্গে আমিও বাফুফে বা সালাউদ্দিন ভাইয়ের সমালোচনা করছি। আমি তো ছোটবেলা থেকেই তাঁর অন্ধ ভক্ত। অসুস্থ ছাড়া সালাউদ্দিন ভাইয়ের খেলা মিস করেছি তা আমার জানা নেই। তাঁর প্রতি আগে ও এখনো শ্রদ্ধাবোধটা আছে। সমালোচনাটা করি মনের দুঃখে। ফুটবল তো আমার রক্তে মিশে গেছে। এ খেলার করুণ পরিণতি দেখে নীরব থাকি কীভাবে। আমি তো চাই ফুটবলে সোনালি দিন ফিরে আসুক। এর কি কোনো পরিবর্তন হবে না?

সালাউদ্দিন ভাই এখনো ইউরোপিয়ান ফুটবলের উদাহরণ টানেন। কই তার ছিটেফোঁটা কি দেখতে পেয়েছি। আমি বার্সেলোনা, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, ম্যানচেস্টার সিটিসহ পৃথিবীর অনেক বিখ্যাত ক্লাবে গেছি। দেখেছি ওখানে তারা শুধু সাফল্য নয়, আগামী ফুটবলার সন্ধানে বয়স ভাগ করে কাজ করছে। মেসি, রোনালদোরা তো বিখ্যাত হয়েছেন তৃণমূল থেকেই। মানলাম ইউরোপের স্টাইলে সম্ভব নয়। প্রতিবেশী ভারত ফুটবল উন্নয়নে যে কাজ করছে সেটাই অনুসরণ করুক।

ফেডারেশন নয়, ফুটবল উন্নয়নে ক্লাবগুলোরও অনেক দায়িত্ব আছে। মোহামেডান, শেখ জামাল প্রতিভা অন্বেষণের কর্মসূচি শুরু করেও থেমে গেছে। বসুন্ধরা কিংসই একমাত্র ফুটবল উন্নয়নে কাজ করছে। ক্লাবগুলো শুধু লিগ খেলবে আর কিছু করবে না তা তো মানা যায় না। বলা হয় ক্রিকেটের দিকে বেশি নজর দেওয়ায় ফুটবলে এ বেহাল দশা। আমি তা কোনোভাবেই মানি না। ক্রীড়াপ্রেমিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার বলছেন, ফুটবল বাঙালির প্রাণের খেলা। একে জাগিয়ে তুলতে যা যা সহযোগিতা দরকার আমি করব। এরপরও সালাউদ্দিন ভাইয়া শুধু চেয়ার আর মিটিংয়ে ব্যস্ত কেন?

 

লেখক : ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব।

সর্বশেষ খবর