বৃহস্পতিবার, ১০ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

জেগে ওঠার এই তো সময়

অক্টোবরে ঢাকায় এশিয়া কাপ হকি

ক্রীড়া প্রতিবেদক

জেগে ওঠার এই তো সময়

নিজেদের দ্বন্দ্ব মিটিয়ে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল ঢাকায় আসছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামে বাংলাদেশের বিপক্ষে দুটি টেস্ট খেলবে তারা। অস্ট্রেলিয়া বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দল। তাদের আগমন নিঃসন্দেহে ক্রীড়াঙ্গনে সাড়া ফেলবে। শুধু তাই নয় স্মিথদের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের স্বপ্ন দেখছে টাইগাররা। জিম্বাবুয়ে ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। শক্তিশালী ইংল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে একটি ম্যাচ জিতে সিরিজ ড্র করার কৃতিত্ব রয়েছে মুশফিক-সাকিবদের। অস্ট্রেলিয়াকে হারাতে পারলে তা হবে ক্রিকেট ইতিহাসে বাংলাদেশের বড় সাফল্য। ক্রিকেটপ্রেমীরা অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছে সিরিজটির দিকে।

ক্রীড়ামোদীরা আরও একটি আসরের দিন গুনছে। ১১ অক্টোবর ঢাকায় এশিয়া কাপ হকির পর্দা উঠবে। এই টুর্নামেন্ট এশিয়ার দেশগুলোয় সীমাবদ্ধ থাকলেও এটি বিশ্ব হকিরও বড় আসর। কেননা ভারত, পাকিস্তান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো শক্তিশালী দেশগুলো এই আসরে লড়বে। টুর্নামেন্টের গ্রুপিংও ঠিক হয়ে গেছে। বাংলাদেশকে লড়তে হবে ভারত, পাকিস্তান ও জাপানের বিরুদ্ধে। শক্তির কথা বিবেচনা করলে বাংলাদেশের সেমিফাইনালে ওঠার সম্ভাবনা নেই। কোচ মাহবুব হারুনও বলেছেন তার টার্গেট ছয়ে থাকা। সত্যি কথা বলতে কি এশিয়া কাপে বাংলাদেশ যদি ছয়েও থাকতে পারে তা হবে বড় প্রাপ্তি।

৩২ বছর পর বাংলাদেশ আবার এশিয়া কাপের আয়োজক। ১৯৮৫ সালে তৎকালীন ঢাকা স্টেডিয়ামে এশিয়া কাপের আসর বসেছিল। ফুটবলে জনপ্রিয়তার ধারে-কাছে তখন কোনো খেলা ছিল না। অথচ এক এশিয়া কাপ আয়োজন করে হকির জনপ্রিয়তা তুঙ্গে উঠে। বিশ্বাস করানো যাবে না হকির কি জনপ্রিয়তা বেড়ে গিয়েছিল। শহর তো বটেই গ্রাম-গঞ্জেও হকি খেলার ধুম পড়ে যায়। গাছের ডাল দিয়ে স্টিক বানিয়ে টেনিস বল দিয়ে কিশোররা হকি খেলায় মেতে উঠে। আশা করা গিয়েছিল এই জনপ্রিয়তা দেশের হকিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। কিন্তু ঠিকমতো নজর না দেওয়ায় চুপসে যায়। এক্ষেত্রে তখনকার সরকারের নীরবতাকেও দায়ী করা যায়। উপচেপড়া দর্শকের সমাগম হতো বলে তাদের ভাবনায় শুধু ফুটবলই স্থান পেয়েছিল। উপযুক্ত প্রশিক্ষণ নতুন নতুন টুর্নামেন্ট দিলে হকি ঠিকই সম্মানজনক স্থানে চলে যেতে পারত। হকি ফেডারেশন বড় একটা সুযোগ হারিয়েছে। তখন জাপান, মালয়েশিয়া বা চীন ততটা শক্তিশালী দল ছিল না। তারা মনোযোগী হওয়ায় বাংলাদেশকে পেছনে ফেলে দিয়েছে।

৩২ বছর পর ঢাকায় এশিয়া কাপ ফিরছে নতুন রূপে। নিজস্ব স্টেডিয়াম টার্ফ ও ফ্লাডলাইটে টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হবে। টার্ফে অবশ্য অনেক আগেই ঢাকায় হকি গড়িয়েছে। কিন্তু ফ্লাডলাইট তা ছিল স্বপ্ন। ১৯৭৭ সাল থেকে ঢাকায় ফ্লাডলাইটে ফুটবল শুরু হয়েছে। ১৯৯৮ সালে মিনি বিশ্বকাপ দিয়ে ঢাকায় ফ্লাডলাইটে ক্রিকেট গড়ায়। কিন্তু হকি ছিল স্বপ্নে বন্দী। তা বাস্তবায়ন হচ্ছে এশিয়া কাপ দিয়ে। ঘরের মাঠে প্রথম বার ফ্লাড লাইটে হকি তাও আবার মেগা আসরের মাধ্যমে। এতে করে হকিকে ঘিরে নতুন উৎসাহ উদ্দীপনা সৃষ্টি হবে— তা নিয়ে সংশয় নেই।

কথা হচ্ছে এশিয়া কাপ ঘিরে ৮৫’র মতো হকি জেগে উঠবে কী? ৩২ বছরে আন্তর্জাতিক হকির চিত্র অনেক পাল্টে গেছে। বিশ্বকাপ বা অলিম্পিকে ভারত ও পাকিস্তানের সেই দাপট নেই। জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ডস অনেক এগিয়ে গেছে। বিশ্ব হকিকে মূলত তারাই শাসন করছে। শুধু কি তাই, যে আর্জেন্টিনাকে বিশ্ব ফুটবলের দেশ বলেই জানত তারা এখন হকিতে অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন। সুতরাং ৮৫ আর ২০১৭ ভারত-পাকিস্তানের চেহারা এক নয়। তাহলে কি এশিয়া কাপ সাড়া ফেলবে না? না, ভারত ও পাকিস্তানের কদরই আলাদা। এশিয়া কাপের উত্তেজনা থাকে অন্য রকম। অনেক দিন পর দুই দেশ বাংলাদেশে খেলতে আসছে। আসছে আরেক শক্তিশালী দেশ দক্ষিণ কোরিয়া। লড়াই যে বিশ্বমানের হবে এনিয়ে সন্দেহ নেই।

নতুন রূপে এশিয়া কাপ ঢাকায় ফিরছে। রাতের আলোয় উপভোগ্য লড়াই হবে। এতদিন পর ঢাকায় বিশ্ব কাঁপানো তারকাদের লড়াই হবে। এতে ফলাফল যাই হোক বাংলাদেশের জেগে ওঠার সুযোগ থাকবে। হয়তো ৮৫’র মতো উত্তেজনা নাও থাকতে পারে। কিন্তু ক্রিকেটে বন্দী থাকা ক্রীড়ামোদীরা এবার হকির মেগা আসর দেখবে। এশিয়া কাপ ঘিরে যতটুকু প্রাণের সঞ্চার হোক না কেন হকিকে জাগিয়ে তোলার এইতো সময়। এই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে সংগঠকদের। বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে নিজেদের এগিয়ে নেওয়ারও সুযোগ পাবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর