মঙ্গলবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

উপেক্ষিত বরিশাল স্টেডিয়াম

রাহাত খান, বরিশাল

উপেক্ষিত বরিশাল স্টেডিয়াম

আয়তনের দিক থেকে দেশের সব চেয়ে বড় স্টেডিয়াম। কীর্তনখোলা নদীর তীরবর্তী মনোরম পরিবেশ। পাঁচতলা প্যাভেলিয়ন, প্রেসবক্স, ড্রেসিং রুম, ভিআইপি গ্যালারি, ৩৫ হাজার দর্শক ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন সাধারণ গ্যালারি, ফ্লাডলাইট, গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য বিশাল আউটার স্টেডিয়ামসহ রয়েছে সব ধরনের সুযোগ সুবিধা— যাকে বলা যায় আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন। তবুও বরিশালের শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত জেলা স্টেডিয়ামে জাতীয় কিংবা আন্তর্জাতিক পর্যায়ের কোনো খেলা না হওয়ায় হতাশ বরিশাল ক্রীড়ামোদীরা। দেশের সব চেয়ে বড় স্টেডিয়াম এবং সব ধরনের সুযোগ সুবিধা থাকার পরও বরিশালে জাতীয় বা আন্তর্জাতিক খেলা না হওয়ার জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবকে দুষছেন জেলা দলের সাবেক ফুটবলার গাজী শফিউর রহমান দুলাল ও সাবেক ক্রিকেটার জহিরুল ইসলাম জাফরসহ অনেকে। তবে বরিশাল স্টেডিয়াম নিয়ে এবার তৎপর হচ্ছে স্থানীয় রাজনৈতিক মহল। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি বরিশাল নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানের বিশাল জনসভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অন্যান্য দাবির সঙ্গে বরিশাল স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক খেলা আয়োজনের জোরালো দাবি জানানোর কথা বলেছেন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সাবেক চিফ হুইপ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এমপি।

বরিশাল সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সাবেক সভাপতি প্রফেসর এম মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, নদীর তীরবর্তী মনোরম পরিবেশসমৃদ্ধ এতবড় স্টেডিয়াম দেশে দ্বিতীয়টি নেই। তারপরও এখানে ফুটবলে জাতীয় লিগ, বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) এবং আন্তর্জাতিক কোনো আসর না হওয়া দুঃখজনক। ক্রীড়াপ্রেমীদের দীর্ঘদিনের দাবি বরিশালে আন্তর্জাতিক খেলা আয়োজনের। সব শ্রেণি পেশার মানুষের পাশপাশি এবার স্থানীয় রাজনৈতিক মহল থেকে বরিশাল স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক খেলা আয়োজনের জোরালো দাবি উঠেছে। নির্বাচনের বছর হওয়ায় এবার প্রধানমন্ত্রী জনদাবির প্রতি সম্মান দেখিয়ে বরিশাল স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক খেলা আয়োজনের সুস্পষ্ট ঘোষণা দেবেন বলে প্রত্যশা করেন সাবেক যুগ্মসচিব প্রফেসর এম মোয়াজ্জেম হোসেন। নগরীর বান্দ রোড লাগোয়া কীর্তনখোলা নদীর তীরে ২৯.২৫ একর জমির উপর বরিশাল জেলা স্টেডিয়াম প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৬ সালে। ২০০৬ সালে প্রায় ২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে আধুনিকায়ন করা হয় বরিশাল স্টেডিয়ামের। আধুনিক এই স্টেডিয়ামে রয়েছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজনের সব সুযোগ-সুবিধা। কিন্তু তারপরও বরিশালে জাতীয় কিংবা আন্তর্জাতিক খেলা থেকে বঞ্চিত এ অঞ্চলের মানুষ। এমনকি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগের (বিপিএল) বিগত আসরগুলোর একটি ম্যাচও অনুষ্ঠিত হয়নি বরিশালে। জাতীয় লিগে বরিশালের লোকাল ভেন্যু হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা এবং বগুড়া স্টেডিয়াম।  ঘরের মাঠে এ অঞ্চলের প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের খেলা উপভোগ করতে না পাড়ায় ক্ষুব্ধ বরিশাল জেলা স্টেডিয়ামের ক্রিকেট কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ গাঙ্গুলী। এই পরিস্থিতির জন্য জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ, বিসিবি, বাফুফে ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সমন্বয়হীনতাসহ স্থানীয় সংগঠকদের অদূরদর্শিতা ও অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করছেন তারা। যদিও বরিশাল স্টেডিয়ামে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজনের পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছেন বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক আলমগীর হোসেন খান আলো। দক্ষিণের কোটি মানুষের প্রত্যাশা পূরণে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী বরিশাল স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক খেলা আয়োজনের ঘোষণা দেবেন বলে আশা করছেন ক্রীড়া সংগঠক আলো।

জাতীয় ক্রীড়া সংস্থা অনুমোদিত ক্রিকেট, ফুটবল, ভলিবল, হ্যান্ডবল, কাবাডি, ব্যাডমিন্টন, টেবিল টেনিস, লং টেনিস, কারাতে, উশু, সাইক্লিং, সাঁতার, বক্সিংসহ অন্তত ২০টি ইভেন্ট চালু থাকার কথা থাকলেও বরিশালে ক্রিকেট, ফুটবলসহ মাত্র কয়েকটি ইভেন্ট চালু রয়েছে নামমাত্র। অন্যান্য ইভেন্টগুলোর হদিস নেই এখানে।

এছাড়া প্রতি বছর ক্রিকেট ও ফুটবল লিগের মাধ্যমে তৃণমূল থেকে প্রতিভাবান খেলোয়াড় বাছাই করার কথা থাকলেও নেই নিয়ম, শুধু কাগুজে-কলমে সীমাবদ্ধ বলে অভিযোগ ক্রীড়া সংগঠকদের।

সর্বশেষ খবর