শুক্রবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

ফুটবলে গুরুত্ব বাড়ছে দেশি কোচের

ক্রীড়া প্রতিবেদক

ফুটবলে গুরুত্ব বাড়ছে দেশি কোচের

খেলোয়াড়ি জীবনে ইতি টানার পর কোচের দায়িত্ব নেন সাহেব আলী, আবদুর রহিম, মো. আশরাফ, গফুর বেলুচ, গোলাম সারোয়ার টিপু, আলী ইমাম, কায়কোবাদ, ওয়াজেদ গাজীরা। এরা বিভিন্ন ক্লাব বা জাতীয় দলের প্রশিক্ষক ছিলেন। ফুটবলার হিসেবে এরা যেমন মাঠ কাঁপিয়েছেন। তেমনিভাবে নজর কেড়েছিলেন কোচিংয়ে। ১৯৮৪ সালে ফুটবলার কাজী সালাউদ্দিন অবসর নেন। পরের মৌসুম ১৯৮৫ সালে তিনি আবাহনীর প্রশিক্ষক হয়ে যান। জাতীয় দলেরও কোচ ছিলেন। ব্রাদার্স ইউনিয়ন ও মুক্তিযোদ্ধাতেও প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন সালাউদ্দিন। মাঠ কাঁপানো ফুটবলার অমলেশ সেনতো ঘরোয়া ফুটবলে ছিলেন অন্যতম সেরা কোচ। তবু তিনি ছিলেন উপেক্ষিত। জাতীয় দলের প্রশিক্ষণের দায়িত্ব পাননি কোন দিন।

শামসুল আলম মঞ্জু, গোবিন্দ, মালাও কোচ হন। আশি দশকের পর কোচ হন হাসানুজ্জামান বাবলু, শফিকুল ইসলাম মানিক, সাইফুল বারী টিটু। খ্যাতিও পান। আবু ইউসুফও মোহামেডান, মুক্তিযোদ্ধা ও জাতীয় দলের প্রশিক্ষণের দায়িত্ব পালন করেন। মারুফুল হক মারুফ পরিচিত ফুটবলার না হলেও কোচ হিসেবে ভালোই পরিচিতি লাভ করেছেন। মোহামেডান, শেখ রাসেল, শেখ জামালের মতো বড় দল ছাড়াও তিনি জাতীয় দলের প্রশিক্ষক হন।

মানিক, টিটু ও মারুফ এখনো কোচের দায়িত্ব পালন করছেন। মাহবুব রহমান রক্সি, গোলাম রব্বানী জিলানী বা ছোটনও কোচ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। তারকা ফুটবলার জসিমউদ্দিন জোসি ও সেন্টু কোচ হয়েছেন। তবে কামাল বাবুর নামটা আবার আলাদাভাবেই উচ্চারিত হবে। শেখ রাসেল ছাড়া কখনো তিনি বড় দলের কোচ হননি। আরামবাগ, ফরাশগঞ্জ ও রহমতগঞ্জেই তাকে দেখা গেছে। এখনো দায়িত্ব পালন করছেন। ফুটবলার হিসেবে একেবারে নাম-ডাকও ছিল না। তারপরও কামাল বাবুর প্রশিক্ষণে নতুন নতুন প্রতিভার সন্ধান মিলছে। ফুটবলে দেশি কোচের কদর বেড়েই চলেছে। এত কোচ তবু অবহেলিত দেশি কোচরা। আন্তর্জাতিক ফুটবলে সাফল্য নেই। তবু অঢেল অর্থ খরচ করে বার বার বিদেশি কোচ নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। বাফুফে সভাপতি একবার দেশি কোচদের নিয়ে বিরূপ মন্তব্যও করেছিলেন। এতে করে কোচ হওয়ার ব্যাপারে অনেকে আগ্রহও হারিয়ে ফেলেছিলেন।

সু-খবর হচ্ছে বড় বড় ক্লাবগুলো ধীরে ধীরে দেশি কোচের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। লিগের মাঝখানে আফুসি চলে যাওয়ার পর শেখ জামাল নিয়োগ দেয় রক্সিকে। তেমনিভাবে দ্রাগোর জায়গায় ঢাকা আবাহনীর ভারপ্রাপ্ত কোচ হন আতিক। এএফসি কাপেও টিটু এই দলের দায়িত্ব পালন করবেন। এবার স্বাধীনতা কাপ ফাইনালে চট্টগ্রাম আবাহনী-আরামবাগ মুখোমুখি হয়। দুই দলেরই দেশি কোচ। আরামবাগে মারুফ ও চট্টগ্রাম আবাহনীর মিন্টু।

অনেক দিন পর ঘরোয়া ফুটবলে দুই দলে দেশি কোচকে দেখা গেল। মারুফ না হয় পরিচিত মুখ। কিন্তু জুলফিকার মাহমুদ মিন্টু ততটা পরচিত নন। বন্দর নগরীর দলটি এখন আর অপরিচিত নয়। ঘরোয়া ফুটবলে পরাশক্তিই বলা যায়। এমন এক দলে পরিচিত কোচ থাকবেন সেটাই স্বাভাবিক। মিন্টু তো আর পরিচিত নন। তাও হেড কোচ ছিলেন না। লিগের শেষের দিকে বাজে পারফরম্যান্স প্রদর্শন করায় মিন্টুর হাতে দায়িত্ব তুলে দেয় চট্টগ্রাম আবাহনীর ম্যানেজমেন্ট। নব্বই দশকে প্রথম দিকে মিন্টু সাধারণ বীমা থেকে আবাহনীতে যোগ দেন। পরে খেলেন শেখ রাসেলে। মারুফের ডেপুটি হিসেবেও কাজ করেন মিন্টু। স্বাধীনতা কাপ ফাইনালে একে অপরের প্রতিপক্ষ ছিলেন। বিদেশি কোচ ছাড়া ফাইনালে দেশের ফুটবলে এটাকে সুখবরই বলা যায়।

মারুফের প্রশিক্ষণে তারুণ্য নির্ভর আরামবাগ শিরোপা জিতে ইতিহাস গড়েছে। মিন্টু ট্রপি না জিতলেও রানার্স আপ হওয়াটা সামনে তাকে অনুপ্রেরণা যোগাবে। সন্ধান মিলবে নতুন কোচের।

সর্বশেষ খবর