বৃহস্পতিবার, ৭ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

পেশাদার লিগ নিয়ে হচ্ছেটা কী

ক্রীড়া প্রতিবেদক

পেশাদার লিগ নিয়ে হচ্ছেটা কী

লিগ নিয়ে যখন প্রসঙ্গ উঠে বাফুফে থেকে বলা হয় এখানে ক্লাবই সব। তাদের নিয়েই তো ফুটবল। সুতরাং তাদের স্বার্থটাই গুরুত্ব পাবে। তাদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। বাস্তবে কি তাই হচ্ছে? যে ক্লাবগুলো ফুটবলকে বাঁচিয়ে রেখেছে তারা কতটুকু গুরুত্ব পাচ্ছে? দেখা যাচ্ছে ক্লাবগুলো যা চাচ্ছে তার উল্টোটা করছে বাফুফে। ২০০৭-০৮ মৌসুমে প্রথমবার মাঠে গড়ানোর পর বাংলাদেশ পেশাদার লিগ নিয়মিত হচ্ছে। কোনো সময়েও আসর সেশন জটে পড়েনি। অন্য কাজের সমালোচনা হলেও এই একটা দিকে ফেডারেশন ধন্যবাদ পেতেই পারে।

এবারের লিগও মাঠে গড়িয়েছিল। কিন্তু যে জটিলতা দেখা দিয়েছে তাতে এ মৌসুুমে লিগ আর হবে কি না তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছে। করোনাভাইরাসে পুরো বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনই অচল হয়ে পড়েছে। মার্চ থেকেই অনির্দিষ্টকালের জন্য পেশাদার লিগ স্থগিত রেখেছে। প্রায় দুই মাস ধরে খেলা হচ্ছে না। একেক দল ছয় কিংবা পাঁচ ম্যাচ খেলার পর লিগ বন্ধ হয়ে গেছে। অথচ লোকসানের পাহাড়ে ক্লাবগুলো ডুবছে। খেলা নেই তবুও বিদেশি ফুটবলারদের বেতন দেওয়া হচ্ছে। এমনকি স্থানীয়রা অধিকাংশ পারিশ্রমিকও পেয়ে গেছেন।

বাফুফে ক্লাবগুলোর বকেয়াও শোধ করবে না, অংশগ্রহণ মানি দেওয়ার নাম-গন্ধ নেই। অথচ অপেক্ষায় থাকতে হবে লিগের জন্য। বাফুফে তাহলে কি চায় না ক্লাবগুলো টিকে থাকুক। আমাদের ক্লাবের নির্বাহী কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বকেয়ার জন্য বাফুফেকে উকিল নোটিস পাঠানোর

এক কথায় লোকসান গুনতে গুনতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে ক্লাবগুলোর। এমন সংকটাপন্ন অবস্থায় কোনো সহযোগিতা করাতো দূরের কথা অংশগ্রহণ মানির যে বকেয়া আছে তাও বুঝিয়ে দিচ্ছে না বাফুফে। এ অবস্থায় ক্লাবগুলো করবে কি? ২৫ এপ্রিল লিগের ভাগ্য নিয়ে বাফুফে সিনিয়র সহ-সভাপতি ও লিগ কমিটির চেয়ারম্যান আবদুস সালাম মুর্শেদী এমপি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ক্লাবগুলো প্রতিনিধিদের বক্তব্য শোনেন। এখানে সব ক্লাবই এমন অনিশ্চয়তা এবং লোকসানের কারণে লিগ বাতিলের ব্যাপারে মত দেন।

সেই বৈঠকের ভিত্তি ধরে বাফুফের নির্বাহী কমিটির সভা হওয়ার কথা আগামী রবি বা সোমবার। কথা ছিল ক্লাবগুলো যে লিগ বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটাই আলোচনা হবে। কিন্তু স্বয়ং বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন বলেছেন লিগ বাতিল করাটা কোনো সমাধান নয়। সালাম মুর্শেদীও অনেকটা একই সুরে কথা বলছেন। তাহলে ভিডিও কনফারেন্সে ক্লাবগুলো যে মতামত দিয়েছে তার কোনো গুরুত্ব থাকবে না। সালাউদ্দিন অপেক্ষার কথা বলেছেন। এই অপেক্ষা কতদিনের। করোনাভাইরাস কবে কমবে বা শেষ হবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। অপেক্ষা করবে আর ক্লাবগুলো লোকসান গুনবে এটাই কি সমাধান।

প্রশ্ন উঠেছে ভিডিও কনফারেন্সে ক্লাব প্রতিনিধিরা লিগ বাতিলের যে কথা বলেছেন তা যদি বাফুফে নির্বাহী কমিটির সভায় গ্রহণযোগ্য না হয় তাহলে ক্লাবগুলো মেনে নেবে কি না? এ ব্যাপারে কথা হয় ব্রাদার্স ইউনিয়নের ডাইরেক্টর ইনচার্জ মহিউদ্দিন আহমেদ মহির সঙ্গে তিনি আবার বাফুফেরও সহ-সভাপতি। তিনি বলেন, ‘বাফুফে নির্বাহী কমিটির সভা কবে তা আমি জানি না। বৈঠক হলে অবশ্যই আমি থাকব। সেখানে আমার স্পষ্ট বক্তব্য থাকবে ক্লাবগুলো ভিডিও কনফারেন্সে তাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিয়েছে। এখানে আবার নতুন করে বলার কি আছে।’

মহির কাছে প্রশ্ন ছিল তাহলে কি ব্রাদার্স লিগ খেলবে না। তিনি বলেন, ‘আমরা কেন সব ক্লাবেরই বক্তব্য এক। খেলব কিভাবে বলেন, করোনাভাইরাসের চরিত্রের কোনো ঠিক নেই। এ অবস্থায় কত আর অপেক্ষা করব। বাফুফে ক্লাবগুলোর বকেয়াও শোধ করবে না, অংশগ্রহণ মানি দেওয়ার নাম-গন্ধ নেই। অথচ অপেক্ষায় থাকতে হবে লিগের জন্য। বাফুফে তাহলে কি চায় না ক্লাবগুলো টিকে থাকুক। আমাদের ক্লাবের নির্বাহী কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বকেয়ার জন্য বাফুফেকে উকিল নোটিস পাঠানোর। এ ছাড়া পথও নেই আমাদের। ডোনারদের কাছ থেকে সামনে সহযোগিতা পাব তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। আমরা তো আর ইচ্ছে করে লিগ খেলতে চাচ্ছি না। পরিস্থিতির শিকার। তা ছাড়া এক মৌসুম লিগ না হলে ফুটবলের কি এমন ক্ষতি হবে বুঝতে পারছি না। জানি না বাফুফে বা লিগ কমিটির উদ্দেশ্যটা কি?’ অন্য দিকে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের পরিচালক (ক্রীড়া) সালেহ জামান সেলিম বলেন, ‘ক্লাবগুলো সিদ্ধান্ত একটাই। এখন হার্ডলাইনে যাব কি যাব না তা সময় বলে দিবে।’ শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান আশরাফ উদ্দিন আহমেদ চুন্নু বলেন, ‘দেখি না বাফুফে নির্বাহী কমিটি কি সিদ্ধান্ত নেয়। তা দেখেই ক্লাবগুলো পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।’

সর্বশেষ খবর