সোমবার, ১৩ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

জন্ম থেকে জ্বলছে ফুটবল

ক্রীড়া প্রতিবেদক

জন্ম থেকে জ্বলছে ফুটবল

‘সভাপতি নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই। ফুটবলের মান আগেও আহামরি ছিল না। কিন্তু যেখানে বাংলাদেশ সাফ ফুটবলে সেমিফাইনালই খেলতে পারছে না তখন কেউ বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন দেখলে মাথা ঠিক রাখি কীভাবে। আমাদের যতটুকু সামর্থ্য তা নিয়েই তো ভাবতে হবে।’

 

বাফুফের লম্বা কমিটি। অথচ সব সমালোচনা সভাপতিকে ঘিরে। আসলে অভিভাবক বলে সব দোষ পদটির ওপরই আসে। একসময় সমালোচনা হতো সাধারণ সম্পাদক নিয়ে। এখন ফিফার নির্দেশে বেতনভুক সাধারণ সম্পাদক নিয়োগ দেওয়া হয়। যেহেতু নির্বাচিত নয়, তাই পদটি নিয়ে আগের মতো সমালোচনার ঝড় ওঠে না। আগে যখন সরকার মনোনীত সভাপতি ছিল তখন বোঝাই যেত না ফুটবলে সভাপতি বলে কোনো পদ ছিল। ২০০৮ সাল থেকেই বাফুফের দৃশ্য পাল্টে গেছে। কাজী সালাউদ্দিন নির্বাচিত সভাপতি হওয়ার পরই সব দোষ তাঁর ঘাড়ে এসে পড়ছে।

এখন ফুটবল শেষ হয়ে গেল বলে অনেকেই আক্ষেপ করছেন। কিন্তু কেউ কি বলতে পারবেন, কোনো সভাপতি দায়িত্বে থাকা অবস্থায় ফুটবলে উন্নয়ন ঘটেছিল? লোকাল আসরে জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে। কিন্তু আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মান কখনো আহামরি ছিল না। সত্তর বা আশির দশকে মারদেকা কাপ, থাইল্যান্ডে কিংস কাপ ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কাপে জাতীয় দল গোলের বন্যায় ভেসে যেত। সালাউদ্দিনকে ঘিরে সমালোচনার মূল কারণ, ক্রীড়াপ্রেমীরা আশা করেছিলেন তাঁর মতো সুপারস্টার যখন দায়িত্ব নিয়েছেন ফুটবলে পরিবর্তন আসবেই। কিন্তু তা হয়নি, বরং ধাপে ধাপে নিচের দিকে নামছে। সালাউদ্দিন যদি এক মেয়াদে সভাপতির দায়িত্ব পালন করে সরে যেতেন তাহলে সমালোচনা থেকে বেঁচে যেতেন। তিন মেয়াদে সভাপতির দায়িত্বে থেকে ফুটবলে যিনি পরিবর্তন আনতে পারেননি, সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে সেমিফাইনাল খেলাটা যেখানে স্বপ্নে পরিণত হয়েছে, ব্যর্থতা ছাড়া যিনি কিছুই দিতে পারেননি, অথচ এ লোকই কিনা পুনরায় সভাপতি হতে চাচ্ছেন- তখন তো সমালোচনা হবেই। এখন মানের পাশাপাশি জনপ্রিয়তাও নেই। তবে সালাউদ্দিনই ফুটবল ধ্বংস করে দিয়েছেন- এ কথা হাস্যকর। গোলাম সারোয়ার টিপু বলেন, ‘সভাপতি নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই। ফুটবলের মান আগেও আহামরি ছিল না। কিন্তু যেখানে বাংলাদেশ সাফ ফুটবলে সেমিফাইনালই খেলতে পারছে না তখন কেউ বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন দেখলে মাথা ঠিক রাখি কীভাবে। আমাদের যতটুকু সামর্থ্য তা নিয়েই তো ভাবতে হবে।’

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যর্থতা যদি বলা হয় তাহলে জন্ম থেকেই বাংলাদেশের ফুটবল জ্বলছে। ১৯৭৩ থেকে ২০২০ পর্যন্ত ফুটবলে বাংলাদেশ এমন কোনো বড় ট্রফি কি জিতেছে যা নিয়ে অহংকার করা যায়? মিয়ানমারে ‘চ্যালেঞ্জ কাপ’ ছাড়া সবই তো সাফকেন্দ্রিক। এখানে তো সালাউদ্দিন বলতে পারেন, ‘আমি দায়িত্বে থাকা অবস্থায় এসএ গেমসে বাংলাদেশ সোনা জিতেছে।’

সালাউদ্দিনের শুরুটা কিন্তু দারুণ হয়েছিল। ২০০৮ সালে সভাপতি হন। ২০০৯ সালে কোটি টাকার সুপার কাপ আয়োজন করে চমক দেখান। বাংলাদেশের ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন দলের প্রাইজমানি কোটি টাকা হবে, তা স্বপ্নেও ভাবা যায়নি। যেখানে গ্যালারি শূন্য থাকত সেখানে এ টুর্নামেন্টে মোহামেডান-আবাহনীর ফাইনাল ম্যাচের আশির দশকের মতো গ্যালারি ভরে যায়। চমক লাগানো টুর্নামেন্ট করে ব্যাপকভাবেই প্রশংসিত হয়েছিলেন সভাপতি সালাউদ্দিন। সে টুর্নামেন্টও তিনি মাঠে রাখতে পারেননি। অথচ প্রথম টুর্নামেন্টের পর সংবাদ সম্মেলনে সালাউদ্দিন ঘোষণা দিয়েছিলেন সুপার কাপ প্রতি বছর হবে। সামনে প্রাইজমানি বাড়বে এবং বিদেশি দলকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। এমন প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরও তিনবার আয়োজন করেই সুপার কাপের বিলুপ্তি!

সুপার কাপ নিয়মিত আয়োজন করতে পারলে সালাউদ্দিনের অবস্থান থাকত অন্য রকম। তা ছাড়া বাংলাদেশে যা সম্ভব নয়, তারই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। কথায় কথায় বলতেন, ‘বাংলাদেশের ফুটবলকে আমি অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে চাই। ইউরোপে যেভাবে ফুটবল পরিচালনা করা হয় আমি সে পথ অনুসরণ করব। এখানে চেলসি আসবে, ম্যানইউ আসবে আর কত কি?’ বাফুফের অর্থ লোপাট নিয়েও কথা উঠেছে। নিশ্চয় কোনো গলদ আছে বলেই অভিযোগ উঠেছে।

অর্থ নিয়ে অভিযোগ আগেও উঠেছিল। ফিফার কাছ থেকে কী পরিমাণে অনুদান পেয়েছে তা জানানো হতো না। এই টাকা কোথায় এবং কীভাবে খরচ হচ্ছে এই নিয়ে বাফুফে কর্মকর্তারা বরাবরই নীরব। সত্তর ও আশির দশকে লিগে উপচে পড়া দর্শক হলেও

মৌসুম শেষে টিকিট বিক্রির যে হিসাব দেখানো হতো, তা নিয়ে ক্রীড়াঙ্গনে সমালোচনার ঝড় বয়ে যেত।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর