সোমবার, ২ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

বোল্ট শোতে জ্যাকবস ম্যাজিক

রাশেদুর রহমান

বোল্ট শোতে জ্যাকবস ম্যাজিক

সিগন্যাল পেতেই শুরু হলো দৌড়। দূরত্ব বেশি নয়। মাত্র ১০০ মিটার। সময়ের হিসেবে ১০ সেকেন্ডেরও কম। এ দূরত্ব পাড়ি দিয়ে বিশ্বজোড়া খ্যাতি অর্জনের সুযোগ পেয়েছিলেন ৮ জন। সবাইকে পেছনে ফেলে ইতালিয়ান অ্যাথলেট মার্সেল জ্যাকবস সোনার পদক জয় করলেন। প্রথম ইতালিয়ান হিসেবে ইতিহাসও গড়লেন। এর আগে ছেলে কিংবা মেয়ে কোনো স্প্রিন্টেই সোনা জিততে পারেনি ইতালি। ১৯৯২ সালে গ্রেট ব্রিটেনের লিনফোর্ড ক্রিস্টির পর প্রথমবারের মতো কোনো ইউরোপিয়ান অলিম্পিক স্প্রিন্ট জয় করল।

দূরত্ব আর সময়ের হিসেবে ১০০ মিটার স্প্রিন্ট খুব বড় ইভেন্ট নয়। কিন্তু গতির এ লড়াই সারা বিশ্বের ক্রীড়াপ্রেমীদের চোখ আটকে রাখে টিভি পর্দায়। গতকাল সন্ধ্যায় টোকিও অলিম্পিকে ছেলেদের ১০০ মিটার স্প্রিন্ট দেখতেও দল বেঁধে অপেক্ষায় ছিলেন তারা। জ্যামাইকান গতি তারকা উসাইন বোল্টের উত্তরসূরি খুঁজছিলেন সবাই। কিন্তু সেমিফাইনালেই দুই জ্যামাইকানের বিদায় হতাশ করে। ‘বোল্ট শো’র ফাইনালে ছিলেন না কোনো জ্যামাইকান! অথচ গত তিনটি অলিম্পিকে ছেলে ও মেয়েদের স্প্রিন্টে ছিল তাদেরই আধিপত্য।

‘সিন্ধু সেঁচে মুক্তো আনা’র মতোই বিশ্ব সংসার তন্ন তন্ন করে খুঁজে ৮ জন দৌড়বিদকে ফাইনালে এনেছিল অলিম্পিক কর্তৃপক্ষ। হিট আর সেমিফাইনাল লড়াইয়ের পর টিকে ছিলেন এরা। এ ৮ জনের মধ্যেও একজন ডিসকোয়ালিফাইড হন সিগন্যালের আগেই দৌড় শুরু করে। নাইজেরিয়ার এনোক আদেগোকে দৌড় শেষ করতে পারেননি পায়ে টান পড়ায়। তবে বাকি ছয় জনের মধ্যেও লড়াইটা বেশ জমে উঠেছিল। সামান্য ব্যবধানে ঠিক হয় তিনটি পদক। ইতালির মার্সেল জ্যাকবস ৯.৮০ সেকেন্ড টাইমিং করে জয় করেন সোনা। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্রেড কার্লি ৯.৮৪ সেকেন্ড টাইমিং করে রুপা ও কানাডার আন্দ্রে ডি গ্রেস ৯.৮৯ সেকেন্ড টাইমিং করে ব্রোঞ্জ পদক জয় করেন।

ইতালির উপর সাফল্যের বৃষ্টি বর্ষণ হচ্ছে যেন! কিছুদিন আগেই তারা জয় করেছে ইউরো কাপ। করোনাভাইরাসের নিষ্ঠুরতার শিকার ইতালিয়ানরা দারুণ আনন্দে মেতে উঠেছিল সেই বিজয়ে। অলিম্পিকে ১০০ মিটার স্প্রিন্ট জয় করাও কম কথা নয়। আরও একটা উপলক্ষ পেল ইতালিয়ানরা। আবারও তারা রাস্তায় নেমে আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠতে পারে।

স্প্রিন্টে উসাইন বোল্ট যুগের সমাপ্তি টানলেন মার্সেল জ্যাকবস! তবে টানা তিন অলিম্পিকে সোনার পদক জেতা জ্যাকবসের পক্ষে সম্ভব কি না তা সময়েই জানা যাবে। ২৬ বছরের এই ইতালিয়ানের জন্য এমন কিছু করা কঠিন বটে!

 

কেউ ছিল না জ্যামাইকার

অলিম্পিকে ১০০ মিটার স্প্রিন্ট মানেই জ্যামাইকার আধিপত্য। অন্তত এতদিন ক্রীড়াপ্রেমীরা তাই জানতেন। কিন্তু সব বদলে গেছে। অ্যাথলেটিকস ট্র্যাক থেকে উসাইন বোল্টের বিদায় জ্যামাইকার আধিপত্য শেষ করে দিয়েছে। ইয়োহান ব্ল্যাকদের নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিল বোল্টের দেশ। তবে তা আর হলো না। টোকিও অলিম্পিকে ১০০ মিটার স্প্রিন্টের সেমিফাইনাল থেকেই বিদায় নিয়েছেন দুই জ্যামাইকান ইয়োহান ব্ল্যাক ও অবলিকে সেভিল। ২০০৮, ২০১২ ও ২০১৬ সালের অলিম্পিকে ছেলে ও মেয়েদের ১০০ ও ২০০ মিটার স্প্রিন্টে জ্যামাইকানদের আধিপত্য দেখেছিল বিশ্ব। ২০০৮ সালে উসাইন বোল্ট জিতেছেন সোনা। ২০১২ সালে বোল্ট সোনা ও ইয়োহান ব্ল্যাক রুপার পদক উপহার দিয়েছেন জ্যামাইকাকে। ২০১৬ সালেও সোনার পদক জিতেছেন বোল্ট। অলিম্পিক রেকর্ড গড়েছেন তিনি। গড়েছেন বিশ্ব রেকর্ডও। কিন্তু যোগ্য উত্তরসূরি রেখে যেতে পারেননি সর্বকালের অন্যতম সেরা এ অ্যাথলেট। ইয়োহান ব্ল্যাকরা বোল্টের দেখানো পথে হাঁটতে পারেননি।

সর্বশেষ খবর