সোমবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

ফুটবল লিগের ৫০ বছর

১৯৪৮ সালে ঢাকা ফুটবল লিগ শুরু হয়। অর্থাৎ ঢাকা লিগের বয়স দাঁড়িয়েছে ৭৪ বছর। তবে স্বাধীনতার পর হিসাব করলে দেশের জনপ্রিয় এ লিগ ৫০ বছরে পা দিয়েছে। প্রথমে ঢাকা প্রথম বিভাগ, সিনিয়র ডিভিশন, প্রিমিয়ার ও সর্বশেষ নামকরণ করা হয়েছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ। যা বর্তমানে পেশাদার লিগ নামেই পরিচিত। ৫০ বছর (১৯৭২-২২) পূর্তি বা সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবটা স্মরণীয় হওয়া উচিত ছিল। অথচ এবার পেশাদার লিগ শুরুতেই নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছে বাফুফে। গত ৫০ বছরে লিগের কিছু স্মরণীয় ঘটনা নিয়ে এ প্রতিবেদন - মনোয়ার হক

 

প্রথম ম্যাচ

১৯৭২ সালেই বাংলাদেশে প্রথম বিভাগ ফুটবল লিগের অভিষেক হয়। প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হয় চ্যাম্পিয়ন বিআইডিসি ও নবাগত আবাহনী ক্রীড়া চক্র। ১৯৭০ সালে লিগে চ্যাম্পিয়ন হয় ইপি আইডিসি। স্বাধীনতার পর এ অফিস দলের নতুন নামকরণ হয় বিআরডিসি। পরবর্তীতে বিজেআইসি ও বিজেএমসি নামকরণ হয়। ১৯৭২ সালে অভিষেক ম্যাচে বিআরডিসির অধিনায়ক ছিলেন মো. সলিমুল্লাহ ও নবাগত আবাহনীকে নেতৃত্ব দেন আবদুস সাদেক। তৎকালীন ঢাকা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচটি গোলশূন্য ড্র হয়। লিগ মাঠে গড়ালেও সেবার হট্টগোলে পরিত্যক্ত হয়। সাদেক শুধু অধিনায়ক নন। ১৯৭৭ সালে আবাহনীর কোচের দায়িত্ব পালন করেন। জিতে নেয় অপরাজিত শিরোপা।

 

চ্যাম্পিয়ন বিআইডিসি

আবাহনী ও মোহামেডানের সর্বোচ্চ শিরোপা জেতার রেকর্ড রয়েছে। তবে স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে লিগে প্রথম চ্যাম্পিয়ন হয় বিআইডিসি। সলিমুল্লার নেতৃত্বে এই দলে খেলেন ছোট নাজির, গোবিন্দ, গোলরক্ষক হাকিম, ফারুক, বড় নাজির, মালা, এনায়েত, গাজীদের মতো তারকা ফুটবলাররা। মোহামেডান, ওয়ান্ডারার্স ও আবাহনীও সেরা দল গড়েছিল। সাহেব আলীর দক্ষ প্রশিক্ষণে সেবার বিআইডিসির পারফরম্যান্স ছিল নজর কাড়া। মূলত শিরোপা লড়াইয়ে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছিল ওয়ান্ডারার্সের সঙ্গে। গোলরক্ষক শান্টুর নেতৃত্বে ওয়ান্ডারার্স প্রথম পর্বে শীর্ষে ছিল। দ্বিতীয়পর্বে দাপট দেখিয়ে বিআইডিসিই শিরোপা জেতে নেয়।

 

আবাহনীর হ্যাটট্রিক

অভিষেকের পর আবাহনী প্রথম শিরোপা জেতে ১৯৭৪ সালে। অধিনায়ক ছিলেন গোলাম সারোয়ার টিপু। ১৯৭৭ সালে আবার আশরাফের নেতৃত্বে আবাহনীই লিগ ইতিহাসে প্রথম অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়। তবে সবকিছু ছাপিয়ে যায় টানা তিনবার শিরোপা জয়।

১৯৮৩ আশীষ ভদ্র, ১৯৮৪ দেওয়ান শফিউল আরেফিন টুটুল ও ১৯৮৫ সালে ইমতিয়াজ সুলতান জনির নেতৃত্বে আবাহনী হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন হয়। স্বাধীনতার পর এটিই প্রথম হ্যাটট্রিক শিরোপা হলেও তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান আমলে প্রথম টানা তিনবার অর্থাৎ হ্যাটট্রিক লিগ জেতে ওয়ান্ডারার্স। পেশাদার লিগেও আবাহনী একমাত্র দল হিসেবে হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। সর্বোচ্চ লিগ জেতার রেকর্ড তাদেরই।

 

মোহামেডানের বিরল রেকর্ড

ঐতিহ্যবাহী ঢাকা মোহামেডানই প্রথম দল যারা টানা দুবার লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়। তবে এ বড় কোনো অর্জন নয়। এ ক্লাবের বিরল এক রেকর্ড রয়েছে। ঢাকা আবাহনী স্বাধীনতার পর প্রথম হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন হয়। তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী  মোহামেডান তা স্পর্শ করে বিরল রেকর্ড গড়ে। যা এখনো কোনো ক্লাবের পক্ষে ভাঙা সম্ভব হয়নি। ৫০ বছর ইতিহাসে তারাই এক মাত্র ক্লাব অপরাজিত হ্যাটট্রিক শিরোপা জিতেছে। ১৯৮৬ সালে বাদল রায়, ১৯৮৭ সালে রণজিত দাসের নেতৃত্বে চ্যাম্পিয়ন।

১৯৮৮- ১৯৮৯ মৌসুমে ইলিয়াস হোসেনকে অধিনায়ক করা হয়। তবে অধিকাংশ ম্যাচে সেরা একাদশে তাঁর জায়গা হয়নি। ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক কায়সার হামিদ দলকে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন করান।

 

বসুন্ধরা কিংসের ইতিহাস

প্রথম, সিনিয়র, প্রিমিয়ার বা বর্তমান পেশাদার লিগে অনেক ক্লাবেরই অভিষেক হয়। শুরুতে কেউ শিরোপা নিশানা উড়াতে পারেনি। ব্যতিক্রম শুধু বসুন্ধরা কিংসই। ২০১৮-১৯ মৌসুমে পেশাদার লিগে অভিষেক হয় তাদের। মৌসুমের প্রথম ট্রফি ফেডারেশন কাপ না পেলেও লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়ে বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলে ইতিহাস গড়ে কিংস। পেশাদার লিগে তারাই প্রথম বিশ্বকাপে খেলা ফুটবলারকে মাঠে নামান। রাশিয়া বিশ্বকাপ খেলা কোস্টারিকার ড্যানিয়েল কলিনড্রেসকে এনে কিংস ঘুমন্ত লিগ জাগিয়ে তোলে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর