সোমবার, ৩০ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

রিয়ালই ইউরোপ সেরা

ক্রীড়া প্রতিবেদক

রিয়ালই ইউরোপ সেরা

স্প্যানিশ টেনিস তারকা রাফায়েল নাদাল ফ্রেঞ্চ ওপেনের প্রস্তুতি সংক্ষেপ করে ছুট দিলেন প্যারিসে অবস্থিত স্ট্যাড দ্য ফ্রান্সের উদ্দেশ্যে। রিয়াল মাদ্রিদের পরম ভক্ত উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালটা মাঠে বসেই দেখলেন। প্রিয় দলের জয়ে তৃপ্তও হলেন তিনি। রিয়াল মাদ্রিদ ও রাফায়েল নাদালের প্যারিসে আসার উদ্দেশ্য প্রায় একই। রিয়ালের লক্ষ্য ছিল উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ১৪তম ট্রফি জয়। সে লক্ষ্য তারা পূরণ করেছে লিভারপুলকে ফাইনালে ১-০ গোলে হারিয়ে। নাদালের লক্ষ্য ফ্রেঞ্চ ওপেনে ১৪তম ট্রফি জেতা। এটা এখনো বাকি।

উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে অপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদ। বর্তমান ক্লাব ফুটবলের অন্যতম সেরা দল লিভারপুলকে হারিয়ে লস ব্ল্যাঙ্কোসরা আরও একবার জানান দিল, ইউরোপসেরার মুকুটটা তাদেরই। একে একে ১৪ বার ইউরোপসেরা হলো তারা। ইউরোপিয়ান কাপ (১৯৯২ সালের আগে) জয় করেছে ছয়বার। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ (১৯৯২ সালের পর) জয় করেছে আটবার। এছাড়াও আরও তিনবার ফাইনাল খেলেছে রিয়াল। তবে তিনবারই হেরেছে (১৯৬২, ১৯৬৪, ১৯৮১)। এবারের ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদের চেয়ে অনেকে লিভারপুলকেই এগিয়ে রেখেছিলেন। বর্তমান ক্লাব ফুটবলে লিভারপুল অনেক ভারসাম্যপূর্ণ এক দল। তবে রিয়াল মাদ্রিদের বুড়ো করিম বেনজেমা আর তরুণ ভিনিসাসে আটকে গেল অলরেডরা। ম্যাচের ৫৯তম মিনিটে ফেডেরিকো ভালভারদের বাড়ানো বলে ডান পায়ের টোকায় গোল করেন ভিনিসাস জুনিয়র। মুহূর্তেই রিয়ালভক্তদের কাছে নায়ক হয়ে উঠেন তিনি। ম্যাচ জয়ের পর রিয়াল কোচ কার্লো আনচেলত্তি বলেছেন, ‘অনেকেই ভাবেনি যে আমরা চ্যাম্পিয়ন হতে পারি। লিভারপুলকেই ফেবারিট ভেবেছে। এই চিন্তাটাই আমাদেরকে বেশি করে সাহায্য করেছে চ্যাম্পিয়ন হতে।’

রিয়াল মাদ্রিদ ১৪তম ইউরোপসেরার মুকুট জিতে উল্লাসে মেতেছে। সমর্থকরা রাস্তায় নেমে মিছিল করেছে। কার্লো আনচেলত্তি হয়ে উঠেছেন ইতিহাসের অন্যতম সেরা কোচ। চারবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয় করেছেন ইতালিয়ান এই কোচ। রিয়াল মাদ্রিদকে জিতিয়েছেন দুইবার (২০১৪ ও ২০২২)। এছাড়াও এসি মিলানকে জিতিয়েছেন দুইবার (২০০৩ ও ২০০৭)। আনচেলত্তির মতো অতোটা ভাগ্যবান নন জার্গেন ক্লপ। তিনবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে হারলেন তিনি। ডর্টমুন্ডের কোচ হিসেবে একবার (২০১৩) এবং লিভারপুলের কোচ হিসেবে দুইবার (২০১৮ ও ২০২২)। উয়েফা শিরোপা যেন রিয়ালের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। তাদের রেকর্ড সামনে অন্য ক্লাব ভাঙতে পারবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ছাড়া রিয়াল যে দুর্বল নয় তা আবার প্রমাণিত হলো ইউরোপ জয় করে।

 

 

বেনজেমাকে ঠেকায় কে!

ব্যালন ডি’অর লড়াইয়ে আগেই সবাইকে ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন রিয়াল মাদ্রিদের ফরাসি তারকা করিম বেনজেমা। উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতে লড়াইয়ে আরও অনেক এগিয়ে গেলেন তিনি। লা লিগার শিরোপা জিতেছেন আগেই। ফ্রান্সের জার্সিতে জিতেছেন উয়েফা নেশন্স লিগের ট্রফি। এ দুটো বড় শিরোপার সঙ্গে যোগ হলো এবার উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ট্রফিও। করিম বেনজেমার সঙ্গে লড়াইয়ে থাকছেন স্যাডিও মানে আর মোহাম্মদ সালাহও। তবে লড়াইটা কেবল প্রদর্শনীমূলক করে দিলেন বেনজেমা!

 

দুর্ভেদ্য কর্তোয়া

চার বছর আগে, ২০১৮ সালের রাশিয়া বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিলকে বিদায় করেছিল বেলজিয়াম। কাজানের ওই ম্যাচে ২-১ গোলে জিতেছিল বেলজিয়াম। ম্যাচের নায়ক ছিলেন থিবো কর্তোয়া। নেইমার, কুটিনহো, পাওলিনহোদের আক্রমণ একের পর এক আটকে দিয়েছিলেন বেলিজিয়ামের গোলরক্ষক। চার বছর পর সেই কর্তোয়াকে দেখল ফুটবলপ্রেমীরা। দেখলেন প্যারিসের ‘স্তুদ দ্য ফ্রান্স’ স্টেডিয়ামের দর্শক। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জিতেছে রিয়াল মাদ্রিদ। ভিনিসাস জুনিয়রের একমাত্র গোলে লিভারপুলকে হারিয়ে রেকর্ড ১৪ বারের মতো শিরোপা জিতেছে। রিয়ালকে চ্যাম্পিয়ন করতে ‘চীনের প্রাচীর’ হয়ে খেলেছেন কর্তোয়া। মোহাম্মদ সালাহ, সাদিও মানেদের একের পর এক শট তিনি ঠেকিয়ে চ্যাম্পিয়ন করেছেন রিয়ালকে। ম্যাচে বেলজিয়াম গোলরক্ষক ছিলেন পুরোপুরি নির্ভরতার প্রতীক। অসাধারণ পারফরম্যান্সের জন্য তিনি ম্যাচ সেরাও হয়েছেন। সব মিলিয়ে তিনি ম্যাচে সেভ করেছেন ৯টি গোল।

২০০৩-০৪ মৌসুম থেকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের পরশু রাতের ফাইনাল পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সেভ করার রেকর্ড গড়েছেন কর্তোয়া। গোটা আসরে রিয়ালের গোলরক্ষক হিসেবে ৫৯টি সেভ করেছেন। যা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে গোলরক্ষক হিসেবে সবচেয়ে বেশি সেভ করার রেকর্ড। আসরে দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ ফুটবলার হিসেবে গোল করেছেন ভিনিসাস। তিনি গোল করেন মাত্র ২১ বছর ৩২০ দিনে। ২০১৭ সালের ফাইনালে ২১ বছর ১৩৩ দিনে গোল করেছিলেন মার্কো অ্যাসেনসিও।

 

পাঁচ শিরোপায় হাত

উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে একবার চ্যাম্পিয়ন হলেই অনেকে ফুটবল জীবন স্বার্থক মনে করেন। সেখানে পাঁচটা ট্রফি জয়! রিয়াল মাদ্রিদের অনেক তারকারই পাঁচটা করে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ট্রফি জেতা হয়ে গেছে। টনি ক্রুজ, করিম বেনজেমা, কাসেমিরো, মার্সেলো, লুকা মডরিচ, ইসকো, ড্যানিয়েল কারভাহাল, ন্যাচো ও গেরেথ বেলেরা একবিংশ শতাব্দীতে রিয়াল মাদ্রিদের জার্সিতে পাঁচটি করে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ট্রফি জিতেছেন। এর আগে হোসে মারিয়া জারাগা, এনরিক ম্যাটোস, লেসমেস, মারকুইটস, হেকটরও রিয়াল মাদ্রিদের জার্সিতে পাঁচবার করে ইউরোপসেরা হয়েছেন। পাকো গেন্টো জিতেছেন ছয়বার। রিয়ালের ফুটবলাররা ছাড়া এসি মিলানের দুজন পাঁচবার করে ইউরোপসেরা হয়েছেন (আলেসান্দ্রো কস্টাকুর্টা ও পাওলো মালদিনি)। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো রিয়ালের জার্সিতে চারটি ও ম্যানইউর জার্সিতে একটি মোট পাঁচটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ট্রফি জিতেছেন।

 

আনচেলোত্তির ইতিহাস

চ্যাম্পিয়ন্স লিগের হ্যাটট্রিক শিরোপা জিতে রিয়াল মাদ্রিদকে বিদায় জানিয়েছিলেন জিনেদিন জিদান। রিয়ালের কিংবদন্তির ফুটবলার ও কোচ স্পর্শ করেছিলেন লিভারপুলের আরেক কিংবদন্তির কোচ বব পেইজলিকে। একই ক্লাবের হয়ে দুজনে ৩টি করে শিরোপা জিতেছিলেন চ্যাম্পিয়ন্স লিগের। ১৯৮১ সালে পেইজলির কোচিংয়ে লিভারপুল চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল রিয়ালকে হারিয়ে। এতদিন এই দুই কিংবদন্তির পাশে ছিলেন কার্লোস আনচেলোত্তি। পরশু রাতে ৫৯ মিনিটে ভিনিসাস জুনিয়রের গোলে লিভারপুলকে ১-০ গোলে হারিয়ে রেকর্ড ১৪ বার শিরোপা জিতেছে রিয়াল। স্প্যানিশ জায়ান্টদের রেকর্ড গড়ার রাতে নতুন ইতিহাস লিখেন আনচেলোত্তি। কোচ হিসেবে চতুর্থবারের মতো শিরোপা জিতেছেন তিনি। প্যারিসের স্তুদ দ্য স্টেডিয়ামে ফাইনালের আগে অবশ্য তিনি বলেছিলেন, ‘লিভারপুলের যদি প্রতিশোধ নেওয়ার থাকে, তাহলে রিয়াল মাদ্রিদেরও।’ ৪১ বছর আগে ১৯৮১ মৌসুমে প্যারিসের সেই হারের প্রতিশোধ নিয়েছে রিয়াল।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর