বৃহস্পতিবার, ১৪ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা
টানা পঞ্চম ওয়ানডে সিরিজ জয় বাংলাদেশের

টাইগারদের স্পিনে বিধ্বস্ত উইন্ডিজ

ক্রীড়া প্রতিবেদক

টাইগারদের স্পিনে বিধ্বস্ত উইন্ডিজ

গায়ানায় ওয়েস্ট ইন্ডিজকে উড়িয়ে দিয়ে এক ম্যাচ আগেই সিরিজ জিতল বাংলাদেশ। গতকাল জয়ের রাস্তাটা তৈরি করে দিয়েছিলেন স্পিনাররা।

দুই স্পিনার নাসুম আহমেদ ও মেহেদি হাসান মিরাজের ঘূর্ণিতে বিধ্বস্ত হয় উইন্ডিজের ব্যাটিং লাইন আপ। ১০৮ রানেই অলআউট হয় স্বাগতিকরা।

প্রথম ম্যাচের মতো গতকালও নাসুম আহমেদের স্পিনে অসহায় হয়ে পড়েছিলেন উইন্ডিজের ব্যাটসম্যানরা। ১০ ওভারে মাত্র ১৯ রান দিয়েই ৩ উইকেট তুলে নেন তিনি। অভিষেকের পর দ্বিতীয় ম্যাচেই ম্যাচসেরা হন এই টাইগার স্পিনার।

গতকাল দুর্দান্ত বোলিং করেছেন আরেক স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ। তিনি ২৯ রানে নেন ৪ উইকেট। তবে উইকেট শিকারের কাজটা শুরু করে দিয়েছিলেন পার্টটাইমার মোসাদ্দেক হোসেন। এরপর তিন স্পিনার মিলে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে রীতিমতো ধসিয়ে দিয়েছেন।

প্রথমটির মতো দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও টস জিতেছে বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষ ক্যারিবীয় দলকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান টাইগার ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল। টাইগাররা গায়ানার উইকেটের বাড়তি সুবিধা নিয়ে জিততেই স্বাগতিকদের ব্যাটিংয়ে পাঠায়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টানা নবম ওয়ানডে জয়। একই সঙ্গে টানা পঞ্চম ওয়ানডে সিরিজ জয়ের গৌরব অর্জন করল বাংলাদেশ। সব মিলিয়ে ৩১ নম্বর সিরিজ জয়ের স্বাদ নিলেন টাইগাররা। তামিম বাহিনী দ্বিতীয় ওয়ানডে খেলতে নেমেছে এক পরিবর্তন নিয়ে। ডান হাতি পেসার তাসকিন আহমেদকে বসিয়ে নেওয়া হয় স্পিন অলরাউন্ডার মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকে। কাইলি মেয়ার্সকে বোল্ড করে তাকে নেওয়ার যৌক্তিকতাও প্রমাণ করেন। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ওয়ানডে খেলতে নেমে প্রথম উইকেট নেন নাসুম আহমেদ। দুই স্পিনারের পারফরম্যান্সই জানাচ্ছে, উইকেটে রান করতে ব্যাটারদের কষ্ট করতে হচ্ছে। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহ ২৫ ওভারে ৪ উইকেটে ৬৮ রান।              

সাদা পোশাক ও লাল বলের টেস্টে বাংলাদেশ এখনো নিজেদের ব্যারিয়ার ছাড়াতে পারেনি। গড়পড়তা মানের ক্রিকেট খেলছে বলেই পারফরম্যান্সের গ্রাফ ঠিক উপরে উঠছে না। একই অবস্থা রঙিন পোশাকে টি-২০ ক্রিকেটে। সাধারণ মানের ক্রিকেট খেলে হারের বৃত্ত ভাঙতে পারছে না। বিপরীত চিত্র ওয়ানডে ক্রিকেটে। ভারত, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ক্রিকেট খেলছে। ধারাবাহিকভাবে তুলে নিচ্ছে জয়। টেস্ট ও টি-২০ ক্রিকেটের সঙ্গে এমন বৈপরিত্য চিত্রের কারণ কী? মানসিকতা। আক্রমণাত্মক মেজাজের ক্রিকেট খেলে ওয়ানডে ক্রিকেটে তামিম বাহিনী ২০১৯ সালের বিশ্বকাপের পর ধারাবাহিকভাবে পারফরম্যান্স করে চলেছে। অবশ্য টাইগাররা প্রথমবার নিজেদের শক্তিমত্তার প্রমাণ দিতে শুরু করে ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে। ইংল্যান্ডের মতো সুপার পাওয়ারকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছিল। এরপর ঘরের মাটিতে পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে ওয়ানডে সিরিজে হারায়। গত বিশ্বকাপের পর সিরিজ জিতেছে জিম্বাবুয়ে (৩-০), ওয়েস্ট ইন্ডিজ (৩-০), শ্রীলঙ্কা (২-১), জিম্বাবুয়ে (২-১), আফগানিস্তান (২-১) ও দক্ষিণ আফ্রিকার (২-১) বিপক্ষে। হেরেছে শুধুমাত্র নিউজিল্যান্ড (০-৩) ও শ্রীলঙ্কার (০-৩) কাছে। 

২০১৯ সালের মাশরাফির কাছ থেকে নেতৃত্ব পান তামিম। বাঁ হাতি ওপেনার দায়িত্ব পাওয়ার পর আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলছে টাইগাররা। আইসিসি বিশ্বকাপ সুপার লিগের পয়েন্ট টেবিলে শীর্ষে উঠে গেল বাংলাদেশ। ১৯ ম্যাচে ১৩ জয়ে তামিম বাহিনীর পয়েন্ট ১৩০। ১৮ ম্যাচে ১২৫ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড।

টাইগার ক্রিকেটারদের প্রিয় ফরম্যাট ওয়ানডে ক্রিকেট। ৫০ ওভারের ম্যাচে যে কোনো দলের বিপক্ষে নির্ভিক ক্রিকেট খেলেন টাইগাররা। আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলেন। অল্প রানে বেঁধে রাখার পাশাপাশি রান তাড়া করতেও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। তামিমের নেতৃত্বে অধিনায়ক স্বয়ং, লিটন দাস, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, আফিফ হোসেন, মেহেদী হাসান মিরাজ, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলাম, নাসুম আহমেদরা দারুণ পারফরম্যান্স করছেন। বৃষ্টিস্নাত প্রথম ওয়ানডেতে দুর্দান্ত বোলিং করেন পেসার শরিফুল ও স্পিনার মিরাজ। দুজনের আক্রমণাত্মক বোলিংয়ে ৪১ ওভারে ১৪৯ রান করেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তামিম বাহিনী সেটা টপকে যায় ৪ উইকেট হারিয়ে। স্কোর কার্ডে তখনো ৫৫ বল বাকি ছিল। চলতি ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে টেস্ট ও টি-২০ সিরিজে যাচ্ছেতাই পারফরম্যান্সের পর যেভাবে ‘ইউটার্ন’ করেছে টাইগাররা, এর একমাত্র কারণ, ৫০ ওভারের ম্যাচে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা অনেক বেশি সাবলীল, টেকনিক্যালি সাউন্ড এবং আক্রমণাত্মক মানসিকতার। রান তাড়ায় কিংবা ইনিংস গড়ায় ব্যাটাররা রান করছেন দায়িত্ব নিয়ে। বোলাররাও নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেন। শুধুমাত্র ফিল্ডিং ও ক্যাচিংয়ে কিছুটা পিছিয়ে টাইগাররা। চলতি বছর গতকালের ম্যাচ ছাড়া লিটন এখন পর্যন্ত ৭ ম্যাচে রান করেছেন একটি সেঞ্চুরিসহ ৩৩৭। অধিনায়ক তামিম করেছেন ৭ ম্যাচে একটি হাফসেঞ্চুরিসহ ১৯৩ রান। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ৭ ম্যাচে ১৩২, নাজমুল শান্ত ২ ম্যাচে ৫৭, আফিফ হোসেন ৭ ম্যাচে ২টি হাফসেঞ্চুরিসহ ২০৯ রান করেন। বোলিংয়ে মুস্তাফিজ ৭ ম্যাচে ৫ উইকেট, শরিফুল ৭ ম্যাচে নেন ১০ উইকেট। মেহেদী হাসান মিরাজ ৭ ম্যাচে ১২ উইকেট।    

২০১৫ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর থেকেই বদলে যেতে থাকে টাইগাররা। সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেই ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে খেলতে নেমেছে ওয়ানডে সিরিজ। 

 

একাদশ

বাংলাদেশ : তামিম ইকবাল (অধিনায়ক), লিটন দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, আফিফ হোসেন, নুরুল হাসান সোহান (উইকেটরক্ষক), মেহেদী হাসান মিরাজ, মোসাদ্দেক হোসেন, নাসুম আহমেদ, শরিফুল ইসলাম, মুস্তাফিজুর রহমান।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ : নিকোলাস পুরান (অধিনায়ক ও উইকেটরক্ষক), শাই হোপ, রোভমান পাওয়েল, শেমার ব্রুকস, ব্রেন্ডন কিং, কাইল মেয়ার্স, রোমারিও শেফার্ড, কেমো পল, গুডাকেশ মোতি, আলজারি জোসেফ, আকিল হোসেন।

টস : বাংলাদেশ (প্রথমে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত)।

 

সর্বশেষ খবর