দলকে জয়ের রাস্তায় তুলে দিয়েছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসে পাঁচ উইকেট শিকার করেন একাই। তাকে বল হাতে সঙ্গ দিচ্ছিলেন সাকিব আল হাসান। তবে একটা ক্যাচ ফসকে যেতেই জয়ের সুযোগটাই হাতছাড়া হয়ে গেল!
ভারতের জয়ের নায়ক রবীচন্দ্রন অশ্বিন। গতকাল তিনি ৪২ রানে অপরাজিত থাকেন। অথচ মাত্র ১ রানেই সাজঘরে ফিরতে পারতেন অশ্বিন। বাংলাদেশের সুযোগ বেড়ে যেত আরও বেশ খানিকটা। কিন্তু মুমিনুল ক্যাচটা ফেলে দিতেই সব শেষ হয়ে গেল! ম্যাচটাই হেরে গেল বাংলাদেশ। দারুণ একটা জয়ের খুব কাছাকাছি গিয়েও সুযোগটা হাতছাড়া হলো।
ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ নিজেদের প্রথম টেস্ট ম্যাচ খেলেছে। ২০০০ সালের নভেম্বরে। গত ২২ বছরে দুই দল টেস্ট ক্রিকেটে মুখোমুখি হয়েছে ১৩ বার। দুবার টেস্টে ভারতের সঙ্গে ড্র করেছে বাংলাদেশ। জয়ের দেখা পায়নি কোনোবারই। প্রথমবারের মতো ভারতকে টেস্ট ক্রিকেটে পরাজয়ের সুযোগ ছিল টাইগারদের সামনে। কিন্তু তা কাজে লাগানো গেল না। চট্টগ্রাম টেস্টের মতো ঢাকাতেও প্রথমদিকে ভারতই ছিল চালকের আসনে। তবে ম্যাচের তৃতীয় দিনে দৃশ্যপট কিছুটা বদলে যায়। বাংলাদেশের দারুণ সম্ভাবনা দেখা দেয়। মেহেদী হাসান মিরাজ তৃতীয় দিনে তিন উইকেট শিকার করে ভারতকে কোণঠাসা করে দেন। চতুর্থ দিনে খেলতে নেমে আরও দুটি উইকেট নেন মিরাজ। কিন্তু তার বোলিংয়ে অশ্বিন শর্ট লেগে ক্যাচ দিলে তা ফেলে দেন মুমিনুল। এতেই ম্যাচে জয়ের সম্ভাবনা অনেকটা ফিকে হয়ে যায় বাংলাদেশের।
অষ্টম উইকেট জুটিতে ভারতের দারুণ রেকর্ড আছে। অষ্টম উইকেট জুটিতে কোহলি ও যাদব মিলে ২০১৬ সালে ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ২৪১ রান করেছিলেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। অশ্বিন ও শ্রেয়াস আইয়ারের ৭১ রানের জুটি সেই তুলনায় প্রায় কিছুই নয়। কিন্তু ম্যাচের পরিস্থিতিতে এই ৭১ রানই হয়ে গেছে গুরুত্বপূর্ণ। ম্যাচ নির্ণায়কও! বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ম্যাচের পর যেমনটা বললেন, অশ্বিন ও শ্রেয়াস কঠিন উইকেট দারুণ ব্যাট করেছেন। তাদেরকে কৃতিত্ব দিতেই হবে।
ভারতীয় অধিনায়ক কেএল রাহুলও দুজনকে কৃতিত্ব দিলেন। তিনি বললেন, ‘এক সঙ্গে ক্রিকেট খেললে একে অপরের প্রতি অনেক আস্থা তৈরি হয়। কেউ না কেউ ঠিকই দলের ভারটা কাঁধে নিয়ে নেয়। কঠিন এক উইকেটে তারা (অশ্বিন ও শ্রেয়াস) সহজেই খেলল আর ভারতকে জয় এনে দিল।’
বাংলাদেশের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ জিতে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে অনেকটাই এগিয়ে গেল ভারত। তালিকার দুই নম্বরে অবস্থান করছেন কেএল রাহুলরা। ১৪ ম্যাচ খেলে ৮ জয়ে তাদের সংগ্রহ ৯৯ পয়েন্ট। ১৩ টেস্ট খেলে ৯ ম্যাচ জিতে ১২০ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে আছে অস্ট্রেলিয়া। এই তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৯ নম্বরে। ১২ ম্যাচ খেলে ১ জয়ে ১৬ পয়েন্ট সংগ্রহ করেছে টাইগাররা। লন্ডনের ওভালে আগামী জুনে অনুষ্ঠিত হবে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল। এই সময়ের মধ্যে ভারত-অস্ট্রেলিয়া চার ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলবে আগামী ফেব্রুয়ারি ও মার্চে। দক্ষিণ আফ্রিকারও চারটি ম্যাচ বাকি আছে। দুই নম্বরে উঠে যেতে পারে প্রোটিয়ারাও। ১১ ম্যাচ খেলে ৬ জয়ে ৭২ পয়েন্ট নিয়ে তিন নম্বরে আছে দক্ষিণ আফ্রিকা।
আমরা শেষ পর্যন্ত লড়াই করেছি
সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও ভারতকে হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই বললেন। তিনি বলেন, ‘আমরা শেষ পর্যন্ত লড়েছি। সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি ম্যাচটা জয়ের জন্য।’ পাশাপাশি প্রতিপক্ষের প্রশংসাও করলেন সাকিব। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় ওরা ভালো ব্যাট করেছে। অশ্বিন ও শ্রেয়াস আইয়ার, দুজনই ভালো ব্যাট করেছে। খুব সহজ উইকেট ছিল না ব্যাটিংয়ের জন্য। কিন্তু ওরা যেভাবে ব্যাট করেছে, ওদেরকে কৃতিত্ব দিতে হয়। আমরা চেষ্টা করেছি, সব দিক থেকেই চেষ্টা করেছি।’ পরাজয়ের জন্য আক্ষেপ নেই বলেও জানালেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। তিনি বলেন, ‘আক্ষেপ নেই আমার ওরকম কোনো। আমার মনে হয়, আমরা পুরো টেস্ট ম্যাচেই ভালো লড়াই করেছি এবং এই মানসিকতাই সামনের টেস্টগুলোতে থাকবে বলে আশা করি আমি। তাহলেই আমি মনে করি, ফল আমাদের পক্ষে আসবে।’