শনিবার, ৭ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

রনির দিনে রংপুরের জয়

ক্রীড়া প্রতিবেদক

রনির দিনে রংপুরের জয়

বিপিএলের এই আসরটা শুরুই হলো নানা বিতর্ক দিয়ে। অব্যবস্থাপনা নিয়ে সাকিব আল হাসান ও মাশরাফি বিন মর্তুজার অভিযোগের পর দেখা যায় প্রথম দিনে গ্যালারি কানায় কানায় পূর্ণ হয়নি। উদ্বোধনী ম্যাচে মাঠেও ছিল না কোনো লড়াইয়ের ঝাঁজ। তারপর প্রথম ম্যাচ শেষে বিপিএল গভর্নিং বডির আলোচিত প্রেস কনফারেন্স।

তবে সব আলোচনা-সমালোচনা উড়ে যায় রংপুর রাইডার্সের ব্যাটিংয়ের পর। বিশেষত, রনি তালুকদারের ব্যাটিংয়ে। রাইডার্সের এই তারকা ওপেনার বাইশগজে যে ঝড় তুলেছিলেন তাতে পুরো স্টেডিয়াম বিমোহিত হয়ে পড়ে। রনি তালুকদার মাত্র ৩১ বলে খেলেছেন ৬৭ রানের সাইক্লোন ইনিংস। তার ইনিংসে ছিল মোট ১১টি বাউন্ডারি এবং একটি বিশাল ছক্কার মার। রনির ক্যারিশম্যাটিক ব্যাটিংয়ে গতকাল প্রথমে ব্যাট করে ১৭৬ রানের বিশাল স্কোর গড়ে রংপুর রাইডার্স। জবাবে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স অলআউট হয় ১৯.১ ওভারে ১৪২ রানে। ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন রংপুর বিপিএলে নিজেদের প্রথম ম্যাচে জয় পায় ৩৪ রানে।  

প্রথম ম্যাচে রান হয়নি। চট্টগ্রাম চালেঞ্জার্সের সংগ্রহ ছিল ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ৮৯। ৪৫ বল হাতে রেখে জয় পায় মাশরাফি বিন মর্তুজার সিলেট স্ট্রাইকার্স। প্রথম ম্যাচের মতো দর্শকরা হয়তো ধরেই নিয়েছিলেন, দিনটি হয়তো রান খরার! কিন্তু রনি বাইশগজে গিয়ে ধারণা পাল্টে দিলেন। শুরু থেকেই আক্রমণ করেন প্রতিপক্ষের বোলারদের ওপর। টি-২০ ক্রিকেট আসলে এমনই। বড় স্কোর গড়তে চাইলে শুরুতেই আমক্রণ করতে হবে। পাওয়ার প্লেতে ফিল্ডিং রেস্ট্রিকশনের সুবিধাটা আদায় করে নিতে হবে।

গতকাল পাওয়ার প্লের প্রথম ছয় ওভারেই ৬৪ রান করে নুরুল হাসান সোহানের রংপুর। মাত্র ১৯ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেন রনি তালুকদার। মজার বিষয় হচ্ছে, পাওয়ার প্লেতে এক প্রান্তে রনি যখন বাইশগজে ঝড় তুলছিলেন অন্য প্রান্তে তখন অলসভাবে ব্যাটিং করছিলেন নাঈম শেখ। প্রথম ৬ ওভারের মধ্যে ২১ বল মোকাবিলা করেছেন রনি, করেন ৫৫ রান। স্ট্রাইকরেট ছিল ২৬২। তার ইনিংসে ছিল ১১টি বাউন্ডারির সঙ্গে একটি বিশাল ছক্কার মার।

অন্য প্রান্তে থাকা নাঈম শেখ তখন ১৫ বল খেলে করেছিলেন মাত্র ৭ রান। বাউন্ডারি মাত্র একটি। স্ট্রাইকরেট ছিল মাত্র ৪৭! আউট হওয়ার আগে বাঁ-হাতি ওপেনার ২৯ রান করেন ৩৪ বলে।

রনির ঝড়টা সবচেয়ে বেশি গেছে কুমিল্লার অভিষিক্ত বোলার আশিকুর জামানের ওপর দিয়ে। প্রথম ওভারে বল হাতে নেমেই দিয়েছেন ১৭ রান। রনি তালুকদার তার ওভারের প্রথচ চার বল থেকে চারটি বাউন্ডারি আদায় করে নেন। কাল চার ওভারে ৪৭ রান দিয়েছেন আশিকুর। অবশ্য মাঝে-মধ্যে দারুণ কিছু ডেলিভারিও দিয়েছেন। কিন্তু চার ওভারে ৪৭ রান দিয়ে কোনো উইকেট না পাওয়া মানে অভিষেকটা যেন মাটি হয়ে গেল এই তরুণ তুর্কির।

অবশ্য রনি বাইশগজে যে তান্ডব শুরু করেছিলেন তার সামনে তো ভিক্টোরিয়ান্সের কোনো বোলারই স্বস্তিতে ছিলেন না। আফগানিস্তানের অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নবীর ওপর দিয়েও ঝড় কম যায়নি। পাওয়ার প্লেতে দুই ওভার বোলিং করে তিনি দিয়েছেন ৩০ রান। এরপর নবীর হাতে দ্বিতীয় স্পেলে আর বল তুলে দেওয়ার সাহসই পাননি কুমিল্লার অধিনায়ক ইমরুল কায়েস।

শেষ দিকে বাইশগজে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য ঝড় তুলেছিলেন রংপুর রাইডার্সের অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহানও। আফগানিস্তানের সেরা পেসার ফজলহক ফারুকীর ওভারে হাঁকানো ছক্কাটি ছিল দেখার মতো। মাত্র ১১ বল মোকাবিলার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ১৯ রানে ছিলেন অপরাজিত।

৪১ বছর বয়সী শোয়েব মালিকও ব্যাট হাতে ভালোই দাপট দেখিয়েছেন। ২৬ বলে খেলেছেন ৩১ রানের ইনিংস। কাল রান আউটের ফাঁদে পড়ার আগে একটি ছক্কা ও  একটি চার হাঁকিয়েছেন।

তবে এ ম্যাচে ব্যাট হাতে জ্বলে উঠতে পারেননি সিকান্দার রাজা। তিনি ১০ রানের বেশি করতে পারেননি। কিন্তু বল হাতে ঠিকই ক্যারিশমা দেখিয়েছেন। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের সবচেয়ে বড় ব্যাটসম্যান বিশ্বকাপজয়ী ইংল্যান্ডের তারকা ডেভিড মালানকে পাওয়ার প্লের মধ্যেই আউট করেছেন।

 

সংক্ষিপ্ত স্কোর

রংপুর রাইডার্স : ১৭৬/৫, ২০ ওভার (মোহাম্মদ নাঈম ২৯, রনি তালুকদার ৬৮, শোয়েব মালিক ৩৩, সিকান্দার রাজা ১২, নুরুল হাসান ১৯, বেনি হাওয়েল ৮, ফজলহক ফারুকি ১/২৮, মুস্তাফিজুর রহমান ১/৩১, খুশদিল শাহ ১/২৫, মোসাদ্দেক হোসেন ১/১৩)।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স : ১৪২/১০, ১৯.১ ওভার (সৈকত আলী ১৬, লিটন দাস ১০, ডেভিড মালান ১৭, ইমরুল কায়েস ৩৫, মোসাদ্দেক হোসেন ১৫, মোহাম্মদ নবী ১, জাকের আলী ১৯, সিকান্দার রাজা ২/২৩, রবিউল হক ২/৩৩, হাসান মাহমুদ ৩/২০।

ফল : রংপুর রাইডার্স ৩৪ রানে জয়ী। ম্যাচ সেরা : রনি তালুকদার।

 

চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স : ৮৯/৯, ২০ ওভার (মেহেদি মারুফ ১১, ডারউইস রাসুলি ৩, আল আমিন ১৮, শুভাগত হোম ১, আফিফ হোসেন ২৫, উসমান খান ২, উন্মুক্ত চাঁদ ৫, মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী ৩, নিহাদুজ্জামান ৮, মালিন্দা পুষ্পাকুমারা ৬*, মেহেদি হাসান রানা ২*। মাশরাফি ১/১৮, মোহাম্মদ আমির ২/৭, রেজাউর রহমান রাজা ৪/১৪, কলিন অ্যাকারম্যান ১/২২)।

সিলেট স্ট্রাইকার্স : ৯০/২, ১২.২ ওভার (নাজমুল হোসেন শান্ত ৪৩*, কলিন অ্যাকারম্যান ১, জাকির হাসান ২৭, মুশফিকুর রহিম ৬*।  মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী ১/১১, মালিন্দা পুষ্পাকুমারা ১/২২)।

ফল: সিলেট স্ট্রাইকার্স ৮ উইকেটে জয়ী। ম্যাচ সেরা : রেজাউর রহমান রাজা। 

সর্বশেষ খবর