বুধবার, ১১ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

খেলা ছাপিয়ে অন্য ঘটনা

মেজবাহ্-উল-হক

খেলা ছাপিয়ে অন্য ঘটনা

প্রথম ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসের ঘটনা। রংপুর রাইডার্স প্রথম ইনিংসে ব্যাট করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ফিল্ডিংয়ে নেমেছে। বাইশগজে প্রস্তুত ফরচুন বরিশালের দুই ওপেনার। স্ট্রাইকে চতুরঙ্গা ডি সিলভা ও নন-স্ট্রাইকে এনামুল হক বিজয়। বাঁ-হাতি চতুরঙ্গাকে দেখে রাইডার্স ক্যাপ্টেন সোহান স্পিনার রকিবুল হাসানের পরিবর্তে বল তুলে দেন অফ-স্পিনার শেখ মেহেদীর হাতে।

শুরুতেই বাড়তি সুবিধা পেতে ম্যাচ শুরুর আগেই প্রান্ত বদলে স্ট্রাইকিংয়ে চলে যান বিজয়। এদিকে ক্যাপ্টেন সোহানও বোলার পাল্টে বাঁ হাতি স্পিনার রকিবুল হাসানকে আবারও বোলিংয়ে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। মাঝ মাঠের এই নাটক দেখে ডাগআউট থেকে উঠে মাঠে ঢুকে পড়েন বরিশালের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। মাঠে গিয়ে স্কয়ার লেগ আম্পায়ার গাজি সোহেলের সঙ্গে তর্ক করতে দেখা যায় তাকে।

এই নাটক চলে মিনিট পাঁচেক। এমন ঘটনা কেবল মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের দর্শকরাই দেখেছেন তা নয়, গোটা বিশ্বই দেখল এই নাটক। এতে বিপিএলের ভাবমূর্তি কতটা উজ্জ্বল হলো! ডিআরএস না থাকায় ভুল সিদ্ধান্ত, মাঠে আম্পায়ারের সঙ্গে তর্কাতর্কি যেন বিপিএলে নিয়মিত ঘটনা হয়ে গেছে। এমন নাটকীয় ঘটনায় ক্রিকেট বিশ্ব বাংলাদেশের ক্রিকেট সম্পর্কে কী বারতা পাচ্ছে!

ওই সময় সাকিব আল হাসানের মাঠে ঢুকে পড়াটা কি খুবই জরুরি ছিল? তিনি নিয়ম ভেঙে এমনটা করলেন, নাকি ক্রিকেটে এমন নিয়ম আছে?

ফরচুন বরিশালের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসে মেহেদী হাসান মিরাজ বললেন, এটা মোটেও বিধি বহির্ভূত কোনো ঘটনা নয়। একজন অধিনায়ক চাইলেই তৃতীয় আম্পায়ারের সঙ্গে কথা বলে মাঠে ঢুকতে পারেন। আর সাকিব ভাই, আম্পায়ারের অনুমতি নিয়েই মাঠে ঢুকেছেন।

ওই সময় সাকিব আল হাসানের মাঠে ঢুকে পড়াটা কি খুবই জরুরি ছিল? তিনি নিয়ম ভেঙে এমনটা করলেন, নাকি ক্রিকেটে এমন নিয়ম আছে?

পুরো বিষয়টিকে মেহেদী হাসান মিরাজ নিছক ‘দুষ্টামি’ বলেই উড়িয়ে দিলেন। তিনি বলেন, সোহান ভাই সাকিব ভাইয়ের সঙ্গে দুষ্টামি করে এমন করেছেন। তিনি জানান, সবাই চায় বাড়তি সুবিধা নিতে। তাই এমনটা ঘটেছে।

মেহেদী হাসান মিরাজ দুষ্টামি বললেও ঘটনাটি যে নিছক দুষ্টামির পর্যায়ে ছিল না তা ওই সময়ের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখেই মনে হয়েছে। প্রেস কনফারেন্সে নুরুল হাসান সোহান বলেন, এমন ঘটনা তিনি তার জীবনে প্রথমবার দেখলেন। আর কেনই বা সোহানও বার বার বোলার পরিবর্তন করলেন? এমন প্রশ্নে রাইডার্স অধিনায়ক বলেন, ‘আমি দুষ্টামির কথা বলিনি। সাকিব ভাই যখন বাইরে থেকে কথা বলছিল (স্ট্রাইক পরিবর্তন) তখন জিনিসটা আমিও বোলার বদলেছি। এটা যদি ব্যাটাররা (মাঠের দুই ব্যাটার) করতো, তাহলে আমিও বদলাতাম না। যখন বাইরে থেকে কথা হয়েছে, এ কারণে আমি বদলেছি। এটাকে দুষ্টামি বলব না। আমি যেটা বললাম আমি চাইব সেরা বোলার সেরা ব্যাটারের বিপক্ষে যেন বল করে।’

আম্পায়ারের সঙ্গে কি নিয়ে তর্কাতর্কি হয় এ সম্পর্কে কিছু বলেননি নুরুল। তিনি বলেন, ‘সাকিব ভাইয়ের সঙ্গে যখন তর্কাতর্কি হয়েছে, তখন তো আমি ছিলাম না। আমি এই পাশে ছিলাম। মাঠে ছিলাম, কী কথা হয়েছে আমি জানি না। আমি আমার পাশে ছিলাম।’

তবে এমন ঘটনায় আম্পায়ারেও খানিক দায় আছে বলে মনে করেন নুরুল হাসান সোহান, ‘আম্পায়ারের আগে বলা উচিত ছিল। আম্পায়ার তো কিছুই বলেননি। আম্পায়ার কথা বললে আরেকটু আগে সমাধান হতো। আমাকে যখন বলেছে, আর কোনো তর্ক করিনি। পরে তো সেটাই হয়েছে, ব্যাটাররা যা চেয়েছে। ব্যাটারের রাইট যেটা, ওটাই করেছে।’

কী বাড়তি সুবিধা নেওয়ার জন্য এমন অদ্ভুত ঘটনার জন্ম হলো?

বাঁ হাতি বোলারদের বিরুদ্ধে বাঁ হাতি ব্যাটসম্যানরা ভালো করতে পারেন না-এমন একটা ধারণা থেকেই এমন হাস্যকর ঘটনার উৎপত্তি। কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে, বাঁ হাতি ব্যাটসম্যান চতুরঙ্গা ডি সিলভাকে কিন্তু বাঁ হাতি স্পিনার রকিবুল হাসানই আউট করেছেন। সেটাও ম্যাচের প্রথম ওভারেই। তাহলে কেন মাঝখান থেকে এমন নাটক হলো? কে দেবে এই প্রশ্নের উত্তর!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর