মঙ্গলবার, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিদেশি ফুটবলারদের মুখে বাংলা ভাষা

মনোয়ার হক

বিদেশি ফুটবলারদের মুখে বাংলা ভাষা

১৯৮৪ সালের কথা। দুপুরে খাবার টেবিলে খেলোয়াড়রা সবেমাত্র বসতে শুরু করেছেন। এমন সময় এক ফুটবলার বলে উঠলেন আজ তোমরা কী খাওয়াবে মাছ না মাংস? যেহেতু বাংলায় বলছেন, তাই মনে হবে এ কথা কোনো বাঙালি ফুটবলারের। না কোনো বাঙালি নন এক বিদেশি খেলোয়াড় পরিষ্কার বাংলা ভাষায় এমনটি জানতে চাইলেন। বলছিলাম শ্রীলঙ্কার ফুটবলার পাকির আলির কথা। ঢাকার মাঠে সাড়া জাগানো ডিফেন্ডার। দীর্ঘদিন দেশের জনপ্রিয় দল ঢাকা আবাহনীতে সুনামের সঙ্গে খেলেছেন। পাকির আলি সতীর্থ স্থানীয় খেলোয়াড়দের সঙ্গে থেকে বাংলা ভাষা পুরোপুরি শিখে ফেলেছিলেন। ১৯৮৫ সালে ঢাকা আবাহনী হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়নের পর এক সাংবাদিক ইংরেজিতে তার অনুভূতির কথা জানতে চেয়েছিলেন। পাকির আলি হেসে উত্তর দেন আজ আমার বড্ড আনন্দের দিন। যা আপনাদের বুঝিয়ে বলতে পারব না। তার স্বদেশি প্রেমলালও বাংলায় কথা বলতে পারতেন।

শুধু পাকির আলি বা প্রেমলালই নন, বর্তমানে পেশাদার লিগে খেলা বেশ কজন বিদেশি ফুটবলার এমনভাবে বাংলা বলছেন যা শুনতে অবাকই লাগে। বসুন্ধরা কিংসের সফল কোচ অস্কার ব্রুজোন স্প্যানিশ হলেও তাঁর সঙ্গে দেখা হলেই হাত মিলিয়ে বলেন কেমন আছেন। একটু জড়তা থাকলেও অস্কারের বাংলা ভাষা বুঝতে কোনো সমস্যা হয় না। ঢাকায় যেসব খাবার তাঁর প্রিয় যেমন বিরিয়ানি, কাচ্চি, মুরগির রোস্ট, ইলিশের কথা বাংলাতেই বলেন। ম্যাচের আগে বাসে ওঠার সময় তিনি ভাঙা ভাঙা বাংলায় বলেন, তোমরা দোয়া কর আজ বসুন্ধরা কিংস জিতবে। কিংসের ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার রবসন রবিনহো বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলে জনপ্রিয় নাম। অনেকে বলেন, এমন পরিশ্রমী ও এতটা ভালোমানের ফুটবলারের বাংলাদেশে দেখা মেলেনি। সেই রবসনও সতীর্থদের সঙ্গে থেকে বাংলা বলতে পারেন। দেখা হলেই হাত উঠিয়ে বলেন, সালাম। বসুন্ধরা খুব ভালো। বলেন, রিকশায় ঘুরতে মজা লাগে। ডরিয়েলটনও বাংলায় কথা বলেন, তবে বেশ ভেঙে ভেঙে।

কোস্টারিকার ফুটবলার ড্যানিয়েল কলিনড্রেস এখন ঢাকা আবাহনীতে খেললেও তিনি একটু-আধটু করে বাংলায় কথা বলতেন কিংসে থাকাবস্থায়। এখন তিনি মোটামুটি ভালোই বাংলা বলতে পারেন। ধানমন্ডিতে এক ফুড হাউসে কিছুদিন আগে তার সঙ্গে দেখা। কিছু বলার আগে কলিনড্রেস বলে উঠলেন ভালোতো। আবাহনীতে খেলা আইডু ইব্রাহিম ও সামাদ ইউসুফ ভালোভাবেই বাংলা বলতে পারতেন। এলিটা কিংসলে বাংলাদেশি মেয়ে বিয়ে করে নাগরিকত্ব পেয়েছেন। মোহামেডানের সোলেমান দিয়াবাতের সঙ্গে দেখা হলেই হাত উঁচিয়ে বাংলায় বলেন, বন্ধু সালাম। শেখ রাসেল ও শেখ জামালে খেলা সনি নর্দেও বাংলা শিখেছিলেন। শেখ জামালের সোলেমান কিং ইংরেজির বদলে ভেঙে ভেঙে বাংলা বলতেন।

আশির দশকে ঢাকা মোহামেডানে খেলা এমেকা বাংলাভাষা ভালোই শিখেছিলেন। এখনো ঢাকায় এলে বাংলায় বলেন, মোহামেডানকে ভালোবাসি। কায়সার হামিদ আমার বন্ধু।

তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ঢাকা লিগে দাপটের সঙ্গে খেলেছেন অবাঙালি গফুর বেলুচ। পরবর্তীতে তিনি বিজেএমসি ও ব্রাদার্স ইউনিয়নের কোচ ছিলেন। পাকিস্তানের হলেও তিনি বাংলায় কথা বলতে পছন্দ করতেন। বাঙালিদের তিনি এত ভালোবাসতেন যে, মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা করেছেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও তিনি পাকিস্তানে ফিরে যাননি। ঢাকাতেই মৃত্যুবরণ করেন। এবার বিপিএলে ধারাভাষ্য দিতে গিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটার কোর্টলি অ্যামব্রোস ও পাকিস্তানের আমির সোহেল মাঝে মধ্যে বাংলাতেও কথা বলেছেন। 

সর্বশেষ খবর