রবিবার, ২ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

আর্চারিতে আলোড়ন

১৭ বছরে ১৩৯ পদক

মনোয়ার হক

আর্চারিতে আলোড়ন

পুরুষদের পাশাপাশি নারী আর্চাররাও বিজয়ের পতাকা ওড়াচ্ছেন। সাজ্জাদুল হোসেন, ইমদাদুল হক মিলন, নূরে আলম, রোমান সানা, হাকিম আহমেদ রুবেল, রামকৃষ্ণ। মেয়েদের মধ্যে শ্যামলী রায়, বিউটি, নাজনীন, দিয়া সিদ্দিকী- এরাই আর্চারিকে নিয়ে গেছেন অন্য উচ্চতায়

  আর্চারিকে ঘিরে শুরুতে কম বিরূপ মন্তব্য করা হয়নি। এতটা অবহেলা, শুরুতে মাঠ খুঁজে পাচ্ছিল না আর্চাররা। কারও কারও ধারণা ছিল বাংলাদেশে বেশি দিন আর্চারি টিকবে না। যে কোনো সময়ে বিলুপ্ত ঘটবে।

কত কটূক্তিই না করা হয়েছিল এ খেলাকে ঘিরে। অথচ সেই আর্চারিই এখন বাংলাদেশের গর্ব। দেশে এ খেলা শুরুর পেছনে মুখ্য অবদান কাজী রাজিব উদ্দিন আহমেদ চপলের। যিনি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক। তার সাংগঠনিক ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল হ্যান্ডবলের মাধ্যমে। এরপর চপল বাংলাদেশে খো খো খেলার আগমন ঘটান। তিনিই ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নেন। যে খো খো ঘিরে হাসাহাসি হতো। সেই খেলা অল্পদিনেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

বাংলাদেশে আর্চারি খেলা চালু করেন চপলই। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘২০০০ সালে আমি থাইল্যান্ডে ব্যবসায়িক কাজে গিয়েছিলাম। মাঠে দেখলাম তীর ধনুকের প্রতিযোগিতা চলছে। পরে জানতে পারলাম এ খেলার নাম আর্চারি। বাংলাদেশে ২০০১ সালে প্রাথমিকভাবে চালু হলো আর্চারি। দেখলাম তরুণ-তরুণীদের সে কী আগ্রহ। এভাবে শুরু হয় বাংলাদেশে আর্চারি। ২০০৬ সালে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ফেডারেশন হিসেবে আর্চারিকে স্বীকৃতি দিল। এরপর পুরোদমে দেশে আর্চারি চর্চা শুরু হয়ে গেল। মজার ব্যাপার হলো ফেডারেশনের স্বীকৃতি পাওয়ার আগে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় আর্চারি সোনা জিতেছিল।’

ওই যে নতুন পাগল বলে তিরস্কৃত করা হয়েছিল। সেই আর্চারিই নতুনত্ব এনেছে। বাংলাদেশে তো ফেডারেশনের কমতি নেই। শ্যুটিং, সাঁতার, অ্যাথলেটিকস, জিমন্যাস্টিকস বা অন্য খেলা থেকে বিভিন্ন গেমসে পদক জেতার কৃতিত্ব রয়েছে। কিন্তু আর্চারি দেশকে যে সাফল্য এনে দিয়েছে তা অন্যরা পারেনি। ২০০৬ থেকে ২০২৩। জন্মের মাত্র ১৭ বছরের মধ্যে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পদক জয়ের ইতিহাস গড়েছে আর্চারি। যে কোনো খেলায় সোনা জয় স্বপ্ন হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু আর্চারি এই অল্প দিনে ৪১টি সোনা জিতে প্রমাণ করেছে আর্চারি তুলনাহীন। রৌপ্য ৪৭, তামা ৫১। ১৭ বছরে ১৩৯টি পদক জিতে এশিয়ায় আলোড়ন তুলেছে। কমনওয়েলথ ও এশিয়ান গেমস ছাড়া আর্চারি সব আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পদক জিতেছে। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কারোর এককভাবে পদক জেতার কৃতিত্ব নেই। আর্চার রোমান সানাই নেদারল্যান্ডস বিশ্বকাপে তামা জিতে এশিয়াকে চমকে দেন। পৃথিবীর কোনো গেমসে ১০টিতে ১০ সোনা জেতার সামর্থ্য না থাকলেও বাংলাদেশই তা করে দেখিয়েছে আর্চারি। এশিয়ার আর্চারি, এশিয়া গ্রান্ডপ্রিক্স, এশিয়ান ইয়ুথ কন্টিনেটাল, যুব কমনওয়েলথ, ইসলামী সলিডারিটি- এমন কোনো গেমস নেই যে বাংলাদেশ পদক ছাড়া মাঠ ছেড়েছে।

প্রশ্ন হচ্ছে, এত অল্পদিনে আর্চারি সম্মানজনক জায়গা করে নিল কীভাবে? এর মধ্যে অন্যতম কারণ হচ্ছে কমিটমেন্ট, সমন্বয় ও আত্মবিশ্বাস। শুরুতেই বিদেশি কোচ নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। দীর্ঘ দিন ধরেই জার্মানির মাট্রিন ফ্রেডরিখ প্রশিক্ষণের দায়িত্বে আছেন। মূলত তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর আর্চারির চেহারা বদলে গেছে। পুরুষদের পাশাপাশি নারী আর্চাররাও বিজয়ের পতাকা ওড়াচ্ছেন। সাজ্জাদুল হোসেন, ইমদাদুল হক মিলন, নূরে আলম, রোমান সানা, হাকিম আহমেদ রুবেল, রামকৃষ্ণ। মেয়েদের মধ্যে শ্যামলী রায়, বিউটি, নাজনীন, দিয়া সিদ্দিকী- এরাই আর্চারিকে নিয়ে গেছেন অন্য উচ্চতায়। আফসোস দেশকে সুনামে ভাসানোর পরও তাদের সেভাবে মূল্যায়ন করা হয় না।

এনিয়ে রোমান সানা বা দিয়া সিদ্দিকীদের কোনো আক্ষেপ নেই। তাদের একটাই কথা, আর্চারিকে আরও বহুদূর নিয়ে যেতে চাই। এশিয়ান গেমসে ও অলিম্পিকেই আমাদের চোখ। কাজটা কঠিন, তবে অসম্ভব নয়।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর