শিরোনাম
সোমবার, ৩ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

সিন্ডিকেটে বন্দি বাফুফে!

ক্রীড়া প্রতিবেদক

সিন্ডিকেটে বন্দি বাফুফে!

গত বছর নেপালে বাংলাদেশের নারী জাতীয় দল সাফ ফুটবলে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়ে ইতিহাস গড়েছিল। অথচ তাদেরই কি না চরম অবহেলা বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা হলো। সাবিনা, সানজিদারা স্বপ্ন দেখছিলেন আগামী বছর ফ্রান্সে আয়োজিত অলিম্পিক গেমসে বাছাই পর্ব খেলার। মিয়ানমারে তা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে ঘোষণা এলো মেয়েরা অলিম্পিক বাছাই পর্ব খেলতে পারবেন না। কারণ অর্থ সংকট

  ২১ জন নির্বাচিত কর্মকর্তাকে নিয়ে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের নির্বাহী কমিটি গঠিত। একজন সভাপতি, একজন সিনিয়র সহসভাপতি, চারজন সভাপতি ও ১৫ জন সদস্য নিয়েই বাফুফের কর্মকান্ড  পরিচালিত হচ্ছে। লম্বা কমিটি, বাংলাদেশের ফুটবল চালাতে এতজন লাগে? অথচ বিশ্ব ফুটবল অভিভাবক সংস্থা ফিফার নির্বাহী কমিটি মাত্র ৩৭ জনকে নিয়ে। এত স্বল্প লোকজন নিয়ে বিশ্ব ফুটবল দেখভাল করছে সংস্থাটি। প্রশ্নটি এখন নয়, বরাবরই ওঠে বাফুফের এত বড় কমিটির কাজটি কী? কিংবা ফুটবল উন্নয়নে তাদের ভূমিকা কী?

বাফুফে মানেই দেশের ফুটবলের ভালো-মন্দ দেখা। অথচ আজ পর্যন্ত তার দেখা মেলেনি। বাফুফে বরাবরই ঢাকা কেন্দ্রিক। এমন অবস্থা যে, ঢাকা ঠিক থাকলে ফেডারেশনের দায়িত্ব শেষ। নির্বাহী কমিটি মানে ফেডারেশনের সব গুরুত্বপূর্ণ কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকবে। অবাক হলেও সত্যি যে, কাজী সালাউদ্দিনের নেতৃত্ব দেওয়া কমিটিতে সাতজন মিলেই সব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। এমন সিন্ডিকেট তৈরি হয়ে গেছে ফেডারেশনে। সাতজনের কথা বলার কারণ হচ্ছে বাফুফে কর্মকান্ডে তা প্রমাণ মিলছে। সভাপতি, দুই সহসভাপতি, তিন সদস্য ও একজন বেতনভুক্ত কর্মচারী। যিনি কি না ফেডারেশনে খুবই ক্ষমতাবান। আরেক সহসভাপতি এ সিন্ডিকেটের মধ্যে না থাকলেও তার জি হুজুর মনোভাবে সাতজনের কাছের লোক বলেই পরিচিত। আরও কিছু সদস্য আছেন যাদের কাজই হচ্ছে তোষামোদী করা।

অবাক হলেও সত্যি, এক সহসভাপতির সক্রিতায় ঘরোয়া ফুটবল টিকে আছে। তাঁকেও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে পাশ কাটানো হচ্ছে। অথচ তাঁর মাধ্যমে প্রায় প্রতিটি লিগে স্পন্সর পাচ্ছে বাফুফে। এমনকি প্রয়োজনীয় ফান্ড বা স্পন্সর জোগাড় করে দিচ্ছেন। যাঁকে ৭০ ও ৮০-এর দশকের ত্যাগী সংগঠকদের সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে। অথচ তাঁকেই পাশ কাটিয়ে বাফুফেতে এখন সিন্ডিকেট তৈরি হয়ে গেছে। তাই তো বলা হয় সাত সদস্যের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে বাফুফে। গত বছর নেপালে বাংলাদেশের নারী জাতীয় দল সাফ ফুটবলে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়ে ইতিহাস গড়েছিল। অথচ তাদেরই কি না চরম অবহেলা বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা হলো। সাবিনা, সানজিদারা স্বপ্ন দেখছিলেন আগামী বছর ফ্রান্সে আয়োজিত অলিম্পিক গেমসে বাছাই পর্ব খেলার। মিয়ানমারে তা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে ঘোষণা এলো মেয়েরা অলিম্পিক বাছাই পর্ব খেলতে পারবেন না। কারণ অর্থ সংকট।

নারী ফুটবলাররা এখন দেশের গর্ব। অথচ তাদের ঘিরে এত বড় সিদ্ধান্তের কথা জানা গেল সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগের ভিডিও ফুটেজের বক্তব্যে। অবশ্য বাফুফে থেকে অল্প শব্দের প্রেস রিলিজ দেওয়া হয়েছিল। সাবিনাদের সঙ্গে এ কেমন আচরণ? এত বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে নির্বাহী কমিটির সভা কি করা যেত না? এখানে তো অন্যদের মতামত নেওয়া যেত। আজব কান্ড! এ নিয়ে বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের কোনো বক্তব্য নেই। বলা হচ্ছে অর্থ সংকট। বিষয়টি কতটা সত্য তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

বাফুফের সাবেক সভাপতি এস এ সুলতান ক্ষোভের সঙ্গে বলেছেন, ‘মেয়েদের প্রতি অন্যায় করা হয়েছে। অর্থের কথা বলা হচ্ছে। তাহলে ফিফার বিশাল ফ্যান্ড দিয়ে তারা কী করে। কতটা লজ্জা, হিসাবে গড়মিল পেয়েছিল বলে ফিফা বাফুফের কর্মকর্তাদের তাদের দফতরে ডেকে শাসিয়ে দিয়েছে। মেয়েদের বেলায় অর্থ সংকট। আর একটা নিম্ন সারির দলের বিপক্ষে খেলতে লাখ লাখ টাকা খরচ করে সৌদি আরবে কন্ডিশনিং ক্যাম্প করেছে পুরুষ ফুটবল দল। এতে লাভের চেয়ে বড় লজ্জাটাই পেয়েছে।’

সাবেক ফুটবলার শেখ মো. আসলাম বলেন, ‘কোন খাতে কত খরচ হিসাব নেই। এ নিয়ে কেউ প্রশ্নও তোলেন না। আমি বলব, মেয়েদের বিশ্বকাপ অলিম্পিক বাছাই পর্ব নিয়ে যা ঘটেছে তা সরকারের উচ্চ মহলের তদন্ত হওয়া উচিত। এতেই বের আসবে আসল রহস্য। সোহাগ তো একজন কর্মচারী। ও ভিডিও ফুটেজে ঘোষণা দিল আর তা মেনে নেওয়া যায় কীভাবে? তাকে এই ক্ষমতা কে দিয়েছেন? বাফুফে কি এভাবেই চলবে?’

সর্বশেষ খবর