রবিবার, ৯ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

আমাদের গলফারদের সাহসের অভাব

আমাদের গলফারদের সাহসের অভাব

গলফ বিশ্বে বাংলাদেশের বিজ্ঞাপন একজনই- সিদ্দিকুর রহমান! ২০১০ ও ২০১৩ সালে এশিয়ান ট্যুরে শিরোপা জিতেছেন। এরপর অনেকবারই শিরোপার খুব কাছে গিয়েছেন, বিশ্বসেরাদের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে লড়াই করেছেন কিন্তু চ্যাম্পিয়ন হতে পারেননি। তবে সিদ্দিকুর রহমান ছাড়া আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের অন্য গলফারদের খুঁজেই পাওয়া যায় না। গলফে বাংলাদেশে নতুন কোনো সুপারস্টার তৈরি হচ্ছে না! নিজের পারফরম্যান্স এবং গলফের নানা বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে কথা বলেছেন সিদ্দিকুর রহমান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মেজবাহ্-উল-হক

 

বারবার তীরে এসে তরী ডুবে যাচ্ছে। থাইল্যান্ডে ইন্টারন্যাশনাল সিরিজে তৃতীয় রাউন্ডে লিডারবোর্ডে শীর্ষে ছিলেন। ভারতের দিল্লিতে ‘দ্য ডিজিসি ওপেন’-এ দ্বিতীয় রাউন্ডে শীর্ষে ছিলেন। কিন্তু বারবার শীর্ষে থেকেও কেন শিরোপা জিততে পারছেন না? শেষ মুহূর্তে কী সমস্যা হচ্ছে আপনার?

সিদ্দিকুর রহমান : গলফ হচ্ছে মেন্টাল গেম। লিডিং পজিশনে থাকলে শেষ মুহূর্তে মানসিক চাপ অনেক বেশি থাকে। ওই সময় ভয়ও কাজ করে। মেন্টালি দুর্বল হয়ে গেলে শরীর কাজ করে না ঠিকমতো। গত তিনটি টুর্নামেন্টে আমি এ বিষয়গুলো নতুন করে অনুধাবন করছি। এর আগেও আমার খেলায় উত্থান-পতন ছিল। তবে এবার আসল সমস্যাটা খুঁজে বের করেছি। আমি দেখেছি মানসিক চাপের কারণেই এমন হয়।

 

লিডিং গ্রুপে থাকা গলফারকে কী কী সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়?

এখানে অনেক বাধাই কাজ করে। লাইভ কাভারেজ হচ্ছে- এটা একটা বড় বাধা। আমার দর্শকরা চারদিকে দেখছেন- এটাও বাধা। লিডিং গ্রুপে সবাই কাছাকাছি থাকেন, কে কখন বেশি ভালো করছে সেটাও একটা বিষয়। তবে এসব বিষয় কখনো মাথায় কাজ করে, আবার কখনো করে না। এসব আসলে ভুলে থাকতে হয়। চাইলেই সব সময় আবার ভোলাও যায় না। তবে এমন সব পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে যেতেই শিখতে হয়।

 

২০১৬ সালে মরিশাস ওপেনে শেষ শট ভুল হওয়ার কারণে আপনার প্রথমবারের মতো ইউরোপিয়ান ট্যুর জয়ের একটা দারুণ সুযোগ নষ্ট হয়। নিঃসন্দেহে সেটি আপনার জন্য একটা বড় ধাক্কা ছিল। এরপর আপনি মনস্তাত্ত্বিক বিষয় নিয়ে কী কী কাজ করেছেন?

ওই ছিল আমার জন্য বড় ধাক্কা। তারপর আমি সাইকোলজি নিয়ে কাজ করি। এখনো কাজ করছি। ওই সময় আমার মানসিক দৃঢ়তা অনেক বেশি ছিল। ওইটা কিন্তু আমার বড় অর্জন ছিল। ইউরোপিয়ান ট্যুরে দ্বিতীয় হয়েছিলাম, এটা সোজা কথা নয়। ওই সময় হয়তো একটুখানি ভুল করেছিলাম।

 

আপনি এবং জামাল মোল্লা নিয়মিত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে খেলছেন। বাংলাদেশের অন্য গলফাররা তো খেলছেন না। আবার অধিকাংশ সময় দেখা যায়, ঘরোয়া টুর্নামেন্টে আপনারা দুজন থাকলে স্থানীয় অন্য কোনো গলফার আপনাদের সঙ্গে লড়াইয়ে টিকতে পারছেন না। তাদের সমস্যাটা কোথায়?

গলফটা হচ্ছে সাহসের খেলা। নিজের খেলায় যদি নিজের সাহস না থাকে তার পক্ষে চ্যাম্পিয়ন হওয়া অসম্ভব। কেউ যদি মনে মনে না ভাবে আমি চ্যাম্পিয়ন হব, সে কখনো চ্যাম্পিয়ন হবে না। একটা বিষয় দেখেন, যখন আমি কিংবা জামাল খেলি তখন সবাই মনে করে আমি কিংবা জামালই চ্যাম্পিয়ন হবে! তাদের ভাবনা, আমরা থাকলে অন্য কেউ চ্যাম্পিয়ন হতে পারবে না! শেষে দেখা যায়, ঠিকই আমরা চ্যাম্পিয়ন হই অন্যরা হতে পারে না।

 

এমনটা কেন হয়? তারা কি খেলার আগেই হেরে যাচ্ছেন?

ঠিক। তারা আসলে খেলার আগেই হেরে যাচ্ছেন। তারা খেলছেনই দ্বিতীয় পজিশনের জন্য। সেকেন্ড হওয়ার জন্য খেলতে নেমে ফার্স্ট হবেন কীভাবে? এই ভাবনা নিয়ে খেলতে নেমে তারা শিরোপার কাছাকাছিও যেতে পারেন না। কারণ, তারা তো মাইন্ডসেট করে রাখেন দ্বিতীয় হওয়ার জন্য, শিরোপা জিতবেন কীভাবে? কখনো ভালো করলেও সেটা ধরে রাখতে পারেন না। সত্যি কথা বলতে কি, এখানে সবারই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সামর্থ্য আছে। কিন্তু তারা মানসিকভাবে পিছিয়ে থাকেন।

 

সিদ্দিকুরের সঙ্গে বাংলাদেশের অন্য গলফারদের সামর্থ্যরে পার্থক্য এত বেশি কেন? এ সমস্যা থেকে কাটিয়ে ওঠার উপায় কী?

প্রথমত অন্যরা তো ট্যুরেই (ট্যুরে খেলার যোগ্যতা) ঢুকতে পারেননি। আর ট্যুরে ঢোকার জন্য যে অ্যাম্বিশন থাকা দরকার সেটাই তো আমাদের নেই। আমাকে প্রথমে একটা লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সেট করতে হবে। আমার তো লক্ষ্যই নেই যে ইন্ডিয়ান ট্যুরে কিংবা এশিয়ান ট্যুরে কোয়ালিফাইং খেলব! আমাদের ওই ধরনের মাইন্ডসেটই নেই। অংশ না নিলে কীভাবে বুঝব যে তারা পারেননি।

 

তাহলে দিনের পর বিভিন্ন গলফ ক্লাবে পেশাদার গলফাররা খেলছেন কোন লক্ষ্য সামনে রেখে?

এটা কেবল স্থানীয় পর্যায়ে টিকে থাকার জন্য। এখানকার একজনেরও টার্গেট নেই ইন্ডিয়ায় গিয়ে কোয়ালিফাই করবেন। কেউ বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন না। আর যদি বলেনও দেখবেন তিনি মনে মনে ভাবছেন এক আর মুখে বলছেন আরেক।

 

এখানকার গলফারদের মনে কি কোনোরকম ভয় কাজ করছে?

ভয় না, এটা তারা চিন্তাই করেন না যে ইন্ডিয়ায় গিয়ে কোয়ালিফাই খেলবেন। তারা তো বাংলাদেশেই জেতার চিন্তা করেন না। আর যে চিন্তা করেন সে ঠিকই জিততেছে। আর এ জয়ের চিন্তাটাও তখনই করেন যখন সিদ্দিক কিংবা জামাল না থাকেন। এটাই তো সবচেয়ে বড় মনস্তাত্ত্বিক বাধা। কিন্তু তার স্কিল ঠিকই আছে।

 

গলফারদের ভালো করতে হলে সবার আগে কী পরিবর্তন করতে হবে?

দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে হবে। আমার হাতে কোনো সুপারপাওয়ার থাকলে আমি সবার দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিতাম। এখানে কোনো টাকার প্রয়োজন নেই। কেবল ইচ্ছাশক্তির প্রয়োজন। সবাইকে ইতিবাচক হতে হবে। সবাই অন্যের কথা বলে, কিন্তু নিজের কথা কেউ চিন্তা করে না। সবাইকে সবার আগে নিজের উন্নয়নের কথা ভাবতে হবে। তাহলেই উন্নতি হবে। সময়টা নিজের জন্য ইনভেস্ট করতে হবে।

 

 

 

সর্বশেষ খবর