এক সময়ে ফুটবলে আলোচনা হতো আবাহনী-মোহামেডান ঘিরেই। দেশজুড়েই ছিল দুই দলের সমর্থক। মোহামেডান-আবাহনীর ম্যাচ মানেই উত্তেজনায় কাঁপত দেশ। এখন বিশ্বকাপ এলে যেমন আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের পতাকা ঘরে ঘরে ওড়ে। তখন উড়ত আবাহনী-মোহামেডানের পতাকা। এখন দুই দলের ম্যাচ কবে এবং কোথায় হয় তা নিয়ে আগ্রহ নেই কারোর। হবেই বা কীভাবে? আবাহনী তাদের দাপট ধরে রাখলেও মোহামেডান বড্ড ম্লান। ২১ বছর ধরে লিগ শিরোপার দেখা নেই। ফেডারেশন কাপ ও স্বাধীনতা কাপেও ব্যর্থ। এতটা সংকটাপন্ন অবস্থা যে সমর্থকদের এখন শিরোপার বদলে দুশ্চিন্তা করতে হয় রেলিগেশন নিয়ে।
১৪ বছর পর ফাইনালে মুখোমুখি হলো আবাহনী-মোহামেডান। মোহামেডান সেমিতে কিংস আর শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রকে হারিয়ে আবাহনী বসুন্ধরা গ্রুপ ফেডারেশন কাপ ফাইনালে ওঠে। এক যুগের বেশি সময়ের পর দেশের জনপ্রিয় দুই দল শিরোপা লড়াইয়ে মুখোমুখি হচ্ছে। এরপরও কোনো আলোচনা নেই। শেষ পর্যন্ত এমন এক শ্বাসরুদ্ধকর লড়াই হলো ফুটবলপ্রেমীরা বলতে বাধ্য হচ্ছেন এ ফাইনালের সঙ্গে কাতার বিশ্বকাপ ফাইনালের তুলনা চলে। আর এর নায়ক সুলেমান দিয়াবাতে। ফাইনাল জিতিয়ে দিয়াবাতে যেন মোহামেডানের মহানায়ক বনে গেছেন।
প্রথমার্ধে আবাহনী যখন ২-০ গোলে এগিয়ে ছিল তখন দর্শকরা ধরেই নিয়েছিলেন শিরোপা জেতাটা আবাহনীর সময়ের ব্যাপার। তবে কেউ কেউ বলেছিলেন, মোহামেডানের দিয়াবাতে বিশ্বকাপের এমবাপ্পের রূপ ধারণ করতে পারেন। এমন শক্তি নিয়ে আবাহনীর মতো দলের সঙ্গে ২-০ গোলে পিছিয়ে থেকে মোহামেডান ম্যাচ জিতবে তা কি সম্ভব?
হ্যাঁ, এ অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন মালির ফরোয়ার্ড দিয়াবাতে। দ্বিতীয়ার্ধে ১৫ মিনিটের মধ্যে ২টি অসাধারণ গোল করে মোহামেডানকে ম্যাচে ফেরান তিনি। এরপর আবাহনী ফের এগিয়ে যায়। অবিশ্বাস্য, অল্প সময়ের মধ্যে দিয়াবাতে তাও শোধ করে দিলেন। আর এতেই রেকর্ড গড়ে ফেললেন দিয়াবাতে। কেননা এর আগে কোনো ফাইনালে আবাহনীর বিপক্ষে কেউ হ্যাটট্রিক করতে পারেননি। এরপর আবার লিডও এনে দিলেন তিনি। এ আরেক রেকর্ড। যদিও শেষ পর্যন্ত ম্যাচটি টাইব্রেকারে গড়িয়েছিল। তবে মোহামেডান চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পেছনে একক অবদান দিয়াবাতেরই।
মোহামেডান চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় ফুটবল যেন সোনালি দিনে ফিরে যায়। বহুদিন পর দৈনিক পত্রিকার প্রথম পাতায় মোহামেডান-আবাহনীর ম্যাচ রিপোর্ট গুরুত্বসহকারে ছাপা হয়। বাসা, হোটেল, অফিস-আদালতে মোহামেডান-আবাহনীকে ঘিরে আলোচনার ঢেউ বয়ে যায়। আলোচনার সবকিছুই দিয়াবাতকে ঘিরে। টুর্নামেন্ট সেরা, ম্যাচ সেরা ও সর্বোচ্চ গোলদাতা সব পুরস্কারই ওঠে তাঁর হাতে। সাদা-কালোর দিয়াবাতে যেন রঙিন আলো। রবসন রবিনহো, ডরিয়েলটন গোমেজ, ড্যানিয়েল কলিনড্রেস, রাফায়েল আগাস্টো, এমফন উদো উঁচুমানের বিদেশি- এ নিয়ে সংশয় নেই।
এ ক্ষেত্রে ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার রসবসনের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয়। বসুন্ধরা কিংসের টানা চার শিরোপা জয়ের পেছনে তাঁর অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে। দলটি মোহামেডান হলেও তারা তো আর বসুন্ধরা কিংস বা আবাহনীর মতো শক্তিশালী নয়। সাদা-কালোর জার্সি পরে দিয়াবাতে যে অবদান রাখছেন তা কি যথেষ্ট নয়? পাঁচ মৌসুম লিগ ও ফেডারেশন কাপ মিলিয়ে তার গোল সংখ্যা ৬৮। যা অন্য বিদেশিদের হার মানিয়েছে। গত লিগে ছিলেন সর্বোচ্চ গোলদাতা। এবার ফেডারেশন কাপে। সত্যিই ব্যতিক্রম দিয়াবাতে।