শনিবার, ১১ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

জয়ে শেষটা রাঙানোর প্রত্যয়

সমর্থকদের প্রত্যাশা হতাশার বিশ্বকাপে অন্তত অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে মিশন শেষ করুক বাংলাদেশ! তাতে ২০২৫ সালের আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার যোগ্যতা তো অর্জন হবেই, সেই সঙ্গে বিশ্বকাপের ব্যর্থতার পাল্লাটাও খানিকটা হালকা হবে।

মেজবাহ্-উল-হক

জয়ে শেষটা রাঙানোর প্রত্যয়

মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের মেয়েরা পাকিস্তানকে রীতিমতো উড়িয়ে দিয়ে সিরিজ জিতেছে। দেশের ক্রিকেটে একের পর এক নেতিবাচক খবরে ঘনিয়ে আসা অন্ধকারে এটি যেন হঠাৎ আলোর ঝলকানি! মিরপুরের খুশির আবহটা কি বিস্তৃত পুণে পর্যন্ত?

হতাশার বিশ্বকাপে বাংলাদেশের শেষ ম্যাচ আজ। প্রতিপক্ষ বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল দল- অস্ট্রেলিয়া।

পুণের মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে এই বিশ্বকাপে একমাত্র দল হিসেবে তৃতীয় ম্যাচ খেলতে নামছে লাল-সবুজরা। আগের দুই ম্যাচের অভিজ্ঞতা মোটেও সুখকর নয়। স্বাগতিক ভারতের বিরুদ্ধে ৭ উইকেটে হার এবং নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৮ উইকেটে পরাজয়।

তবে পুণেতে দুই দুটি বড় হারের নেপথ্যে ব্যাটিং ব্যর্থতা দায়ী হলেও বাংলাদেশের বোলিং ছিল যাচ্ছেতাই! পেসাররা যেমন পুরোপুরি ব্যর্থ, তেমনি স্পিনাররাও আলাদা করে নজর কাড়তে পারেনি। দুই ম্যাচে তিন পেসার মিলে ৪০ ওভার বল করে মাত্র দুই উইকেট নিতে পেরেছিল। অন্যদিকে দুই ম্যাচ মিলে বাংলাদেশের ইনিংসে পতন ঘটা ১৭ উইকেটের মধ্যে ১২ উইকেটই শিকার করেছে প্রতিপক্ষের পেসাররা।

আর কোনো ম্যাচের পাওয়ার প্লেতে যদি পেসাররা উইকেট তুলে নিয়ে প্রতিপক্ষকে একটা ধাক্কা দিতে পারে সে ম্যাচে স্পিনারদের ভালো করা অনেক কঠিন। তবে ব্যাটাররাও আহামরি কিছু করে দেখাতে পারেনি পুণেতে। ভারতের বিরুদ্ধে লিটন-তামিমের ৯৩ রানের উদ্বোধনী জুটির পরও ২৫৬ রানেই আটকে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। আর নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে টপ অর্ডারে রীতিমতো ধস নামে। সাকিব-মুশফিক-মাহমুদুল্লাহর ধৈর্যশীল ব্যাটিংয়ে শেষ পর্যন্ত ২৪৫ রানের সংগ্রহ পায় টাইগাররা।

আগের দুই ম্যাচের অভিজ্ঞতা থেকে বাংলাদেশ খুব ভালো করেই জেনে গেছে পুণের উইকেটে ৩০০ প্লাস রান করতে না পারলে প্রতিপক্ষকে চ্যালেঞ্জ জানানো কঠিন। আর বোলিংয়ে পাওয়ার প্লেতে পেসাররা উইকেট নিতে না পারলে ৩০০ প্লাস স্কোর করেও জয় পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে।

পুণেতে খেলা আগের দুই ম্যাচের অভিজ্ঞতা নিয়েই আজ মাঠে নামছে বাংলাদেশ। ক্যাপ্টেন সাকিব আল হাসানকে পাচ্ছে না দল। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার দলে না থাকলে হিসাব এলোমেলো হয়ে যায়। একাদশ সাজানোই কঠিন হয়ে যায়। কারণ, সাকিব দলে একই দুই ক্রিকেটারের ভূমিকা পালন করেন- সেরা বোলার এবং ব্যাটসম্যান। তাই তার ঘাটতি পূরণ করা কঠিন বলেই মনে করেন কোচ চন্ডিকা হাতুরাসিংহে। ‘সাকিব না থাকলে একাদশ সাজানো কঠিন হয়ে যায়। তার বোলিংয়ের ঘাটতি পুষিয়ে নিতে একজন স্পিনার কিংবা পেসার নেওয়া যায়, সেক্ষেত্রে ব্যাটিংয়ে ঘাটতি থেকেই যায়!’

তবে সবচেয়ে বড় স্বস্তি এ ম্যাচে বাংলাদেশের আর কোনো চাপ নেই। বিশ্বকাপ থেকে বিদায়ঘণ্টা তো আগেই বেজে গেছে। আগের ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে পয়েন্ট তালিকার আটে থাকার সম্ভাবনাও অনেকটা নিশ্চিত করে ফেলেছে! আর আটে থাকলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলাও নিশ্চিত হয়ে যাবে।

তবে সমর্থকদের প্রত্যাশা হতাশার বিশ্বকাপে অন্তত অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে মিশন শেষ করুক বাংলাদেশ! তাতে ২০২৫ সালের আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার যোগ্যতা তো অর্জন হবেই, সেই সঙ্গে বিশ্বকাপের ব্যর্থতার পাল্লাটাও খানিকটা হালকা হবে।

সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, পুরোপুরি কেটে যাবে ক্রিকেটারদের ট্রমা! তিন জয়ে দর্শকের আক্ষেপও খানিকটা কমে যেতে পারে। আগেই সেমিফাইনালের টিকিট হাতে পাওয়ায় এই ম্যাচটি অস্ট্রেলিয়ার জন্য ‘ওয়ার্মআপ-ম্যাচ’ মনে হলেও বাংলাদেশের জন্য মহাগুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল দলটিকে হারিয়ে মিশন শেষ করতে পারার চেয়ে এই মুহূর্তে আর ভালো কিছু হতে পারে না!

জয়ের সৌরভেই শেষ হোক হতাশার বিশ্বকাপ!

 

সর্বশেষ খবর