বাংলাদেশ টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর প্রথম জয়ের দেখা পেতে অপেক্ষা করতে হয় চার বছরেরও বেশি সময়। ২০০৫ সালের জানুয়ারিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট ম্যাচ জয়ের পর হাবিবুল বাশারদের উল্লাস ছিল দেখার মতো। টাইগার ক্রিকেটারদের মতো পুরো দেশই সেই জয় উদযাপন করেছিল। ব্রেন্ডন টেইলর আর হ্যামিল্টন মাসাকাদজাদের জিম্বাবুয়ে তখন বেশ শক্তিশালী দল ছিল। চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত সেই টেস্টে প্রথম ইনিংসে ৪৮৮ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ২০৪ রান করে বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ে প্রথম ইনিংসে ৩১২ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ১৫৪ রান করে। বোলিংয়ে এনামুল হক জুনিয়র প্রথম ইনিংসে কোনো উইকেট না পেলেও দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরার পুরস্কার পান। যে কোনো কিছুর প্রথম ঘটনা সবারই মনে থাকে। শক্তিমত্তায় জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের বড় বড় শক্তিগুলোর সঙ্গে তুলনীয় নয়। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান কিংবা শ্রীলঙ্কার মতো দলের সঙ্গে তো তাদের তুলনা চলেই না। তারপরও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জয়টা বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসে মাইলফলক ছিল। এরপর একে একে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ইংল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানকে হারিয়েছে বাংলাদেশ।
টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে পুরনো দুই সদস্যের বিপক্ষেই জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। ২০১৬ সালের অক্টোবরে মিরপুর স্টেডিয়ামে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। সেই ম্যাচে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে ২২০ রানে অলআউট হয় টাইগাররা। তামিম ইকবালের সেঞ্চুরি (১০৪) ও মুমিনুল হকের হাফ সেঞ্চুরির (৬৬) পরও ইনিংসটা বড় করতে পারেনি বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসের পরই সমর্থকদের বেশ মন খারাপ ছিল। তবে ইংল্যান্ডও নিজেদের প্রথম ইনিংসে বিশেষ সুবিধা করতে পারেনি। মেহেদি হাসান মিরাজ (৬ উইকেট) আর তাইজুল ইসলামের (৩ উইকেট) ঘূর্ণিতে ২৪৪ রানে আটকে যায় ইংলিশরা। বাংলাদেশ নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে করে ২৯৬ রান। ইংল্যান্ডের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৭৩। উদ্বোধনী জুটি ভাঙতেই ১০০ রান করে ফেলে ইংল্যান্ড। এরপর মাত্র ৬৪ রানের মধ্যেই ইংল্যান্ডের ১০টি উইকেট শিকার করে বাংলাদেশ। মিরাজ ৬টি ও সাকিব ৪টি। কি দারুণ এক জয় ছিল।
বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাস নিয়ে সবচেয়ে বেশি সমালোচনা করেছে অস্ট্রেলিয়ানরা। সেই অস্ট্রেলিয়াকেই টেস্টে পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ দেয় টাইগাররা ২০১৭ সালের আগস্টে। মিরপুর স্টেডিয়ামে সেই ম্যাচে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশ করে ২৬০ রান। তামিম করেন ৭১ ও সাকিব ৮৪ রান। জবাবে অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংসে করে ২১৭ রান। সাকিব ৫টি ও মিরাজ ৩টি উইকেট নেন। দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ করে ২২১ রান। এবারও হাসে তামিমের ব্যাট (৭৮ রান)। অস্ট্রেলিয়ার লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৬৫। ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ১১২ রান করে দলকে জয়ের কাছাকাছি নিয়ে গিয়েছিলেন। তবে এবারেও সাকিব ম্যাজিক। তিনি ৫ উইকেট শিকার করেন। মিরাজ ২টি ও তাইজুল নেন ৩টি উইকেট। ২০ রানে জয়ের উল্লাসে মেতে ওঠে বাংলাদেশ।
নিউজিল্যান্ড কখনো বিশ্বকাপ জয় করেনি। তবে ক্রিকেট দুনিয়ায় তারা শীর্ষ সারির দল। এই দলের বিপক্ষে খেলতে নামলে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াকেও বেশ ভাবতে হয়। বিশেষ করে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে। বাংলাদেশ ২০২২ সালে এই নিউজিল্যান্ডকে তাদেরই মাটিতে (মাউন্ট মঙ্গানুই) টেস্টে হারিয়ে দেয়। নিউজিল্যান্ড প্রথম ইনিংসে ৩২৮ রানে অলআউট হয়। জবাবে বাংলাদেশ নিজেদের প্রথম ইনিংসে করে ৪৫৮ রান। জয় ৭৮, শান্ত ৬৪, মুমিনুল ৮৮ ও লিটন ৮৬ রান করেন। নিউজিল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংসে ১৬৯ রান করলে বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় মাত্র ৪০। ১৬.৫ ওভার খেলেই ২ উইকেটে ৪২ রান করে জয় তুলে নেয় টাইগাররা। এবাদত হোসেন প্রথম ইনিংসে ১টি ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৬টি উইকেট শিকার করে ম্যাচসেরা হন। নিউজিল্যান্ডের দুর্গ জয় করে টেস্ট ক্রিকেটে আরও এক ধাপ ওপরে তুলে নেয় বাংলাদেশ। এ ছাড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২০০৯ সালে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২০১৭ সালে কলম্বো টেস্ট জয়ের কথা কখনো ভুলবে না বাংলাদেশ।
পাকিস্তানের বিপক্ষে গত দুটি টেস্ট ম্যাচ জয়ের ঘটনা অতীতকেও ছাড়িয়ে যায়। অসাধারণ এ দুটি জয় দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে আলাদা স্থান নিয়ে থাকবে সব সময়।