আট বছর আগে ঘরের মাঠে অনূর্ধ্ব -১৯ যুব বিশ্বকাপে বাংলাদেশ যুবাদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মেহেদি হাসান মিরাজ। আসরে তার সহকারী ছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। পরিচিত পরিবেশে সেমিফাইনাল খেলেছিল যুবারা। নাজমুল এখন মূল দলের অধিনায়ক। মিরাজ সিনিয়র দলের অন্যতম ভরসা। সেটা ব্যাটিং হউক, কিংবা বোলিং। সাকিব আল হাসানের যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করছেন মিরাজ। গত এক-দুই বছরে পারফরম্যান্স জানাচ্ছে, সাকিবের জায়গা সহসাই পূরণ করবেন মেহেদি মিরাজ। ব্যাটিং ও বোলিং দিয়ে টেনে নিয়ে যাবেন দলকে। ভারত সিরিজকে সামনে রেখে টাইগারদের অনুশীলন শেষে গতকাল মিডিয়ার মুখোমুখিতে নিজের স্বপ্নের কথা জানান। ২৬ বছর বয়সি মিরাজ স্পষ্ট করে বলেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার হওয়াই তার স্বপ্ন। তিনি বলেন, ‘একটা দলে যদি দুজন অলরাউন্ডার খেলে, দলের জন্য অনেক সুবিধা থাকে। যেহেতু আমার ব্যাটিংটা এখন ভালো হচ্ছে। শুরুর দিকে আমার ব্যাটিংটা সেভাবে পায়নি দল। আমি বোলার হিসেবে খেলেছি। এখন অবদান রাখছি, খুব ভালো লাগছে। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার হতে অনুশীলন করতে হবে, কষ্ট করতে হবে। এটা এক-দুই বছরে সম্ভব নয়। লম্বা সময় ধরে ভালো খেলতে হবে। এখন যেভাবে চলছে এটা যদি লম্বা সময় ধরে রাখতে পারি, তাহলে আশা করি একদিন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার হতে পারব।’
২০১৬ সালে জাতীয় দলে অভিষেক। অভিষেক হয়েছিল একজন জেনুইন অফ স্পিনার হিসেবে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেক ইনিংসেই নিয়েছিলেন ৬ উইকেট। স্পেল ছিল ৩৯.৫-৭-৮০-৬। দ্বিতীয় ইনিংসে নিয়েছিলেন এক উইকেট। দ্বিতীয় টেস্টে পুরোপুরি বাজিমাত। দুই ইনিংসে নেন ১২ উইকেট। বাংলাদেশ জিতেছিল টেস্ট। প্রথম ইনিংসে মিরাজের স্পেল ছিল ২৮-২-৮২-৬ এবং দ্বিতীয় ইনিংসের স্পেল ২১.৩-২-৭৭-৬। এরপর থেকেই সাকিবের সঙ্গী হিসেবে খেলছেন এবং বহু ম্যাচ জিতিয়েছেন দলকে। যদিও আরেক বাঁ হাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম রয়েছেন। তার টেস্ট উইকেট সংখ্যা ১৯৫টি। পাকিস্তানে ঐতিহাসিক টেস্ট সিরিজ জয়ের স্কোয়াডে সাকিব, মিরাজ ও তাইজুল ছিলেন। কিন্তু তাইজুলের মাঠে নামা হয়নি। পাকিস্তানের বিপক্ষে ১০ উইকেট ও ৬ উইকেটের ঐতিহাসিক জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। প্রথম টেস্টে ৭৮ রান ও ৫ উইকেট নেন। দ্বিতীয় টেস্টে ৭৭ রান ও ৫ উইকেট নেন। দুই টেস্টে ১৫৫ রান ও ১০ উইকেট নিয়ে সিরিজসেরা হন মেহেদি মিরাজ।
শুধু পাকিস্তান সিরিজ নয়, চলতি বছর এখন পর্যন্ত ৪ টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। ৩টি জিতেছে এবং একটি হেরেছে চলতি বছর। চলতি বছরে ৪ টেস্টের ৬ ইনিংসে রান করেছেন ৩ হাফ সেঞ্চুরিতে ২৮৯ এবং উইকেট নিয়েছেন ১৫টি। সব মিলিয়ে ৪৫ টেস্টে রান ১৬২৫ এবং উইকেট ১৭৪টি। সাকিব শুধু টেস্টে সেরা ছিলেন না। একাধারে ওয়ানডে ও টি-২০ ক্রিকেটেও বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। সাকিবের পদাঙ্ক অনুসরণ করে ওয়ানডে ও টি-২০ ফরম্যাটেও সেরা হতে চান মিরাজ। ৯৭ ওয়ানডেতে রান ১৩৩১ ও উইকেট ১০৬টি। ২৫টি টি-২০ ম্যাচে রান ২৪৮ ও উইকেট ১৩টি।
সাকিবের সঙ্গে খেলছেন। ৩৭ বছর বয়সি বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের সঙ্গে খেলে প্রতিদিন শিখছেন। শুরুতে ছিলেন একজন অফ স্পিনার। এখন পরিণত ব্যাটারও। প্রায় প্রতি ম্যাচে রান করছেন। চলতি বছর তিনটি হাফ সেঞ্চুরি করেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে ৭৭ ও ৭৮ রান করেন। এ ছাড়া সিলেটে ৮১ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। দিন দিন ম্যাচ উইনার হয়ে উঠছেন মিরাজ। গত বছর সিলেটে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ী টেস্টে খেলেছিলেন ৫০ রানের অপরাজিত ইনিংস। সাকিব দেশের সবচেয়ে বড় তারকা। তারপরও কোনো কোনো ম্যাচে সাকিবকে পেছনে ফেলেন মিরাজ। একটা অলিখিত প্রতিদ্বন্দ্বিতাও রয়েছে দুজনের মধ্যে। ছন্দে থাকা মিরাজ বলেন, ‘এখন আমি ও সাকিব ভাই দুজনই খেলছি। দুজনই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছি। সবার একটা পর্যায়ে অবসরে যেতে হয়। সব দলেই রয়েছে বদলি ক্রিকেটারের আসা যাওয়া। সাকিব ভাই যখন খেলবেন না, তখন হয়তো আমার দায়িত্বটা আরও গুরুত্বপূর্ণ হবে দলের জন্য।’
দলের অন্যতম স্ট্রাইক স্পিনার। ব্যাটিং করেন ৮ নম্বরে। আরও ওপরে ব্যাটিং করতে চান মিরাজ। তিনি বলেন, ‘আট নম্বরের ব্যাটার হতে চাই না। আট নম্বর ব্যাটিং করা অনেক চাপের। সত্যি বলতে, আট নম্বরের সেরা খেলোয়াড় হতে চাই না। ওপরের দিকের সেরা খেলোয়াড় হতে চাই।’