উদ্বোধনের অপেক্ষায় দ্বীপজেলা ভোলার ঐতিহ্যবাহী গজনবী স্টেডিয়াম। ষাটের দশকে নির্মিত গজনবী স্টেডিয়াম সময়ের চাহিদা অনুযায়ী বর্তমানে নতুন সাজে সজ্জিত হয়ে উঠেছে। আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি বিশাল অবকাঠামোর সমন্বয়ে এটি এখন ভোলার অন্যতম দর্শনীয় স্থাপনা হয়ে উঠেছে। দেশের ক্রীড়াঙ্গনে এই স্টেডিয়াম দ্বীপজেলা ভোলাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ভোলার গজনবী স্টেডিয়াম, যেটি শুধু একটি ক্রীড়ামঞ্চ নয়, বরং এই দ্বীপ জেলার ক্রীড়াপ্রেমীদের স্বপ্নের প্রতীক। স্বাধীনতা-পূর্ব ১৯৬২ সালে তৎকালীন ভোলা মহকুমা শহরের হেলিপ্যাড মাঠের পাশে ফসলের মাঠ ভোলা স্টেডিয়ামের যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে ১৯৯২-৯৩ সালে দুই হাজার দর্শক আসনের দুটি পৃথক গ্যালারিসহ এটি পূর্ণাঙ্গ একটি স্টেডিয়ামে রূপ লাভ করে। নামকরণ করা হয় জেলার কৃতী ফুটবলার এস এম গজনবীর নামে।
স্বাধীনতা-উত্তর ভোলার এই গজনবী স্টেডিয়াম ঘিরে জেলার ক্রীড়াঙ্গনে ব্যাপক সাড়া জেগেছিল। এখানে নিয়মিত ফুটবল, কাবাডি, হ্যান্ডবল, ভলিবলের মতো প্রতিযোগিতার পাশাপাশি জাতীয় দিবসের নানান অনুষ্ঠানের আয়োজন হতো। এই মাঠের খেলোয়াড়রা আঞ্চলিক এমনকি জাতীয় পর্যায়েও আলো ছড়িয়েছে। মাঝখানে নানান সমস্যা আর সংকটে ঝিমিয়ে পড়েছিল ভোলার ক্রীড়াঙ্গন।
ভোলা জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক গোমাল মোস্তফা জানান, সর্বশেষ ২০২১-২২ অর্থবছরে ‘ভোলা গজনবী স্টেডিয়ামের আধুনিকীকরণ, ইনডোর স্টেডিয়াম ও সুইমিং পুল নির্মাণ’ এই প্রকল্পের আওতায় প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা ব্যায়ে স্টেডিয়ামটির আধুনিকায়নের কাজ শুরু হয়। আমূল পরিবর্তন আনা হয় এই মাঠের। এখন ১৬ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার গ্যালারি আর ৩০০ জনের বিশেষ ভিআইপি গ্যালারি নিয়ে সেজে উঠেছে। চারতলা বিশিষ্ট নব নির্মিত মূল ভবনে রয়েছে অফিস কক্ষ, আধুনিক ড্রেসিং রুম, খেলোয়াড়দের আবাসন, ডাইনিং ও কনফারেন্স রুম। এ ছাড়া তৈরি হয়েছে নেট প্রাকটিস এরিয়া, বাস্কেটবল গ্রাউন্ড এবং একটি অত্যাধুনিক ইনডোর স্টেডিয়াম। তিনি জানান, বরিশাল স্টেডিয়াম ছাড়া এই বিভাগে এত সুন্দর মাঠ আর একটিও নেই।
সার্বিক নিরাপত্তা এবং দর্শকদের সুবিধার জন্য তৈরি হয়েছে ১২টি প্রশস্ত গেট। চারপাশের সৌন্দর্যবর্ধন এবং সুবিন্যস্ত অবকাঠামো এই স্টেডিয়ামকে ভোলাবাসীর গর্বে পরিণত করেছে।
সাবেক কৃতী ফুটবলার আবদুল মালেক এবং রেফরি পবিত্র কুমার জানান, তাদের সময়ে এত সুযোগ ছিল না। তারা নানান প্রতিকূলতার মধ্য দিয়েও ভোলার ক্রীড়াঙ্গনকে আলোকিত করেছেন। এখন যেহেতু পূর্ণাঙ্গ একটি আধুনিক স্টেডিয়াম হয়েছে আশা করা যাচ্ছে, এখান থেকে জাতীয় মানের খেলোয়ার সৃষ্টি হবে।
অত্যাধুনিক এই মাঠের রক্ষণাবেক্ষণ এবং দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডের জন্য দুজন স্টাফ রয়েছেন। অফিস সহকারী পদে দায়িত্ব পালন করছেন সাবেক ফুটবলের শাহাবুদ্দিন সাবু এবং মাঠকর্মীর দায়িত্ব পালন করছেন আবুল হোসেন আবু। তবে এত বিশাল কর্মযজ্ঞের সামাল দিতে গিয়ে হিমসিম খাচ্ছেন এই দুই স্টাফ। তাদের দাবি ইনডোর, আউটডোর এবং সুইমিংপুল সব মিলিয়ে এত বিশাল কর্মযজ্ঞের আনজাম দিতে এখানে কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ জন স্টাফ প্রয়োজন।
জেলা ক্রীড়া অফিসার মো. সেফায়াত হোসেন জানান, চার বছর ধরে এই মাঠ সংস্কারের কাজ হয়েছে। সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকে আধুনিক মানের একটি স্টেডিয়াম হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। ভোলার এই গজনবী স্টেডিয়াম এখন শুধু ভোলার ক্রীড়াঙ্গনের প্রাণকেন্দ্র নয়, এটি ভবিষ্যতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আয়োজনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাঠ হয়ে উঠতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন জেলার ক্রীড়াঙ্গন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। বিশেষ করে জেলার যুব সমাজকে মাদকসহ বিভিন্ন অসামাজিক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এই আধুনিক স্টেডিয়াম। এমনটাই প্রত্যাশা ভোলার সাবেক ও বর্তমান ক্রীড়াবিদসহ জেলাবাসীর।