রোনালদিনহো, রবিনহো এবং কাকা। নতুন প্রজন্মে ব্রাজিলিয়ান ফুটবলের অন্যতম তিন নায়ক। রোনালদিনহো ও কাকা ছিলেন ২০০২ বিশ্বকাপজয়ী ব্রাজিল দলের সদস্য। কাকার তেমন অবদান না থাকলেও স্কলারির সেই দলে রোনালদিনহো ছিলেন প্রধান তারকাদের একজন। রোনালদো যুগের পর রবিনহো একসময় ব্রাজিল দলের অন্যতম তারকা হয়ে ওঠেন। তিনজন মিলে প্রায় ৩০০ ম্যাচ খেলেছেন জাতীয় দলের জার্সি গায়ে। রোনালদিনহো ৯৮ ম্যাচে করেছেন ৩৩ গোল। রবিনহো ৯২ ম্যাচে করেছেন ২৭ গোল। কাকা খেলেছেন ৮৭ ম্যাচ (২৯ গোল)। গত দশকে ব্রাজিলের সেরা এ তিন তারকার স্থান হলো না নিজেদের দেশের বিশ্বকাপ দলে। বুধবার ব্রাজিলের কোচ লুই ফিলিপ স্কলারি বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করেছেন। সেখানে নেই এ তিন তারকার নাম। গত বিশ্বকাপে রোনালদিনহো না খেললেও খেলেছিলেন কাকা ও রবিনহো। এবার এ দুজনও বাদ পড়লেন। এর অর্থ, নিজেদের দেশে বিশ্বকাপ খেলা হচ্ছে না দুবারের ফিফা বর্ষসেরা রোনালদিনহো (২০০৪ ও ২০০৫) ও একবারের ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলার কাকার (২০০৭)। দর্শক হয়েই বসে থাকতে হবে নিজের দেশে বিশ্বকাপের মাঠে।
ব্রাজিলের পঞ্চম বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম কারিগর রোনালদিনহো। রোনালদো-রিভালদো-রোনালদিনহোর পায়ে ফুটবল বিশ্ব আরও একবার প্রত্যক্ষ করেছিল 'জোগো বনিতো'। কী দুর্দান্ত প্রতাপেই না তারা জয় করেছিলেন ২০০২ বিশ্বকাপের সোনার ট্রফি। রোনালদো ও রিভালদো অনেক আগেই ফুটবলকে বিদায় জানিয়েছেন। রোনালদিনহো এবং কাকার একসময়কার সতীর্থ রোনালদো এখন আয়োজক হিসেবে বিশ্বকাপের মঞ্চে আবির্ভূত হয়েছেন। তবে রোনালদিনহোরা নেই কোথাও। বার্সেলোনা এবং এসি মিলানের সাবেক এই তারকা এখন ৩৪ বছরের বয়োবৃদ্ধ ফুটবলার। কাকা ৩২ ও রবিনহো ৩০ বছরের। রাশিয়া বিশ্বকাপে এ তিনজনের উপস্থিতি কল্পনা করাও কষ্টকর। তাহলে কি বিশ্বকাপে খেলার আশা একেবারেই শেষ এ তিন তারকার!
একসময় লুই ফিলিপ স্কলারির অন্যতম পছন্দ ছিলেন রোনালদিনহো ও কাকা। সেই স্কলারির দলেই এখন তারা অনাহূত। ব্রাজিলকে ষষ্ঠ বিশ্বকাপ এনে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামা স্কলারি অনেক আগেই অবশ্য আবেগের রাশটা টেনে নিয়েছেন। বাস্তবতা বিচার করেই দল ঘোষণা করেছেন তিনি। তবে এখনো তাদের সুযোগ একেবারে শেষ হয়ে গেছে বলে ভাবা ঠিক হবে না। ২৩ সদস্যের চূড়ান্ত দলের কোনো তারকা যদি ইনজুরিতে আক্রান্ত হন তবে স্কলারিকে তাকাতে হবে অভিজ্ঞদের দিকেই। সে ক্ষেত্রে কাকা-রবিনহো-রোনালদিনহোরা দলে স্থান পেতেও পারেন। বিশ্বকাপ চলাকালে যে কোনো সময় ম্যাচের ২৪ ঘণ্টা আগে ইনজুরির কারণে ফুটবলার পরিবর্তন করার অধিকার আছে বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া দলগুলোর। সে অধিকার স্কলারি কতটা কাজে লাগাবেন তা অবশ্য বলা মুশকিল। ২৩ সদস্যের চূড়ান্ত দলের কেউ ইনজুরিতে আক্রান্ত হবেন, এটা যেমন কষ্টকল্পনা তেমনি তিন তারকার দলে স্থান পাওয়াও। নিজ দেশের বিশ্বকাপে ব্রাজিলকে শিরোপা উপহার দিতে বদ্ধপরিকর নেইমার। তরুণ এবং অভিজ্ঞদের নিয়ে একটা দুর্দান্ত দলই গঠন করেছেন স্কলারি। নেইমার, ওসকার, উইলিয়াম ও পলিনহোদের মতো তরুণরা যেমন আছেন তেমনি এ দলে দানি আলভেস, থিয়াগো সিলভা, হুলিও সিজার, ম্যাঙ্ওয়েলদের মতো অভিজ্ঞরাও আছেন। তরুণ-অভিজ্ঞদের নিয়ে গড়া এই দলে তারকা বলতে একমাত্র নেইমারই। ফিফা কনফেডারেশন্স কাপের সেরা তারকার ওপর দর্শকদের একটা চাপ তো থাকবেই। এখন দেখার বিষয় রোনালদিনহো-কাকা-রবিনহোবিহীন দলটার পুরো চাপ একা বইতে পারেন কি না এই তরুণ তারকা। আরও একবার কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে নোঙর ফেলতে পারেন কি না লুই ফিলিপ স্কলারি।