দেহে অধিকাংশ রোগই ছড়ায় পেট থেকে। কারণ, এখানেই শরীরের প্রয়োজনীয় অধিকাংশ যন্ত্রাংশের অবস্থিতি। বিশেষ করে আমাদের খাবার পাকস্থলীর মাধ্যমে সমগ্র দেহে ছড়িয়ে পড়ে। শরীরের বিষাক্ত পানিগুলো কিডনির মাধ্যমে প্রস্রাব আকারে বের হয়ে আসে। এমনই আরও অসংখ্য যন্ত্র রয়েছে, যেগুলো শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য প্রতিনিয়ত কাজ করে চলছে। পেটের ভেতর অবস্থিত এসব যন্ত্র কিংবা যন্ত্রাংস ঠিকভাবে কাজ না করলেই বিপত্তি দেখা দেয়। পেটের যে কোনো রোগ থেকে মুক্তি পেতে যোগাসনে চমৎকার এক ব্যায়াম রয়েছে। তৌলাঙ্গাসন এমনই এক ব্যায়াম। এ আসনের ফলে পেটের যে কোনো রোগ থেকেই মুক্ত থাকা যায়। আসন অবস্থায় তুলাদণ্ডের মতো দেহের দুই অংশকে সমভরে স্থাপন করতে হয় বলে এ আসনকে তৌলাঙ্গাসন বলা হয়। তৌলাঙ্গাসনের জন্য প্রথমে পদ্মাসনে বসে হাত দুটি দেহের দুই পাশে রেখে শুয়ে পড়তে হবে। হাতের তালুদ্বয় নিতম্বের নিচে চিৎ হয়ে থাকবে। এবার কনুইয়ের ওপর ভর দিয়ে আস্তে আস্তে বুক ও পা সমভাবে মাটি থেকে ওপরে তুলতে হবে। হাতের কনুই মেঝের সঙ্গে প্রায় ৯০ ডিগ্রি কোণ করে লেগে থাকবে। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে বিশ থেকে ত্রিশ সেকেন্ড এ অবস্থায় থাকতে হবে। আসনটি ২-৩ বার অভ্যাস করে প্রয়োজন মতো শবাসনে বিশ্রাম নিন। আসনটিতে দেহের সব অংশের কম-বেশি উপকার হয়, বিশেষ করে পেটের মাংসপেশি সবল হয়। এ আসন অভ্যাসে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় ও হজমশক্তি বৃদ্ধি পায়। পেটে প্রচণ্ড চাপ পড়ে বলে পেটের যাবতীয় গ্রন্থি ও পেশি সবল ও সক্রিয় হয়। আমাদের দেহের বেশির ভাগ রোগ পেট থেকে আসে। যেমন পেটের ভেতরে দুই পাশে যে দুটি বৃক্ক বা কিডনি আছে, তাদের কাজ রক্ত থেকে অপ্রয়োজনীয় জলীয় অংশ এবং যা কিছু শরীরের জন্য অপ্রয়োজনীয় তা মূত্ররূপে দেহ থেকে বের করে দেওয়া। এ আসনে কিডনি সুস্থ ও সক্রিয় থাকলে দেহে অপ্রয়োজনীয় এবং ক্ষতিকারক কোনো কিছু শরীরে থাকতে পারে না। এড্রিনাল গ্রন্থি সক্রিয় রাখতে আসনটি বিশেষ কার্যকরী। মেয়েদের সন্তান প্রসবহেতু বা অন্য কোনো কারণে পেট ও তলপেটের শিথিলতা দূর করে পূর্বাবস্থা ফিরিয়ে আনতে আসনটি বিশেষভাবে সাহায্য করে।
আসনটি অভ্যাস রাখলে ছেলেদের হার্নিয়া জাতীয় রোগ কোনো দিন হয় না। আসনটির সঙ্গে পদহস্তাসন বা শশঙ্গাসন অভ্যাস রাখলে বাত, সায়টিকা, লাম্বার স্পন্ডিলোসিস, স্লিপড ডিস্ক জাতীয় রোগ কোনো দিন হতে পারে না। এ ছাড়া এই আসন অভ্যাসের ফলে দেহের কোথাও অপ্রয়োজনীয় চর্বি জমতে পারে না এবং সেই সঙ্গে হৃদযন্ত্র ও ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।