প্রাইম ব্যাংক দক্ষিণাঞ্চলের কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন ফাইনালের আগেই বলেছিলেন, দুই দলের ব্যবধান গড়ে দিতে পারেন বাঁ হাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম। ভুল বলেননি সুজন। গতকাল বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগের (বিসিএল) ফাইনালের প্রথম দিনটা নিজের করে নিয়েছেন বিসিবি উত্তরাঞ্চলের তাইজুল। তার ঘূর্ণিজাদুতে মোহাবিষ্ট দক্ষিণাঞ্চল শেষ ৭ উইকেট হারায় ৫৮ রানে। তাইজুল ৮৬ রানে নেন ৮ উইকেট। তার ঘূর্ণিতেই দক্ষিণাঞ্চলের প্রথম ইনিংস থমকে দাঁড়ায় ২৭১ রানে। জবাবে বিনা উইকেটে ১৫ রান তুলে দিন পার করেছে উত্তরাঞ্চল।
দিনটা হতে পারতো সৌম্য সরকার কিংবা শুভাগত হোমের। কিংবা দক্ষিণাঞ্চলের। চা বিরতি পর্যন্ত এমনটাই ছিল ম্যাচের চিত্র। কিন্তু চা বিরতির পর তাইজুল বোলিংয়ে আসতেই পাল্টে যায় চিত্রপট। দক্ষিণাঞ্চলের সব প্রতিরোধ গুঁড়িয়ে দেন এই বাঁ হাতি স্পিনার। তার সঙ্গী ছিলেন আরেক বাঁ হাতি স্পিনার সাঞ্জামুল ইসলাম। পাঁচ দিনের ফাইনালে টস জিতে উত্তরাঞ্চলের অধিনায়ক নাসির হোসেন ব্যাটিংয়ে আমন্ত্রণ জানান দক্ষিণাঞ্চলকে। উইকেটের চরিত্রকে কাজে লাগাতে উত্তরাঞ্চল একাদশ সাজায় দুই পেসার নিয়ে। শুভাশীষ রায়ের সঙ্গে বোলিং ওপেন করেন ফরহাদ রেজা। নতুন বলে দুই পেসারকে বেশ ভালোভাবেই সামাল দেন দক্ষিণাঞ্চলের দুই ওপেনার ইমরুল কায়েশ ও এনামুল হক বিজয়। তাইজুল আসার পর ভেঙে যায় উদ্বোধনী জুটি। দলীয় ৩৯ রানে এনামুলকে সাজঘরে ফেরত পাঠান তাইজুল। ৫৮ রানে প্যাভিলিয়নমুখী হন ইমরুল। ৯১ রানে তৃতীয় উইকেট তুলে নেন তাইজুল। তিন উইকেট হারানোর পর প্রতিরোধ গড়ে তোলেন দক্ষিণাঞ্চলের দুই ব্যাটসম্যান সৌম্য ও শুভাগত। চতুর্থ উইকেট জুটিতে দুজনে ১২২ রান যোগ করে দলকে শক্ত অবস্থান দেন। দুজনেই তুলে নেন হাফসেঞ্চুরি। দলীয় ২১৩ রানে আবারও আঘাত হানেন তাইজুল। শুভাগতকে ব্যক্তিগত ৬০ রানে নাঈম ইসলামের তালুবন্দী করেন। শুভাগতের বিদায়ের পর থেকেই তালগোল হারিয়ে ফেলেন দক্ষিণাঞ্চলের ব্যাটসম্যানরা। ২২৬ রানে তাইবুরকে বোকা বানিয়ে আউট করেন তাইজুল। এর পর প্রাইম ব্যাংকের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে প্রতিযোগিতা লেগে যায় সাজঘরে ফেরার। প্রাইমের সবগুলো উইকেটের আশি শতাংশই তুলে নেন তাইজুল। প্রচণ্ড গরমে চার স্পেলে ৩১ ওভার বোলিং করেন এই বাঁ হাতি স্পিনার। ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করে ৮৬ রানে নেন ৮ উইকেট। তাইজুলের দিনে ৭০ রানের প্রত্যয়ী ইনিংস খেলেন সৌম্য সরকার।
বিসিএলে এবার টানা পাঁচ ইনিংসে পাঁচ বা ততোধিক উইকেট নিয়েছেন তাইজুল। যা বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে সেরা। এর আগে কোনো বোলারের টানা পাঁচ ইনিংসে পাঁচ বা ততোধিক উইকেট নেওয়ার রেকর্ড নেই। বিসিএলের এবারের আসরে প্রথম ম্যাচে দক্ষিণাঞ্চলের বিপক্ষে ২৫ ওভারে ৯৭ রান খরচে উইকেট নিয়েছিলেন ৪টি। দ্বিতীয় ম্যাচে ইসলামী ব্যাংক পূর্বাঞ্চলের বিপক্ষে জাদু দেখান বল হাতে। প্রথম ইনিংসে ৩৩ ওভার বোলিং করে ৭১ রানে নেন ৭ উইকেট। দ্বিতীয় ইনিংসে সেই ধারাবাহিকতা ধরে রেখে ৫১ রানে নেন ৫ উইকেট। সব মিলিয়ে ১২২ রানে ১২ উইকেট। তার প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ক্যারিয়ারে এটাই সেরা বোলিং। দুই রাউন্ড হওয়ার পর শ্রীলঙ্কা সিরিজ, এশিয়া কাপ ও টি-২০ বিশ্বকাপের জন্য বন্ধ থাকে বিসিএল। দেশের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট আসর আবারও শুরু হয় ৩ মে। ওয়ালটন কেন্দ্রীয় অঞ্চলের বিপক্ষে আবারও বল হাতে জাদু দেখান। দুই ইনিংস মিলিয়ে নেন ১১ উইকেট ১৭৭ রানে। তার বোলিংয়েই ফাইনালে জায়গা করে নেয় উত্তরাঞ্চল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
প্রাইম ব্যাংক দক্ষিণাঞ্চল: প্রথম ইনিংস, ২৭১/১০, ৮৩ ওভার ( ইমরুল কায়েশ ৩৬, এনামুল হক বিজয় ৯, সৌম্য সরকার ৭০, মো. মিথুন ২৫, শুভাগত হোম ৬০, তাইবুর পারভেজ ৩৯, জিয়াউর রহমান ২১*। তাইজুল ইসলাম ৮/৮৬, সাঞ্জামুল ইসলাম ২/৪৬)।
বিসিবি উত্তরাঞ্চল : প্রথম ইনিংস, ১৫/০, ৮ ওভার (জুনায়েদ সিদ্দিকী ১১)।