বিশ্বকাপ ফুটবলে বাংলাদেশ খেলছে না। তাই বলে উত্তেজনা কম থাকবে না। ক্রীড়ামোদীদের মধ্যে এখনই শুরু হয়ে গেছে নানারকম হিসাব-নিকাশ। দুনিয়াকাঁপানো এ আসর এলে বাংলাদেশ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনাকে সমর্থন দিতে রীতিমতো উন্মাদনা দেখা দেয়। একসময় অবশ্য পেলের কারণে বাংলাদেশ তো বটেই উপমহাদেশে ব্রাজিলেরই সমর্থক ছিল বেশি। কিন্তু ১৯৮৬ সালের পর থেকে এ দৃশ্য পাল্টে যায়। দিয়াগো ম্যারাডোনার নেতৃত্বে আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জেতার পরই বাংলাদেশ যেন আর্জেন্টিনায় পরিণত হয়ে যায়। অনেক তারকার দেখা মিলেছিল বা মিলছে। কিন্তু ম্যারাডোনার জাদুময় খেলা দেখে বাংলাদেশ এতটা মুগ্ধ হয়ে যায় যে তুলনা করলে দেখা যাবে বাংলাদেশে এখন আর্জেন্টিনার সমর্থক সংখ্যায় বেশি। ১৯৯৪ সালের পর বিশ্বকাপে ম্যারাডোনা আর খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে না নামলেও সাপোর্ট কমছে না বরং দিন দিন বেড়েই চলেছে। এর পরই ব্রাজিলকে নিয়ে উন্মাদনায় মেতে ওঠে বাংলাদেশ। অন্য দেশের সমর্থক একেবারে যে নেই বলা যাবে না। কিন্তু আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের ধারেকাছেও নয় সেসব। দুই দেশ জিতলে যেমন পুরো দেশ আনন্দে ভাসতে থাকে, তেমনিভাবে বিদায় নিলে বাংলাদেশের বিশ্বকাপও শেষ হয়ে যায়।
পাকিস্তান আমলেও বিশ্বকাপের আকর্ষণ ছিল। তবে ১৯৭৪ ও '৭৮ সালের ফাইনাল ম্যাচ বেতবুনিয়া উপকেন্দ্রের মাধ্যমে টিভিতে সরাসরি সম্প্রচার করায় বাংলাদেশ নতুন মাত্রায় বিশ্বকাপের উন্মাদনা যোগ দেয়। ১৯৮২ সাল থেকে তো প্রায় প্রতিটি ম্যাচ সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে। এখন স্যাটেলাইট চ্যানেল থাকায় অবস্থা এমন হয়েছে যে দর্শকরা যেন মাঠে বসেই বিশ্বকাপ উপভোগ করছেন। তবে সংখ্যায় একেবারে কম হলেও বাংলাদেশের দর্শকরা গ্যালারিতে বসেও বিশ্বকাপ দেখছেন। বিশ্বকাপ বলতে বাংলাদেশের দৌড় এখন প্রাক-বাছাই পর্ব পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। আগে বাছাই পর্ব খেললেও পারফরম্যান্সের কারণে বাদ পড়েছে। সে ক্ষেত্রে চূড়ান্ত পর্বে আদৌ খেলতে পারবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। যাক না খেলুক, সাধারণ দর্শকের মতো বাংলাদেশের অনেক তারকা ফুটবলারের বিশ্বকাপে দেখা মিলছে। প্রশ্ন উঠতে পারে কীভাবে সম্ভব? হ্যাঁ, বাংলাদেশের ফুটবলারদের বিশ্বকাপে মাঠে নামা সম্ভব না হলেও তারকারা বেশ আগে থেকেই স্বচক্ষে দুনিয়াকাঁপানো লড়াই উপভোগ করছেন। ফিফার পূর্ণ সদস্য বলেই বাংলাদেশ ১৯৮৬ সাল থেকে বিশ্বকাপের টিকিট পাচ্ছে। এ টিকিট নিয়েই মেক্সিকো, ইতালি, আমেরিকা, ফ্রান্স, জাপান-কোরিয়া, জার্মানি ও সর্বশেষ দক্ষিণ আফ্রিকায় বিশ্বকাপ দেখে এসেছেন তারকা ফুটবলাররা। এবারও ২০তম বিশ্বকাপ আসর দেখতে বেশ কজন তারকা ফুটবলার ব্রাজিলে উড়ে যাচ্ছেন। বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ জানান, ফেডারেশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি সালাম মুর্শেদী, সহ-সভাপতি বাদল রায়, নির্বাহী সদস্য ইলিয়াস ছাড়াও জাতীয় দলের সাবেক নন্দিত ফুটবলার আশরাফ উদ্দিন আহমেদ চুন্নু গোলাম রব্বানী হেলাল ও সম্রাট হোসেন এমিলির বিশ্বকাপ দেখার কথা রয়েছে। এ ছাড়া বিশ্বকাপের আগে ফিফার কংগ্রেসে যোগ দিতে বাফুফের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন, দুই সহ-সভাপতি নাবিল আহমেদ ও তারিক আউয়াল ব্রাজিলে যাচ্ছেন। ১০-১১ জুন দুই দিনব্যাপী কংগ্রেস শেষে তিনজনই উদ্বোধনীসহ বিশ্বকাপের বেশ কটি ম্যাচ দেখতে পারেন।