ব্রাজিলের সঙ্গে আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি দিয়েগো ম্যারাডোনার সম্পর্কটা কখনোই মধুর ছিল না। দা-কুড়াল সম্পর্কের নেপথ্যে ছিলেন ফুটবল সম্রাট পেলে! ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি মাঝেমধ্যেই ম্যারাডোনাকে উদ্দেশ করে খোঁচা দিতেন। আর্জেন্টাইন সুপারস্টারও ছাড় দিতেন না। মিডিয়াও দুই কিংবদন্তির বাকযুদ্ধকে অত্যধিক গুরুত্ব দিয়েই প্রকাশ করত। পেলের প্রতি তীর ছুড়তে গিয়ে অনেকবারই ব্রাজিলের প্রতি বিদ্বেষমূলক কথা বলেছেন ম্যারাডোনা। আর এবার সেই ব্রাজিলেই খেলা দেখতে যাচ্ছেন আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি! সত্যিই কী ব্রাজিলে যাচ্ছেন ম্যারাডোনা? ভক্তদের বিশ্বাসই হচ্ছে না। আবার অবিশ্বাস করারও উপায় নেই। কেননা বিশ্বকাপে প্রিয় আর্জেন্টিনাকে সমর্থন দিতে ম্যারাডোনা সশরীরে গ্যালারিতে উপস্থিত হবেন না, তাই কি হয়!
বুয়েন্স আয়ার্সে ম্যারাডোনার এক ভক্ত দাবি করেছেন, ব্রাজিলের পক্ষ থেকে এবার যেভাবে বিদ্বেষমূলক প্রচারণা চালানো হচ্ছে, তাতে ব্রাজিলে নাও যেতে পারেন আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি। কয়েক দিন আগেই আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচার হয়েছে, আর্জেন্টিনার ভক্তদের ঠেকাতে নাকি ব্রাজিল সরকার প্রস্তুত। তাছাড়া আর্জেন্টিনার উগ্র সমর্থকরা নাকি ইতিমধ্যে ব্রাজিলে অবৈধ অনুপ্রবেশ শুরু করেছেন। মিডিয়ায় এমন প্রতিবেদনের পর বুয়েন্স আয়ার্সের রাস্তায় মিছিল পর্যন্ত হয়েছে। ব্রাজিলকে এমন প্রচারণা বন্ধ করারও আহ্বান জানানো হয়েছে। ওই ভক্ত দাবি করেছেন, যদি সত্যি সত্যি ব্রাজিল এমন বিদ্বেষমূলক প্রচারণা বন্ধ না করে তাহলে আর্জেন্টিনা ভক্তরা ব্রাজিল বিশ্বকাপকে বর্জন করবে। আর ভক্তরা যদি ব্রাজিলে না যায় তখন ম্যারাডোনাও ব্রাজিল বিশ্বকাপকে বয়কট করতে পারেন বলে ওই ভক্ত মনে করেন।
রোমেরো নামে আরেক আর্জেন্টাইন সমর্থক বলেন, 'ব্রাজিল যে প্রচারণাই চালাক না কেন, আমি আর্জেন্টিনার খেলা দেখতে যাবই। প্রিয় দলকে আমি মাঠে গিয়েই উৎসাহ দেব। তাছাড়া ব্রাজিল তো চাচ্ছেই আর্জেন্টাইন সমর্থকরা যাতে ব্রাজিলে প্রবেশ না করে। তাদের প্রচারণায় ক্ষুব্ধ হয়ে যদি না যাই সেটা তো ওদেরই জয় হবে। তাই সবাইকে বলব, কে কি বলল তাতে মন খারাপ না করে আমরা বরং আর্জেন্টিনাকে সমর্থন জানাতে ব্রাজিলে যাই।' ওই সমর্থক ব্রাজিলকে উদ্দেশ করে বলেন, 'নিজেদের সাধারণ জনগণকে আগে ঠেকান। তারা যেভাবে দিন দিন সংঘবদ্ধ হচ্ছে, শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপই ভণ্ডুল হয়ে যায় কিনা কে জানে। আমাদের নিয়ে মাথা না ঘামালেও চলবে। আপনাদের মতো আমরা (আর্জেন্টাইনরা) সংঘর্ষ পছন্দ করি না।'
বিশ্বকাপের আর ২৫ দিন বাকি। চারদিকে দামামা বাজতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে আর্জেন্টিনার ফুটবল দলও ঘোষণা করা হয়েছে। কোচ আলেসান্দ্রো সাবেলার দল থেকে বাদ পড়েছেন ম্যারাডোনার প্রিয় ফুটবলার কার্লোস তেভেজ। অন্যায়ভাবে লিভারপুল তারকাকে বাদ দেওয়ার প্রতিবাদে আর্জেন্টিনায় বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। কোথাও কোথাও সাবেলার কুশপুত্তলিকাও দাহ করা হয়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারে এখনো মুখ খোলেননি ম্যারাডোনা। তিনি আর্জেন্টিনা দল নিয়ে কোনো মন্তব্যও করেননি। দলের ভালো মন্দ কোনো বিষয় নিয়েও কথা বলেননি ৮৬-তে আর্জেন্টিনাকে শিরোপা এনে দেওয়া এই মহাতারকা। অনেকেই অবশ্য সাবেলার দল নিয়ে ম্যারাডোনার মূল্যায়ন আশা করেছিলেন। কেননা ম্যারাডোনা শুধু একজন গ্রেট ফুটবলারই নন, কোচ হিসেবেও তার পরিচিতি বিশ্বজোড়া। আগের বার দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে তো তিনিই আর্জেন্টিনার কোচ ছিলেন। কিন্তু এবার মিডিয়ার সামনে বিশ্বকাপ নিয়ে কোনো কথাই বলেননি আর্জেন্টাইন এই কিংবদন্তি। অনেকে মনে করছেন, তেভেজকে বাদ দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়েই হয়তো তিনি আর্জেন্টিনা দল নিয়ে কোনো কথা বলছেন না। যদি সত্যি তাই হয়, তাহলে তো ম্যারাডোনার ব্রাজিলে যাওয়া অনিশ্চিত। আর সত্যি সত্যিই যদি ম্যারাডোনা ব্রাজিলে না যান, তাহলে কি বিশ্বকাপ জমে উঠবে! তবে শেষ পর্যন্ত মেসিদের খেলা দেখতে মান-অভিমান ভুলে ব্রাজিলে যদি চলেও যান, সেখানে কী ঘটনা ঘটাবেন কে জানে? ম্যারাডোনা কি এবারও গ্যালারিতে বসে খালি গায়ে জার্সি মাথার ওপর ঘুরাবেন, নাকি অন্য কোনো অদ্ভুত কাণ্ড করে বসবেন? সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে বিশ্বকাপ শুরুর পরই।