কয়েক দিন আগে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন তুলল ছোট্ট একটি টুইটার। ছয়টি অলিম্পিক স্বর্ণজয়ী উসাইন বোল্ট টুইটারে লিখেছেন- 'আমি জানি আপনি আমার ভক্ত। আমাকে অনেক ভালোবাসেন। তার পরও কেন আমার পছন্দের জুতাজোড়া চুরি করলেন। তবে আমি বিশ্বাস করি, আপনি ভুল করে চুরি করেছেন। আশা করছি আপনি জুতাজোড়া ফিরিয়ে দিয়ে যাবেন।' চোর বোল্টের জুতা ফেরত দিয়ে গেছে কি না জানা যায়নি। কিন্তু খবরটি আলোড়ন তুলেছে বিশ্বব্যাপী। জুতাজোড়ার দাম ছিল ২৯ পাউন্ড। ঠিক বিপরীত অবস্থা বাংলাদেশ অ্যাথলেটিক্সে । দিনকয় আগে জুনিয়র অ্যাথলেট আবদুল্লাহ হাসান দ্রুততম মানব হয়েছেন জুতা ধার করে। একসময়ের রমরমা অ্যাথলেটিক্স এখন দুঃসময়ের মধ্য দিয়ে হাঁটছে। ভুগছে অর্থকষ্টে। বাংলাদেশ অ্যাথলেটিঙ্ ফেডারেশন অর্থের অভাবে চালাতে পারছে না কোনো ক্যাম্প। নিয়মিত আয়োজন করতে পারছে না কোনো মিট।
একসময় ফুটবলের পর বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা ছিল অ্যাথলেটিঙ্। তখন মাঠ দাপিয়ে বেড়িয়েছেন সুফিয়া খাতুন, শামীমা সাত্তার মিমু, ফিরোজা খাতুন, শাহ আলম, শাহজালাল মোবিনরা। এদের দেখতে উপচে পড়ত গ্যালারি। কিন্তু আজ? কেউ জানেই না কখন জাতীয় অ্যাথলেটিঙ্ কিংবা জুনিয়র অ্যাথলেটিঙ্ ট্রাকে গড়ায়। সাংগঠনিক দুর্বলতার জন্য ১১ বছর পর হয়েছে বাংলাদেশ গেমস। এর কারণ কী? শুধুই অর্থ, না সাংগঠনিক দুর্বলতা? অ্যাথলেটিঙ্ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহীম চেঙ্গিস বলেন, 'সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের অভাব নেই আমাদের। অভাব অর্থের। আন্তর্জাতিক অ্যাথলেট তৈরি করতে প্রয়োজন সারা বছর অনুশীলন। কিন্তু আমাদের পক্ষে তা সম্ভব নয়। কেননা ফান্ড নেই। যার জন্য ক্যাম্প করতে পারছি না।' বাইরের দেশে একজন অ্যাথলেটের পেছনে যেখানে খরচ দুই-আড়াই লাখ টাকা, সেখানে এ দেশের অ্যাথলেটদের দৈনিক খাওয়ার ভাতা মাত্র ৪০০ টাকা। দৈনিক ভাতা নেই বললেই চলে। এ ভাতা আবার দেওয়া হয় প্রতিযোগিতা চলাকালে। অর্থকষ্টে থাকার পরও আশার কথা শুনিয়েছেন ফেডারেশন সাধারণ সম্পাদক, 'আমি চেষ্টা করছি কিছু অর্থ সংগ্রহের। হয়তো হয়েও যাবে। তা হয়ে গেলে বেশ কয়েকজন তরুণ অ্যাথলেট নিয়ে একটি দীর্ঘমেয়াদি ক্যাম্পের আয়োজন করব। সেখান থেকেই হয়তো ভবিষ্যতের তারকা অ্যাথলেট বেরিয়ে আসবে।'
১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় অ্যাথলেটিঙ্ ফেডারেশন। এর পর থেকে ফেডারেশন আয়োজন করত দেশব্যাপী জাতীয় অ্যাথলেটিঙ্, জুনিয়র অ্যাথলেটিঙ্, আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় অ্যাথলেটিঙ্। এখন এসব প্রায় অতীত। জাতীয় ও জুনিয়র অ্যাথলেটিঙ্ ছাড়া কোনোটাই হয় না নিয়মিত। তবে অ্যাথলেটিঙ্ যা-ও টিকে রয়েছে দেশে, এর জন্য ধন্যবাদ পাবে সার্ভিসেস দলগুলো। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, আনসার ও ভিডিপিতে নিয়মিত হয় অ্যাথলেটিঙ্ প্রতিযোগিতা। এ ছাড়া এই সার্ভিসেস দলগুলো দেশসেরা অ্যাথলেটদের চাকরি দিয়ে তাদের ভবিষ্যৎও নিশ্চিত করছে। বিজেএমসি এখন কাজ করছে। কিন্তু হারিয়ে গেছে বিটিএমসি, কাস্টমস, ওয়াপদা, টিঅ্যান্ডটি, পোস্টঅফিসের মতো সার্ভিসেস দলগুলো। এর কারণ ব্যাখ্যায় ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক চেঙ্গিস বলেন, 'আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। আলোচনা করে বুঝেছি তাদের আগ্রহ কম। এ ছাড়া তাদের ফান্ডও নেই।' অ্যাথলেটিঙ্ ফেডারেশনের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ সরকার থেকে ১০ লাখ টাকা দেওয়া হয়। এ ছাড়া আএএএফ থেকে দেওয়া হয় ১৫ হাজার ডলার। এ অর্থ দিয়েই সারা বছরের কার্যক্রম চালায় ফেডারেশন।
স্বর্ণযুগ ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজন অর্থ ও দক্ষ সংগঠকের। সংগঠকের অভাব নেই। তবে ফেডারেশনের অভাব অর্থের। তা ঘোচানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু রয়ে গেছে নিজেদের মধ্যে দলাদলি, যা পিছিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশের গৌরবোজ্জ্বল অ্যাথলেটিক্সে।