পাগলা ষাঁড় তাড়া করল নাকি পিরলো-চিয়েল্লিনিদের! অহরহ ভুল পাস। মাঝে মধ্যেই বিচ্যুতি। বিক্ষিপ্ত আক্রমণ। মাঝ মাঠ পেরিয়ে ইতালিয়ান স্কোয়াড কোস্টারিকার গোলমুখী হতেই দেখা গেল প্রতিপক্ষের রক্ষণবূ্যহের পাহারাদাররা এক দঙ্গল পাগলা ষাড়ের মতোই তেড়ে-ফুঁড়ে ধেয়ে আসছে। আর প্রতি পদে পদে ভুল করছে আজ্জুরিরা। ইতালিয়ানদের প্রতিটা আক্রমণ বেলাভূমিতে মহাসমুদ্রের বিশাল ঢেউয়ে মিলিয়ে যাওয়ার মতোই বিলীন হয়ে যাচ্ছিল কোস্টারিকার রক্ষণবূ্যহে। গতি আর দারুণ সব পাস, কাউন্টার আক্রমণের সমাহারে চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইতালিকে ১-০ গোলে হারিয়ে দিয়েছে কোস্টারিকা। শুক্রবার রাত শেষে এই ঘটনা বিশ্বকাপের সেরা বিস্ময় নিয়ে হাজির হলো বিশ্ব ফুটবলের তাবত ভক্তদের সামনে।
উরুগুয়েকে ৩-১ গোলে হারিয়েছে কোস্টারিকা। চমকে গেল বিশ্ব। এটা একটা অঘটনই। যে মৃত্যুগুহার মধ্যে দাফন হওয়ার জন্যই বিশ্বকাপে যাত্রা করেছিল কোস্টারিকা, সেখানে ওরকম কিছু কল্পনা করেনি কোনো অতি কাল্পনিকও। কিন্তু হলো কি? কাস্তেলাউ স্টেডিয়ামে উরুগুয়ের পরাজয় যদি অঘটন হয়ে থাকে তবে কুইয়াবার প্যানটানাল অ্যারিনাতে ইতালির পরাজয়টা কি হবে! দুটি ঘটনা যখন একই ধারায় ঘটে যায় তাকে কি অঘটন বলা যায়? দুবারের চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়ে এবং চারবারের চ্যাম্পিয়ন ইতালির পরাজয়কে এখন আর অঘটন বলা যাবে না। তবে ব্রাজিল বিশ্বকাপের সেরা চমক বলতে হবে কোস্টারিকাকেই।
ব্রাজিল বিশ্বকাপে কে হবে ডার্ক হর্স? কালো ঘোড়ার খেতাব ভালোমতোই গায়ে জড়িয়েছিল বেলজিয়াম। কিন্তু কালো ঘোড়ার মতলব যে কি তার দারুণ উপমা হাজির করল টিকোসরা। কোস্টারিকানরা নিজেদের টিকোস বলে পরিচয় দিতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। ক্যাম্পবেল-দুয়ার্তে-উরেনাদের নিয়ে দারুণ এক দল গড়ে তুলেছেন অধিনায়ক ব্রায়ান রুইজ। কলম্বিয়ান কোচ কোস্টারিকাকে ব্রাজিল বিশ্বকাপে সত্যিকারের কালো ঘোড়া হিসেবেই প্রমাণ করলেন। যে দলটা এর আগে মাত্র তিনবার বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছে। একবার মাত্র শেষ ষোলতে (১৯৯০ বিশ্বকাপে) খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে তাদের সামনে এবার হাতছানি দিচ্ছে কোয়ার্টার ফাইনাল! মধ্য আমেরিকার একটা দেশের জন্য বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল মানেই তো বিশ্ব জয়! গ্রুপ পর্ব পাড়ি দিয়েছে কোস্টারিকা। দ্বিতীয় রাউন্ডে দেখা হতে পারে আইভরিকোস্ট কিংবা জাপানের সঙ্গে। তিন সাবেক চ্যাম্পিয়নের গ্রুপে যে দুর্দান্ত ফুটবল উপহার দিয়েছে টিকোসরা। তাতে শেষ ষোলর বাধাটাও অনায়াসে পেরিয়ে যাওয়া কথা। ডি গ্রুপে বড় ধরনের পরিবর্তন না হলে সম্ভবত কোস্টারিকাই চ্যাম্পিয়ন হিসেবে শেষ ষোলতে যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে শেষ ষোলর বাধা পাড়ি দিলে কোস্টারিকার সামনে পড়তে পারে ডাচরা। কোয়ার্টার ফাইনালেও কি তবে অঘটন ঘটতে চলেছে! নাহ্, তখন আর ওটাকে অঘটন বলা যাবে না কোনোভাবেই।