মাত্র দুই মিনিটের ব্যবধান। তারপরই ঘটল ব্রাজিল বিশ্বকাপের কাঙ্ক্ষিত সে ঘটনা। ডান পায়ের আলতো স্পর্শে বল জালে জড়িয়েছেন মিরোস্লাভ ক্লোসা। রেফারি গোলের বাঁশিতে ফু দেওয়ার আগেই শূন্যে ডিগবাজি খেলেন জার্মান এ স্ট্রাইকার। শূন্য থেকে মাটিতে নামতে নামতেই টুইটারে ভেসে এল অভিনন্দন বার্তা। জার্মান ও ইংলিশ ভার্সনে 'ওয়েলকাম টু দি ক্লাব' লিখলেন ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি রোনাল্ডো। বিশ্বকাপের মঞ্চে রোনাল্ডোর ১৫ গোলের রেকর্ড স্পর্শ করেছেন মিরোস্লাভ ক্লোসা। স্পর্শ করেছেন ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি পেলে এবং জার্মান কিংবদন্তি উয়ে সিলারের রেকর্ডও। পেলে, সিলার এবং ক্লোসাই কেবল চারটি করে বিশ্বকাপে গোল করার গৌরব অর্জন করেছেন।
জার্মান মিডিয়া ক্লোসার রেকর্ড স্পর্শের আনন্দে ভুলে গেল ঘানার সঙ্গে ড্রয়ের দুঃখটা। পত্রিকাগুলো ম্যাচের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিল ক্লোসাকেই। প্রথম পাতা জুড়ে হেডলাইন হলো 'থ্যাঙ্কস ওল্ড গাই'। ৩৬ বছর পূর্ণ করে বিশ্বকাপে খেলতে নামা ক্লোসার চেয়ে বুড়ো জার্মান দলে কেউ নেই। এই বৃদ্ধের উদযাপন গতকাল ছিল পুরো জার্মানিরই উৎসবের উপলক্ষ।
তিনি যেন রূপকথার রাজপুত্র। ঘুমন্ত পুরীকে জিয়ন কাঠির ছোঁয়ায় সহসাই কোলাহল মুখর করে তুলতে পারেন। জার্মান আক্রমণকারীরের তীর-বর্ষা সীসাঢালা প্রাচীরের মতোই রুখে দিচ্ছিল ঘানার রক্ষণবূ্যহ। এ কি তবে এমন প্রাচীর যা ভেদ করার মতো বল্লম নেই জার্মানদের কাছে! জোয়াকিম লোর বাহিনীকে ময়দানে দেখে মনে হচ্ছিল সম্ভাব্য পরাজিত দলের মানসিকতাই বুঝি এসে গেছে তাদের মধ্যে। তন্দ্রালু চোখে তখনই জার্মানরা দেখল এক রাজপুত্রের আগমন। প্রত্যক্ষদর্শী ছিল ঘানার দুর্ভেদ্য রক্ষণবূ্যহও। তিনি এমন এক রাজপুত্র ময়দানে নামার আগেই যিনি বিজয়ের সবগুলো রাস্তা পরিষ্কার দেখতে পান। প্রতিপক্ষের দুর্বলতা সম্পর্কে যার আছে অগাধ জ্ঞান। ময়দানে নেমে দুই মিনিটের মধ্যেই জার্মানদের ফিরিয়ে দেন সমতা। তার পায়ের আলতো স্পর্শেই বেঁচে যায় জার্মানরা। ফর্টালেজায় ২-২ গোলের ড্রটাও যে জার্মানদের জন্য বড় প্রাপ্তি হয়ে দেখা দিল গত শনিবার!
ব্রাজিলের বুক চিরে একটা রেকর্ড নিজের করে নেওয়ার পথে এগিয়ে চলেছেন ক্লোসা। প্রথম সুযোগেই তিনি স্পর্শ করেছেন রোনাল্ডোকে। ২০০২ (৫ গোল), ২০০৬ (৫ গোল) ও ২০১০ (৪ গোল) বিশ্বকাপেই রোনাল্ডোর রেকর্ডটাকে হুমকি দিয়ে রেখেছিলেন ক্লোসা। বিশ্বকাপের মঞ্চে সর্বোচ্চ ১৫ গোল করে রেকর্ড গড়েছিলেন রোনাল্ডো। ব্রাজিল বিশ্বকাপের আগে জার্মান দলে ক্লোসা স্থান পাওয়ার পরই রেকর্ড ভাঙা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। যার রেকর্ডটা ভাঙবে সেই রোনাল্ডো বলেছিলেন, 'রেকর্ড গড়াই হয় ভাঙার জন্য। আমার রেকর্ডটা যদি ক্লোসা ভাঙতে পারে আমি তাকে অভিনন্দনই জানাব।' রোনাল্ডো কথা রেখেছেন। রেকর্ড স্পর্শ করার পর ক্লোসা যখন শূন্যে ডিগবাজি খাচ্ছিলেন, তখনই টুইটাই বার্তায় শুভেচ্ছা লিখেছেন রোনাল্ডো। বিশ্বকাপের মঞ্চে রোনাল্ডোর রেকর্ডটা স্পর্শ করলেন ক্লোসা। এরপর কি? জার্মানরা বিশ্বকাপের দৌড়ে শেষ পর্যন্ত থাকতে পারলে আরও পাঁচটা ম্যাচ খেলার সুযোগ পাবেন ক্লোসা। সামনের সম্ভাব্য পাঁচটা ম্যাচে রেকর্ডটা কতদূর নিয়ে যাবেন তিনি!