কারো হাতে ড্রাম, কারো হাতে লাল সবুজ পতাকা। মুখে সবার এক ধ্বনি বাংলাদেশ, বাংলাদেশ। মাত্র শ'খানেক প্রবাসী বাঙালি ড্রামের তালে তালে চিৎকার করে কাঁপিয়ে দিচ্ছিলেন মেইন স্টেডিয়াম। ভিন দেশে এমন দাপুটে সমর্থন পেয়ে বাংলাদেশ দলও চেপে ধরেছিল হংকংকে। পুরো ম্যাচেই ছিল মামুনুলদের একাধিপত্য। তারপরেও একটুখানি ভুলের জন্য হেরে গেল বাংলাদেশ। ভেঙে গেল স্বপ্ন।
খুব কাছে গিয়েও ইতিহাস গড়া হলো না মামুনুলদের। ৯০ মিনিট যারা কোণঠাসা হয়ে থাকল, সেই হংকংই কিনা হাসতে হাসতে মাঠ ছাড়ল। হংকংয়ের কাছে ২-১ গোলের এই পরাজয়টা দুর্ভাগ্যজনকই বটে। তবে দাপুটে খেলার জন্য মামুনুলদের ওপর দারুণ খুশি কোচ লোডডিক ক্রুইফ।
বাংলাদেশ যদি চার চারটি নিশ্চিত গোলের সুযোগ নষ্ট না করত কিংবা ডিফেন্সটা যদি আরেকটু জমাটবদ্ধ হতো, তাহলে জিতেই যেতে পারত বাংলাদেশ। এমন ম্যাচে পরাজয়ের পর জাহিদের কণ্ঠে আফসোস, 'আমরা আজ জেতা ম্যাচটা হেরেছি। আর একটুখানি সতর্ক থাকলেই ফলাফল হয়ে যেত উল্টো। আমরা তো অনেক সুযোগ পেয়েছিলাম, কিন্তু কাজে লাগাতে পারিনি।'
ইংলিশ বংশোদ্ভূত জামাল ভুইয়া ভালো খেলেছেন, তবে মিস করেছেন দুইটি নিশ্চিত গোলের সুযোগ। খেলার ৪০ মিনিটে লম্বা করে থ্রু দিয়ে হংকংয়ের ডি-বক্সে বল দেন তপু। জামাল ভুইয়া বলের সঙ্গে পায়ের সংযোগ ঘটাতে পারলে বল জড়িয়ে যেত হংকংয়ের জালে। আর একবার এগিয়ে গেলে খেলার ফল অন্যরকম হতো। এরপর ৫৭ মিনিটে ঠিক একইভাবে জামালের মিস। পরের মিনিটেই হেমন্ত প্রতিপক্ষের গোলরক্ষককে একা পেয়ে বল পাঠিয়ে দেন মাঠের বাইরে। ওয়াহেদের মিসটাও অমার্জনীয়। ডি বক্সে মধ্যে সহজতম সুযোগটা তিনি কাজে লাগাতে পারেননি।
তবে হংকং কিন্তু সুযোগ পেয়ে তা হাতছাড়া করেনি। ৫২ মিনিটে বাংলাদেশের ডি-বক্সে মধ্যে জটলা তৈরি করে গোল আদায় করে নেন ক্রিস্টিয়ান কেসি। ৭৩ মিনিটে কর্নার থেকে হেডের মাধ্যমে লাম হোক হেই যে গোলটি করেছেন সেটি সত্যিই অসাধারণ। উড়ন্ত বলে শুধু মাথা ছুইয়ে দিয়েছেন।
হংকংয়ের বিরুদ্ধে হারলেও আগের দুই ম্যাচের তুলনায় অনেক ভালো খেলেছে বাংলাদেশ। আর এর কারিগর জাহিদ হোসেন। আগের দুই ম্যাচে যাকে কাটাতে হয়েছে সাইড বেঞ্চে। কাল নেমেই পাল্টে দিয়েছেন খেলার চিত্র। ডান প্রান্ত দিয়ে একের পর এক বল বানিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু স্ট্রাইকাররা সুবিধা করতে পারেননি। দুই গোল হজম করার পর কোচ স্ট্রাইকার ওয়াহেদকে তুলে নিয়ে সজিবকে পাঠায়। একটু পরেই ব্যবধান কমান তিনি। ৭৬ মিনিটে জাহিদের পাস থেকে বল পেয়ে হংকংয়ের গোলরক্ষককে বোকা বানিয়ে দেন।
এমন ম্যাচে পরাজয়ের জন্য কোচের অদূরদর্শী সিদ্ধান্তও অনেকটা দায়ী। খেলোয়াড়দের কোচ বলেছিলেন, প্রথমার্ধে দেখেশুনে খেলতে। সে কারণেই প্রথমার্ধে আক্রমণ করার চেয়ে বেশি রক্ষণাত্দক ছিল মামুনুলরা। দ্বিতীয়ার্ধে তো জাহিদ-মামুনুলদের আক্রমণে নাস্তানাবুদ হয়ে পড়েছিল হংকং। তাই এই ম্যাচে বাংলাদেশ হারলেও খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাসের গ্রাফটা অনেক উপরে উঠে গেছে। জাহিদ বলেন, 'হেরে গেছি এর জন্য খারাপ লাগছে। কিন্তু এ ম্যাচে আমরা ওদেরকে পাত্তাই দেইনি। আমরা বুঝাতে পেরেছি যে, আমাদেরও সামথ্য আছে।'
ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে কোচ বলেন, 'এমন ম্যাচে হেরে যাওয়ায় হতাশ আমি। তবে এই ভেবে ভালো লাগছে যে, আমরা অনেক ভালো ফুটবল খেলেছি। ওদের গোল মুখে যত আক্রমণ করেছি, সেগুলো কাজে লাগাতে পারলে সহজেই জিততে পারতাম। ম্যাচের ৭০ ভাগ সময়ই নিয়ন্ত্রণ ছিল আমাদের। হয়তো হঠাৎ করে গোল দুটি পেয়ে ওরা জিতেছে কিন্তু এই ম্যাচটা আমার কাছে খুবই ইতিবাচক। ধীরের দলের এই উন্নতিতে আমি খুবই খুশি। এখানে না হলেও সামনে তো হয়ে যাবে।'
এশিয়ান গেমসের তিন ম্যাচেই একটু একটু করে উন্নতি করেছে বাংলাদেশ। তবে মামুনুলরা যে আক্রমণাত্দক ফুটবল খেলেছেন, যদি এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেন তাহলে খুব শীঘ্রই যে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়া সেরা দল হয়ে যাবে তাতে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই!