অভিনব বিন্দ্রার আসে পাশে গিজ গিজ করছে ভারতীয় সাংবাদিকরা। রেঞ্জ রুমে কথা বলা নিষেধ, তাই নীরবেই তারা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছে। আবার কখনো বা কষ্টে মাথা চাপড়াচ্ছে। বাংলাদেশি মিডিয়া কর্মীদের ভিড় আবদুল্লাহ হেল বাকির পাশে। কিন্তু কারো মুখে হাসি নেই। বাকি নিজেও একটি করে শুট করছেন, আর হতাশ দৃষ্টিতে তাকাচ্ছেন কোচ লি জংগিয়ানের দিকে। কোচ কখনো মাথা নেড়ে, কখনো হাত নেড়ে সাহস দিচ্ছেন। 'ভয় নেই, তুমি চালিয়ে যাও' এমন ধরনের সংকেতই দিচ্ছেন কোচ। কিন্তু বাকি তা বুঝতে পেরেছেন বলে মনে হলো না। হতাশা নিয়ে শুট করছেন, আবারও খারাপ হচ্ছে। এভাবে চলতে চলতেই কোয়ালিফাইং রাউন্ড শেষ। শেষ হয়ে যায় বাকির স্বপ্নও। আশাহতের বেদনায় ছটফট করতে থাকি এশিয়ান গেমস কাভার করতে আমরা সাংবাদিকরাও।
যে ইভেন্টে পদক জয়ের স্বপ্ন ছিল, সেখানে বাছাই পর্বেই কিনা বাদ পড়তে হলো। ১০ মিটার এয়ার রাইফেলসে ৫৩ জন শুটারের মধ্যে আবদুল্লাহ হেল বাকি ১৫তম। মোট স্কোর ৬১৯.৬। কমনওয়েলথ গেমসে ৬২০ স্কোর করে জিতেছিলেন রুপা। আর এশিয়ান গেমসের ফাইনাল রাউন্ডেই জায়গা হলো না তার। এই ইভেন্টে অন্য দুই শুটার জেসিমুজ্জামান ৬১৩.৮ স্কোর করে ৩২তম হয়েছেন, ৬০৬.৫ স্কোর করে মাহমুদুল হাসান ৪৫তম। দলগতভাবে ১০তম হয়েছে বাংলাদেশ। শুটিংয়ে সম্ভাবনাও শেষ হয়ে গেছে লাল-সবুজদের। এই ইভেন্টে কমনওয়েলথ গেমসে স্বর্ণ জয়ী বিন্দ্রাও সুবিধা করতে পারেনি। বাছাই পর্ব কোনো রকমে উতরে গিয়ে ফাইনালে ব্রোঞ্জ নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে ভারতীয় শুটারকে। এখানেই বোঝা যায় কমনওয়েলথ গেমসের তুলনায় এশিয়ান গেমস কতোটা বেশি প্রতিদ্বন্দ্বি্বতাপূর্ণ। কিন্তু বাকির জন্য হতাশার বিষয় হচ্ছে তিনি কমনওয়েলথের চেয়ে খারাপ স্কোর করেছেন। শুটিং শেষে যেন কথাই বলতে পারছিলেন না, 'আমি কিছুই বুঝতে পারছি না, কেন এমন হলো।' শুটিংয়ের কোরিয়ান কোচ লী জংগিয়ান বলেন, 'শুটাররা সাত মাস অনুশীলন করার সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু এই প্রস্তুতি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভালো করার জন্য যথেষ্ট ছিল না। তবে আমার বিশ্বাস ভবিষ্যতে বাংলাদেশ শুটিংয়ে অনেক ভালো করবে। তবে এজন্য সারা বছর অনুশীলনের ব্যবস্থা থাকতে হবে। বেশি বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে হবে। এতে অভিজ্ঞতার ঝুলিটা বড় হবে। তাছাড়া বাংলাদেশের একেবারে প্রান্তিক পর্যায় থেকে শুটার খুঁজে আনতে হবে। এভাবে দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা করলেই এক সময় তার ফল আসবে।' বাংলাদেশের শুটাররা প্রস্তুতিতে সে স্কোর করে চূড়ান্ত পর্বে তা করতে পারে না। এ প্রসঙ্গে কোচ বলেন, 'বেশি বেশি বড় টুর্নামেন্টে অংশ নিলে এই দুর্বলতা এক সময় এমনই কমে যাবে। তবে এর সবচেয়ে বড় সমাধান হচ্ছে সব সময় অনুশীলন করা। নিয়মিত অনুশীলন করলে এমনই জড়তা কমে যায়।' ক্রিকেট, কাবাডির বাইরে এবারের এশিয়ান গেমসে শুটিংই ছিল বড় ভরসা। দীর্ঘদিন অনুশীলন এবং গ্লাসগো কমনওয়েলথ গেমসে সাফল্যের পর এশিয়ান গেমস নিয়ে প্রত্যাশার গ্রাফটা ছিল অনেক ওপরে। আর এই প্রত্যাশার চাপটাই যেন সইতে পারলেন না বাকি। একদিন আগেই প্রত্যাশার চাপে ভেঙে পড়েছিলেন শারমিন আকতার রত্না। মেয়েদের ১০ মিটার এয়ার রাইফেলসে হয়েছিলেন ৩৭তম। আর মেয়েদের শুটিংয়ে ব্যর্থতার পর ছেলেরাও তাদের সামথ্যকে তুলে ধরতে পারল না।