কোনো কারণে যদি কয়েক মুহূতের্র জন্য 'ইন্টারনেট' না থাকে, তবে থমকে যাবে কোরিয়া। অতি মাত্রায় প্রযুক্তি নির্ভর হতে গিয়ে কোরিয়ানদের মস্তিষ্ক যেন ফাঁপা হয়ে গেছে, তারা 'সার্চ ইঞ্জিনে' সার্চ না করে কোনো কিছুই খুঁজে পান না। ইন্টারনেট না থাকলে তারা নিজের বাড়ির রাস্তাও খুঁজে পাবেন কিনা সন্দেহ! কাউকে কোনো কিছু জিজ্ঞেস করলে সঙ্গে সঙ্গেই গুগলে চলে যায়, না পেলে মহা বিপত্তি! কাল কোরিয়ানদের প্রযুক্তির গ্যাঁড়াকলে পড়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল!
ক্রিকেটাররা অনুশীলন করেন সংডু সাগর তীরে। কিন্তু ম্যাচ হয় ইয়ংহি ক্রিকেট মাঠে। দুই ভেন্যুর দূরত্ব ৬০ কি.মি। কাল দুপুরে ছিল শ্রীলঙ্কা বনাম দক্ষিণ কোরিয়া কোয়ার্টার ফাইনাল। লঙ্কানদের খেলা দেখার জন্য বাংলাদেশ দল সিদ্ধান্ত নেয় সংডু না গিয়ে তারা ইয়ংহি মাঠে যাবে। নেট প্রাকটিসও সেখানেই করা যাবে। বাসের ড্রাইভারকেও জানিয়ে দেওয়া হয় সেকথা। কিন্তু ড্রাইভার অনুশীলনের কথা শুনে 'নেভিগেটরে' সেট করে দেয় সংডুর কোড। বাস উল্টো পথে যাচ্ছে বলে কর্মকর্তারা বার বার ড্রাইভারকে বলেন, কিন্তু নেভিগেটরের নির্দেশনা অনুযায়ী সে চলে যায় সংডু। অবশেষে ভোগান্তির পর ইয়ংহি মাঠের দিকে যাত্রা। যার ফলে রাস্তায় নষ্ট হয়ে যায় দুই ঘণ্টা।
আজ বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ, কুয়েতের বিরুদ্ধে। 'পুঁচকে' এক দলের বিরুদ্ধে খেলা বলেই রাস্তার ঘটনাটা হেসে উড়ে দিয়েছে ক্রিকেটাররা। কুয়েত কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছেছে শুধুমাত্র ভাগ্যের সহায়তায়। গ্রুপ পর্বে নেপালের বিরুদ্ধে মাত্র ২০ রানে অলআউট, তারপর দ্বিতীয় ম্যাচ মাঠে গড়ায়নি বলে 'কয়েন টসে' তারা মালদ্বীপকে হারিয়ে নকআউট পর্বের টিকিট নিশ্চিত করে তারা। কাল সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় এই কুয়েতকেই সমীহ করলেন বাংলাদেশের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। 'যদি জিততে পারি', 'যদি জিততে পারি' এমন কথা বেশ কয়েকবার উচ্চারণ করেন।
কুয়েতের মতো দলের বিরুদ্ধে জিতকে কেন বার বার 'যদি' শব্দটা ব্যবহার করতে হচ্ছে? এমন প্রশ্নে মাশরাফি বলেন, 'আমি জিতবোই এ ধরনের কথা আগে থেকে বলতে পছন্দ করি না। যখন জিতব তার পর কথা বলব। তবে তার মানে এই নয় যে, কুয়েতের বিরুদ্ধে আমরা হেরে যাব কিংবা আত্মবিশ্বাসী নয়। জয়ের ব্যাপারে আমরা অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী। তাছাড়া আমরা কিন্তু আগেরবার স্বর্ণ জিতেছি এটাও ঠিক।'
'পুঁচকে' কুয়েতের বিরুদ্ধে ম্যাচটাকে অযথাই গুরুত্বপূর্ণ করে তোলার জন্য চেষ্টা করছেন মাশরাফি। তিনি নিজেও খুব ভালো করেই জানেন, কুয়েত সামনে দাঁড়াতেই পারবে না। তবে একটা বিষয় নিয়ে কিন্তু সত্যিই অধিনায়ক শঙ্কিত, সেটি হচ্ছে বৃষ্টি ও টস। মাশরাফি বলেন, 'টস' নিয়ে একটা ভয় আছেই। যদি বৃষ্টি হয়, সে বিষয়টা নিয়েই আছে শঙ্কা। তবে এছাড়া মনে হয় না কুয়েতের বিরুদ্ধে জয় পেতে খুব একটা সমস্যা হবে।'
বাংলাদেশ দল সরাসরি অংশ নিচ্ছে কোয়ার্টার ফাইনালে। একে তো ক্রিকেটের সবচেয়ে অনিশ্চয়তার ফরম্যাট টি-২০, তার ওপর নকআউট পর্ব। হারলেই বিদায়। তাই প্রতিপক্ষ যেই হোক, অনেক বেশি সতর্ক মাশরাফি, 'নকআউট পদ্ধতিতে সব ম্যাচই গুরুত্বপূর্ণ। কুয়েতের সঙ্গে যদি আমরা ভালোভাবে জিততে পারি তাহলে আত্মবিশ্বাস বাড়বে। আশা করছি, ভালোভাবেই জিতবো আমরা। আর এই ম্যাচ জিততে পারলে পরের ম্যাচটা অনেক বড়। সেটা শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে।'
এশিয়ান গেমসের পর ব্যস্ত সময় কাটাতে হবে ক্রিকেটারদের। বাংলাদেশ সফরে আসছে জিম্বাবুয়ে। সে কারণেই কোরিয়ায় নিজেদের ঝালাই করে নিতে চান মাশরাফিরা। প্রতিপক্ষের কথা চিন্তা না করে নিজেদের পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলবেন তারা। স্বর্ণ জিততে পারলে হারানো আত্মবিশ্বাসটা আবারো ফিরে আসবে বলে মনে করেন অধিনায়ক। সে কারণেই এখান থেকে নতুন করে শুরু করার কথা ভাবছেন তিনি। সব শেষে স্বর্ণ জয়ের ব্যাপারে দৃঢ় মনোবলের কথা বললেন মাশরাফি, 'আমরা যারা বাংলাদেশ থেকে এসেছি সবার মধ্যে কিন্তু একটা বিষয় কাজ করছে যে, আমরা এখানে স্বর্ণ জয়ের জন্যই এসেছি।'