অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে ২৪ জানুয়ারি দেশ ছাড়ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। দুই সপ্তাহের কন্ডিশনিং ক্যাম্প করবে সেখানে। ক্যাম্প ছাড়াও ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া একাদশের বিপক্ষে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচও খেলবে। উদ্দেশ্য একটাই- বিশ্বকাপের ময়দানী লড়াইয়ে নামার আগে আবহাওয়া, উইকেট এবং মাঠের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া। ক্রিকেট মহাযজ্ঞে মাশরাফি বাহিনীর প্রথম ম্যাচ ১৮ ফেব্রুয়ারি, প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান, ভেন্যু ক্যানবেরা। বিশ্বকাপের প্রস্তুতি নিতে কাল অনুশীলনে নেমে পড়ছেন মাশরাফিরা। দলের ব্যাটিং, বোলিং নিয়ে নানামুখী বিশ্লেষণ হলেও আড়ালে রয়ে যায় ফিল্ডিং। টাইগারদের ফিল্ডিং কি বিশ্বমানের? দলের ফিল্ডিং কোচ রিচার্ড হালসাল সেটা মনে করেন না। জানিয়েছেন, বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ফিল্ডিং চমকে দেবে ক্রিকেটপ্রেমীদের।
বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের ৬ খেলার চারটি অস্ট্রেলিয়ায়। বাকি দুটি নিউজিল্যান্ডে। নিউজিল্যান্ডের মাঠগুলো অপেক্ষাকৃত ছোট। কিন্তু ক্যানবেরা, মেলবোর্ন, সিডনি, অ্যাডিলেডের মাঠগুলো অনেক বড়। সেখানে বিগ হিট একটু কষ্টকরই। অবশ্য মাঠগুলো বাংলাদেশ কিংবা উপমহাদেশের অন্যান্য ভেন্যুর তুলনায় অনেক বেশি গতিশীল। বল দ্রুতগতিতে বেরিয়ে যায় বলে এসব মাঠে ফিল্ডিং করা অনেক বেশি কষ্টকর। অনভিজ্ঞ হলেও সেখানে ভালো করার সামর্থ্য রয়েছে ক্রিকেটারদের মনে করেন ফিল্ডিং কোচ হালসাল, 'সেখানকার মাঠগুলো অপেক্ষাকৃত বড়। আমাদের মাঠগুলোও বড় বড়। তাই এ নিয়ে আলাদাভাবে ভাবার কিছু নেই। ওয়ানডে কন্ডিশনে আউট ফিল্ড দ্রুত গতির হয়। সেখানে ফিল্ডিং করার জন্য আমাদের আরও ভালো করতে হবে। দলে সাব্বির রহমানদের মতো বেশ কয়েকজন ভালো ফিল্ডার রয়েছেন। তাই আমি বিশ্বাস করি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ফিল্ডিং চমকে দেবে ক্রিকেটমোদীদের।'
অস্ট্রেলিয়ার উইকেটগুলো হার্ড ও বাউন্সি। সেখানে পেসাররা সুবিধা পেয়ে থাকেন বেশি। নিউজিল্যান্ডের উইকেটগুলোতেও সুবিধা পান পেসাররা। নিকট অতীতে ভারত-অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড-শ্রীলঙ্কা টেস্ট সিরিজগুলো দেখলেই পরিষ্কার। অবশ্য অস্ট্রেলিয়ান সিমারদের বিপক্ষে বেশ ভালো ক্রিকেট খেলেছেন ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা। কুপোকাত হয়েছেন স্পিনে। তাই হালসাল মনে করেন যেখানেই খেলা হোক না কেন, মূল টার্গেট জয়, 'ভালো খেলার কোনো মানে নেই। জয়ই মুখ্য। অস্ট্রেলিয়ান পেসারদের ভালো খেলেছেন ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা। শুধু পেরে উঠেনি স্পিনারদের সঙ্গে। এটাও মাথায় রাখতে হবে ক্রিকেটারদের।'
বাংলাদেশ গ্রুপে রয়েছে দুই স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড ছাড়া ইংল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান ও স্কটল্যান্ড। আইসিসির দুই সহযোগী দেশের বিপক্ষে ফেবারিট হলেও অন্যদের বিপক্ষে খেলতে নামবে আন্ডারডগ হয়ে। দুই দলের বিপক্ষে জয়ের আস্বাদ পেতে অপেক্ষায় পুরো দেশ। এটা বাড়তি চাপ মনে করেন হালসাল, 'বাইরে থেকে অনেক চাপ থাকবে দলের ওপর। কিন্তু এটা মনে রাখতে হবে তারা দেশের বাইরে খেলছে। যেখানে তারা সাবলীল নয়। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, আমাদের অনেক ক্রিকেটারের ক্যানবেরা, মেলবোর্ন ও নিউজিল্যান্ডে খেলার অভিজ্ঞতা নেই। এগুলোও মনে রাখতে হবে।'
বিশ্বকাপে দল বিস্ময় জাগানো ফিল্ডিং করবে- আশ্বস্ত করেছেন কোচ হালসাল। কিন্তু গত কয়েকটি সিরিজে খুব একটা ভালো ফিল্ডিং করেছেন, তা নয়। তারপরও ক্রিকেটাররা প্রতিনিয়ত উন্নতি করছেন বলেই মনে করেন ফিল্ডিং কোচ, 'ক্রিকেটাররা প্রতিনিয়তই চেষ্টা করছেন ফিল্ডিং উন্নত করতে। সিনিয়র ক্রিকেটাররা ডাইভ দিচ্ছেন। সাকিবও উৎসাহিত করছেন অন্যদের। এ ছাড়া নাসির, সাব্বিরের মতো দুই-তিনজন দ্রুতগতির ফিল্ডার রয়েছেন। আমি মনে করি, তারা অস্ট্রেলিয়ায় অবশ্য নিজেদের আলাদা করে উপস্থাপন করবে।'
ক্রিকেট বিশ্বে ফিল্ডিং এখন শিল্পে পরিণত হয়েছে। ফিল্ডিং যে শিল্প-সেটা প্রথম ক্রিকেটপ্রেমীদের দেখিয়েছেন জন্টি রোডস। এখন প্রতিটি দলই ব্যাটিং ও বোলিংয়ের পাশাপাশি ফিল্ডিংয়ে জোর দিচ্ছে অনেক। তাই প্রতিটি দলের ফিল্ডিং এখন বিশ্বমানের। সেই কাতারে পৌঁছতে বিসিবি নিয়োগ দিয়েছে ইংল্যান্ডের সাবেক সহকারী কোচ রিচার্ড হালসালকে। তার নিয়োগ কতটা সহায়ক হয়েছে, বিশ্বকাপেই সেটা পরিষ্কার বোঝা যাবে।