'দেখে নেবানে...'। ২০০৭ বিশ্বকাপে ভারত ম্যাচের আগের দিন মাশরাফি বিন মর্তুজা সতীর্থদের উৎসাহ দিতে এমনটাই বলেছিলেন। ভারতকে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে দেওয়ার নায়ক ছিলেন মাশরাফি। অসাধারণ বোলিং করে গুঁড়িয়ে দিয়েছিলেন শচীন টেন্ডুলকার, রাহুল দ্রাবিড়, সৌরভ গাঙ্গুলি, বীরেন্দ্র শেবাগদের নিয়ে গড়া বিশ্বসেরা ব্যাটিং লাইনকে। ভারতকে পেছনে ফেলে সুপার এইটে টেনে তোলা মাশরাফিকে কাল মেলবোর্ন বিমানবন্দরে ভীষণ ক্লান্ত মনে হলো! দেখা হতেই জোর করে হেসেছেন ঠিক, কিন্তু তাতে ছিল না প্রাণের স্পন্দন। থাকবেই কীভাবে? আগের দিন আইসিসি সহযোগী দেশ আয়ারল্যান্ডের কাছে হারের লজ্জায় সিক্ত হয়েছেন। এ এমন এক হার, বিশ্বকাপের মূল মঞ্চে নামার আগে আত্দবিশ্বাসে চিড় ধরানোর জন্য যথেষ্ট। কিন্তু দেশসেরা পেসার ও টাইগার অধিনায়ক ভেঙে পড়ার মতো ক্রিকেটার নন, তাই প্রস্তুতি ম্যাচগুলোকে গুরুত্ব না দিয়ে শুধু বলেছেন, ক্রিকেট মহাযজ্ঞের মূল মঞ্চের দিকে তাকিয়ে আছেন তিনি। প্রস্তুত গোটা দলও। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম খেলা ১৮ ফেব্রুয়ারি, প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান, ভেন্যু অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী ক্যানবেরা।
আইরিশদের বিপক্ষে খেলেই সিডনি থেকে হেলিকপ্টারে মেলবোর্ন আসেন মাশরাফি ও টিম ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজন। বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নিতেই সিডনি থেকে আসেন মেলবোর্নে। কাল মেলবোর্ন থেকে বিশেষ বিমানে উড়ে যান ক্যানবেরা। যাওয়ার সময়ই বিমানবন্দরে দেখা টাইগার অধিনায়কের সঙ্গে। সেখানেই টাইগারদের প্রস্তুতি ম্যাচ নিয়ে কথা বলেন। বলেন বিশ্বকাপে টাইগারদের আশার কথাও। তাকিয়ে আছেন মূল মঞ্চের দিকে।
ক্রিকেট মহাযজ্ঞে সাফল্য পেতে ২৪ জানুয়ারি ঢাকা ছাড়েন মাশরাফিরা। অস্ট্রেলিয়ান কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে দুই সপ্তাহের ক্যাম্প করেন ব্রিসবেনে। ক্যাম্প চলাকালীন দু-দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে টাইগাররা ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া একাদশের বিপক্ষে। হার মানে দুটিতেই। দুই সপ্তাহের ক্যাম্প গুটিয়ে পুরো দল ৭ ফেব্রুয়ারি ঘাঁটি গাড়ে সিডনিতে। সেখানে ৯ ফেব্রুয়ারি আইসিসির শিডিউল অনুয়ায়ী প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে পাকিস্তানের বিপক্ষে। ২৪৬ রান করেও হেরে যায় ৩ উইকেটে। ১৯৯২ সালের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে পেসাররা ভালো বোলিং করলেও ব্যর্থ ছিল দলের বোলিংয়ের মূল শক্তি স্পিন বিভাগ। ১২ ফেব্রুয়ারি শেষ গা-গরমের ম্যাচের প্রতিপক্ষ খেলে আইরিশদের বিপক্ষে। আইসিসি সহযোগী দেশটির কাছে হেরে যায় ৪ উইকেটে। প্রতিপক্ষের বোলারদের বোলিংয়ে ১৮৯ রানে গুটিয়ে যায় মাশরাফি বাহিনী। সর্বোচ্চ ৪৫ রান করেন সৌম্য সরকার। ১৯০ রানের মামুলি টার্গেট ডিঙিয়ে যায় আয়ারল্যান্ড ২৫ বল হাতে রেখে।
বিশ্বকাপের মূল মঞ্চে নামার আগে টানা চার প্রস্তুতি ম্যাচে হার; মানসিকতায় ধাক্কা খাওয়ার কথা। অথচ টাইগার অধিনায়ক তেমনটি মানছেন না, 'প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে আমরা কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করেছি। হারগুলো দলের মানসিকতায় কোনো প্রভাব ফেলবে না।' প্রস্তুতি ম্যাচগুলোর হার নিয়ে হা-হুতাশ নেই টাইগার অধিনায়কের। কিন্তু ছোট্ট একটি আক্ষেপ রয়ে গেছে। বিশ্বকাপের মূল মঞ্চে নামার আগে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে জয় দলকে এগিয়ে নিত বলে মানেন মাশরাফি, 'আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে জয় পেলে ভালো হতো। জয়ের আত্দবিশ্বাস নিয়েই মাঠে নামতাম।' জিততে না পারলেও কপালে ভ্রু কুঞ্চিত করতে রাজি নন টাইগার অধিনায়ক, 'প্রস্তুতি ম্যাচে কি ফল হয়েছে, সে নিয়ে ভাবতে রাজি নই। আমাদের ভাবনায় মূল মঞ্চ।'
মেলবোর্ন থেকে যখন ক্যানবেরা উড়ে যাচ্ছিলেন, তখন বাংলাদেশের অফিসিয়াল ব্লেজার পরিহিত মাশরাফিকে একটু বেশিই ক্লান্ত মনে হচ্ছিল। এই ক্লান্তি দূর করে আফগানিস্তানের বিপক্ষে যেন সেই দুরন্ত, দুর্বার মাশরাফিকে দেখা যায়- প্রত্যাশা দেশবাসীর। মাশরাফির সঙ্গে যেন টাইগার ক্রিকেটাররাও জ্বলে উঠেন এবং দেশবাসীকে উৎসব করার মতো রসদ উপহার দিতে পারেন, এখন সেই ক্ষণ-গণনার অপেক্ষায় ১৬ কোটি ক্রিকেটপ্রেমী।