মূল ফটক দিয়ে মেলবোর্ন স্টেডিয়ামে ঢুকতেই থমকে যেতে হলো। ২০ ফুট উচ্চতায় দাঁড়িয়ে স্যার ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যান স্বাগত জানাচ্ছেন! অবাক হচ্ছেন? অবাক হওয়ারই কথা। কিন্তু সত্যি! শতবর্ষীয় মেলবোর্ন ক্রিকেট স্টেডিয়ামের মূল ফটকে দাঁড়িয়ে ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান ব্র্যাডম্যানের পাথরের একটি মূর্তি অসাধারণ এক কাভার ড্রাইভে স্বাগত জানাচ্ছেন ক্রিকেটপ্রেমীদের। কাল স্টেডিয়ামে ঢুকতে ক্রিকেট লিজেন্ড স্বাগত জানান আমাকেও। মেলবোর্ন আধুনিক ক্রিকেটের সর্ববৃহৎ স্টেডিয়াম। এক লাখ ক্রিকেটপ্রেমী একসঙ্গে বসে খেলা দেখতে পারেন এখানে। আজ সেখানে ক্রিকেট মহাযজ্ঞের উদ্বোধনী ম্যাচে মুখোমুখি হবে ব্র্যাডম্যানের অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড। এ দুই দলই ১৮৭৭ সালে এখানে প্রথম টেস্ট খেলেছিল। সেই থেকে মেলবোর্ন ক্রিকেট স্টেডিয়াম অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের ঐতিহ্যের ধারক। প্রায় ২২ ঘণ্টার ভ্রমণ শেষে কাল বিকালে উপস্থিত হই স্টেডিয়ামে। উদ্দেশ্য, অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড সংগ্রহ। যদিও আমার কার্ড তোলার কথা ক্যানবেরা থেকে। কিন্তু উদ্বোধনী ম্যাচ করব বলে ঢাকা-কুয়ালালামপুর-পার্থ হয়ে মেলবোর্ন পৌঁছাই কাল সকালে। টানা ভ্রমণের ধকল কাটিয়ে উঠতে না পারলেও বিকালে স্বপ্নের মেলবোর্ন স্টেডিয়াম দেখতে রওনা দেই আমাদের প্রিয়ভাজন মাসুদ ভাইকে সঙ্গে নিয়ে। মেলবোর্নে প্রথম এসেছি। তাও আবার বিশ্বকাপ ক্রিকেট কাভার করতে। উত্তেজনার কথা বলে বোঝাতে পারব না। স্বপ্নের মেলবোর্ন স্টেডিয়াম দেখে উত্তেজনার কথা ভুলে ভালোলাগায় আবিষ্ট হলাম। ব্র্যাডম্যান যখন স্বাগত জানাচ্ছিলেন, তখন মেলবোর্নের আকাশ কাঁদছিল! অস্ট্রেলিয়ানরা এ কান্নায় ব্যথিত নন। আপ্লুত। বৃষ্টিকে তারা আশীর্বাদ মনে করেন। ব্র্যাডম্যানের স্বাগত জানানোর পর বাঁয়ে চোখ পড়তেই দেখলাম আরেক লিজেন্ড ডেনিস লিলি সেই বিখ্যাত অ্যাকশনে বোলিং করছেন। লিলিকে কাটিয়ে ১০ গজ এগোতেই শেন ওয়ার্ন। এরপর আর কোনো ক্রিকেটার নন, অ্যাথলেট ক্যাথি ফ্রিম্যান! অস্ট্রেলিয়ার প্রথম আদিবাসী অ্যাথলেট হিসেবে ২০০০ সালের সিডনি অলিম্পিকে অংশ নিয়ে সোনা জিতে ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নেন স্থায়ীভাবে। লিজেন্ড ক্রিকেটার, অ্যাথলেটদের আবক্ষ মূর্তি দিয়ে সাজানো-গোছানো স্টেডিয়াম দেখে ভাবতে ভালো লাগছে যে, এখানে ২৬ ফেব্রুয়ারি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ। সাজানো-গোছানো, পরিপাটি স্টেডিয়াম দেখে কার্ড সংগ্রহ করতে যেতেই ভিরমি খাওয়ার জোগাড়! আইসিসি আমাকে অ্যাক্রিডিটেশন পাঠিয়েছে, তার ভিত্তিতে অস্ট্রেলিয়া ভিসাও দিয়েছে। অথচ অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডে আমার ছবি নেই। অবাক হলাম আইসিসির এমন আচরণে। কারণ জানতে চাইলে কার্ড প্রদানকারী কর্মকর্তা বলেন, 'আমি বলতে পারব না।' এ কেমন কথা! এত বড় একটি আসর, অথচ শুরুতেই অগোছাল! তারপরও মাফ করে দিলাম আইসিসিকে অ্যাক্রিডিটেশন দেওয়ায়।
শেষ পর্যন্ত ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় ছবি তুলে কার্ড করে দিল আমাকে। প্রথমেই কিছুটা হতাশ করলেও আইসিসির প্রতি তেমন ক্ষোভ রইল না অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড হাতে পাওয়ায়। যাই হোক, দেশের বাইরে এই প্রথম বিশ্বকাপ ক্রিকেট কাভার করছি। এর আগে অবশ্য ইংল্যান্ডে টি-২০ বিশ্বকাপ কাভার করেছি। তবে পূর্ণাঙ্গ বিশ্বকাপ বলতে তো এবারই প্রথম!