রিভিউ নেওয়ার পরও মুশফিকুর রহিমকে আউট দিলেন টিভি আম্পায়ার জোয়েল উইলসন? অথচ রিপ্লেতে বার বার দেখার পরও বোঝা যাচ্ছিল না বল প্রোটিয়া কিপার ডেন ভিলাসের তালুবন্দী হওয়ার আগে মুশফিকের ব্যাটে কিংবা গ্লাভসে স্পর্শ করেছে। এমন সিদ্ধান্ত সাধারণত 'বেনিফিট অব ডাউট' হিসেবে ব্যাটসম্যানের পক্ষেই যায়। অথচ মাঠের আম্পায়ারকে অনুসরণ করে আউটের সিদ্ধান্তটা বহাল রাখলেন ক্যারিবিয়ান টিভি আম্পায়ার। সাকিব-মুশফিকের জুটিটা যখন ক্রমে বড় হচ্ছিল, তখনই থমকে গেল বিতর্কিত সিদ্ধান্তে। ক্রিকেটে এমনটা ঘটেই। কখনো কখনো পরিস্থিতি এমন হয়, একটি ভুল সিদ্ধান্তই খেলার গতি পাল্টে দেয়। মুশফিকই ছিলেন কালকের সেরা পারফর্মার। প্রায় বছর খানেক পর টেস্টে হাফ সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছিলেন অধিনায়ক। ব্যাটও করছিলেন বেশ স্বাচ্ছন্দ্যেই। ক্যাপ্টেনের ব্যাটে স্বপ্ন উঁকি দিচ্ছিল। কিন্তু ৬৫ রানে মুশফিককে থামতে হলো। বলা ভালো থামিয়ে দেওয়া হলো। আর মুশফিক আউট হওয়ার পর যেন বালির বাঁধের মতো ভেঙে পড়ল বাংলাদেশের ইনিংস। চার উইকেটে ২১৫ রান থেকে দিন শেষে বাংলাদেশের স্কোর হয়ে গেল আট উইকেটে ২৪৬। শেষ ৩১ রান করতেই চার উইকেট হারিয়েছে টাইগাররা।
মুশফিকের বিতর্কিত সিদ্ধান্তটি বাদ দিলে প্রথম দিনে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে শুধু ব্যর্থতার চিত্রই চোখে পড়বে। ছয় ছয়জন ব্যাটসম্যানের রান দুই অঙ্কের কোটায়, অথচ সেঞ্চুরি নেই একটিও। হাফ সেঞ্চুরি কেবল মুশফিকের।
টেস্ট ক্রিকেটে নিয়মই হচ্ছে সেট হওয়ার পর ব্যাটসম্যানকে খেলতে হবে লম্বা ইনিংস। ধৈর্য ধরে পড়ে থাকতে হবে ২২ গজে। অথচ বাংলাদেশের ব্যাটসম্যান সেট হওয়ার পর শুরু করে দেন তাড়াহুড়া। তামিম-৬, ইমরুল-৩০, মুমিনুল-৪০, মাহমুদুল্লাহ-৩৫, মুশফিক-৬৫, সাকিব-৩৫, লিটন-৩ এমন চিত্র দেখা যায় সাধারণ টেস্ট খেলুড়ে নতুন কোনো দলের স্কোর বোর্ডে। অথচ টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার এক যুগ পরেও বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা আউট হয়ে যাচ্ছেন 'আনাড়ি' শট খেলে। চট্টগ্রাম টেস্টেও এমন দৃশ্য ছিল। সেট হওয়ার পরও ব্যাটসম্যানরা বিলিয়ে দিয়েছেন উইকেট। গতকাল মিরপুরে আবারও সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। কেন বার বার একই ঘটনা ঘটছে? এমন প্রশ্নে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে মুমিনুল যেন হালকা প্রতিবাদী হয়ে উঠলেন। তিনি বললেন, 'কোথায় বার বার ঘটছে। শেষ ইনিংসটা দেখলাম আর আজকেরটা দেখলাম। যারা ওপেনিং খেলছে তারা একশই করে। যেমন কিছু দিন আগে তামিম ভাই একশো, দুইশো করল। অন্যরাও ৬০-৭০-৮০ করেছে। আমি মনে হয় এই প্রথম ৪০ এর ঘরে আউট হলাম। মানুষ বলেই মাঝেমধ্যে ভুল হয়।' গতকাল ব্যাটসম্যানরা যে দায়িত্ব-জ্ঞানহীন ব্যাটিং করেছেন, সে কথাও মুমিনুল নিজের মুখেই স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, 'ওদের বোলারদের মধ্যে শুধু পেসাররাই ভালো বোলিং করেছে। ডুমিনি হয়তো একটা উইকেট ভালো পেয়েছে। আমার উইকেটটা খুব বাজে ছিল। লিটনের উইকেটটাও ভালো ছিল না। কায়েস ভাইয়েরটা ভালো বলে উইকেট ছিল। আমার মনে হয়, আমরা ওদের উইকেট দিয়ে এসেছি।' দিন শেষে সবাই তাকায় স্কোর বোর্ডের দিকে। বাংলাদেশের স্কোর মোটেও স্বাস্থ্যকর নয়। এই 'তক্তা মার্কা' উইকেটে প্রথম ব্যাট করে সাড়ে তিনশ কিংবা চারশ না হলে দক্ষিণ আফ্রিকার মতো প্রতিপক্ষকে চ্যালেঞ্জ জানানো সম্ভব নয় বলে মনে করেন মুমিনুল। বাংলাদেশের হাতে রয়েছে আর মাত্র দুই উইকেট। আজ কখন ইনিংস গুটিয়ে যাবে তা তো বলা যায় না। তবে মুমিনুলের আশা, এখনো তিনশ রান করার সামর্থ্য আছে বাংলাদেশের। 'আমার মনে হয়, এখনো তিনশ রান করা সম্ভব। আমাদের বোলাররা ভালো ডিফেন্স করতে পারে। আর নাসির যদি ভালো খেলে হয়ে যাবে। ৩০০ ভালো স্কোর হবে।'
টেস্টে বাংলাদেশের সবচেয়ে ধারাবাহিক ব্যাটসম্যান মুমিনুল। কিন্তু ঢাকা টেস্টের দুই ইনিংসেই আউট হয়েছেন বাজে শট খেলে। তাই নিজের ওপর যেন কিছুটা বিরক্ত তিনি। মুমিনুল বলেন, 'আমি সিদ্ধান্ত একটু ভুল নিচ্ছি। তবে আজ (গতকাল) আমার সব সিদ্ধান্তই ভালো ছিল। শুধু ওই সিদ্ধান্তটা খারাপ নিয়েছিলাম। আগের ম্যাচেও সিদ্ধান্তটা খারাপ ছিল। ইনশাল্লাহ খুব তাড়াতাড়ি এটা ওভারকাম করতে পারব।' টানা ভালো ব্যাটিং করার পর মনোযোগ সরে যাচ্ছে কিনা? এমন প্রশ্নে মুমিনুল বলেন, 'না'। আমার মনে হয় না মনোযোগ সরে যাওয়ার কোনো কারণ আছে। সব সময় যে জায়গায় রান আসে সে জায়গায় শট খেলি। মাঝেমধ্যে নিজের সেরা শটটাও কাজে লাগে না। এমন হয়ই। যেদিন হয় না সেদিন হাফ সুযোগগুলোও কাজে লাগে না। এই ব্যাপারে আমার আরও সচেতন হওয়ার দরকার। ব্যর্থতার দিনেও একটা সুখবর দিয়েছেন মুমিনুল। দ্বিতীয় দিন থেকেই নাকি উইকেটে স্পিনার টার্ন পাবেন। তাই বাংলাদেশের স্পিনাররা অনেক ভালো করবেন বলেই মনে করেন তিনি। এখন দেখা যাক, ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার পর বোলাররা সাফল্য বয়ে আনতে পারেন কিনা!
সংক্ষিপ্ত স্কোর (প্রথম দিন)
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস : ২৪৬/৮ (৮৮.১ ওভার) (মুশফিক ৬৫, মুমিনুল ৪০, মাহমুদুল্লাহ ৩৫, সাকিব ৩৫, ইমরুল কায়েস ৩০; ডুমিনি ৩/২৭, ডেল স্টেইন ৩/৩০।