মিড অনে ঠেলেই দ্রুত জায়গা বদল করে নেন মুশফিকুর রহিম। প্রান্ত বদল করে ব্যাট উঁচিয়ে ধরেন আকাশপানে। গগনে ব্যাট তোলার আনন্দে ও উচ্ছ্বাসের কারণ একটাই, হাফসেঞ্চুরি। 'মি. ডিপেন্ডেবল' মুশফিক আট মাস পর পঞ্চাশোর্ধ রানের একটি ইনিংস খেলেন কাল। এই হাফসেঞ্চুরি তাকে টানা ব্যর্থতার খোলশ ছেড়ে বেরুতে যেমন সহায়তা করেছে, তেমনি রক্ষা করেছে নিন্দুকের সমালোচনা থেকেও। কাল মিরপুরে সিরিজ মীমাংসা টেস্টে খেললেন ৬৫ রানের অধিনায়কোচিত একটি ইনিংস।
এপ্রিলে পাকিস্তানের বিপক্ষে আঙুলে ব্যথা পেয়েছিলেন মুশফিক। এরপর হারিয়ে ফেলেন ছন্দ। নিজেকে ফিরে পেতে চেষ্টার সর্বোচ্চটা করেছেন। ব্যাটিং গুরু নাজমুল আবেদীন ফাহিমের কাছ থেকেও টিপস নিয়েছেন। কিন্তু কোনো কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না। অবশেষে সব চাপ সামলে কাল খেললেন ৪৮ টেস্ট ক্যারিয়ারের ১৫ নম্বর হাফসেঞ্চুরি। টাইগার টেস্ট অধিনায়ক যখন ব্যাটিংয়ে নামেন, তখন স্কোর বোর্ডে লেখা ৮৬/৩। নেমে আত্দস্থ হতে একটু সময় নেন। ১৩ বল পরে প্রথম রানের খাতা খোলেন মুশফিক। এরপর ধীরে ধীরে উইকেটের সঙ্গে মানিয়ে নেন এবং ডিন এলগারের হঠাৎ লাফিয়ে উঠা বলে ক্যাচ দেওয়ার আগে খেলেন ৬৫ রানের আত্দবিশ্বাসী একটি ইনিংস। ১২৫ বলের ইনিংসে ছক্কা না থাকলেও ছিল বেশকিছু নিজস্ব ঢঙে হাঁকানো বাউন্ডারি। এর আগে টাইগার অধিনায়ক সর্বশেষ হাফসেঞ্চুরির ইনিংস খেলেছিলেন গত বছরের ২৫ অক্টোবর। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মিরপুরেই খেলেছিলেন ৬৪ রানের ঝকঝকে ইনিংস। তিন অংকের ম্যাজিক্যাল ১১৬ রানের ইনিংস খেলেছিলেন গত ৫ সেপ্টেম্বর, কিংসটাউনে।
এই মুুহূর্তে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সেরা ব্যাটসম্যান মুশফিক। বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকানো মুশফিক চরমভাবে সমালোচিত হচ্ছিলেন অফ ফর্মে থাকায়। টিম ম্যানেজমেন্টও চাচ্ছিল সে যেন কিপিং ছেড়ে শুধুমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলেন টেস্টে। কিন্তু রাজি হচ্ছিলেন না মুশফিক। অবশেষে টিম ম্যানেজমেন্টের ইচ্ছার কাছে পরাস্ত হয়ে এখন ব্যাটসম্যান হয়ে খেলছেন। তারপরও রানের দেখা পাচ্ছিলেন না। চট্টগ্রামে ভালো খেলতে খেলতে সাজঘরে ফিরেন ব্যক্তিগত ২৫ রানে। কাল সব চাপ পেছনে ফেলে রানের লাইনে উঠে আসেন ৪৮ টেস্টে ২৬৫০ রান করা মুশফিক। তবে ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে চরম ব্যর্থ ছিল তার ব্যাট। ফতুল্লা স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে রান করেছিলেন ২। পাকিস্তানের বিপক্ষে দুই টেস্টের চার ইনিংসে রান করেন ৪৪ এবং যার দুটিই আবার শূন্য।
এমন পারফরম্যান্স বড্ড বেমানান দেশসেরা ব্যাটসম্যানের নামের পাশে। সেটা জানতেনও মুশফিক। সেজন্য রানে ফিরতে মরিয়া টাইগার অধিনায়ক রানে ফিরেন হাফসেঞ্চুরির এক প্রত্যয়ী ইনিংস খেলে।