যে কোনও দেশের ক্রিকেট ভবিষ্যৎ তুলে আনার জন্য দুরন্ত মঞ্চ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ। এই প্রতিযোগিতা থেকে ক্রিকেটবিশ্ব পরবর্তীতে পেয়েছে যুবরাজ সিং, বিরাট কোহলি, স্টিভেন স্মিথ, শিমরন হেটমেয়ার, গ্রেম স্মিথ, মেহেদি হাসান মিরাজদের মতো ক্রিকেটারদের। ক্রিকেটবিশ্বের ‘সাপ্লাই লাইন’ বলা যেতে পারে এই প্রতিযোগিতাকে।
গতকাল রবিবার পোচেস্ট্রুমে ভারত-বাংলাদেশ fainale দ্বৈরথে দু’দলের মধ্যে পার্থক্য গড়ে দিয়েছে দ'দলের ক্রিকেটারদের আগ্রাসন। বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের আক্রমণাত্মক মনোভাব শুরু থেকেই ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছিল ভারতকে। সেই সঙ্গেই নিখুঁত বোলিংয়ের মিশেল এক অচেনা বাংলাদেশের ছবি তুলে ধরল ক্রিকেটবিশ্বের কাছে।
টসে হেরে শুরুতে ব্যাট করে ১৭৭ রানে শেষ হয়ে যায় ভারতের ইনিংস। জবাবে ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতিতে তিন উইকেটের জয় পায় বাংলাদেশ। বৃষ্টির কারণে শেষ ৯ ওভার বাকি থাকতে ম্যাচ বন্ধ করতে বাধ্য হন আম্পায়াররা। তখন ৫৪ বলে ১৫ রান বাকি। ডার্কলুইস পদ্ধতির অঙ্কে তখনও ভারতের চেয়ে ১৮ রানে এগিয়ে বাংলাদেশ। হাতে তিন উইকেট।
৪২তম ওভারে বৃষ্টি থেমে যাওয়ার পর ফের শুরু হয় ম্যাচ। মাত্র সাত রানের লক্ষ্যে নামতে হয় বাংলাদেশকে। এরপর নতুন রূপকথা রচনা করে ড্রেসিংরুমে ফেরেন বাংলাদেশ অধিনায়ক আকবর আলি ও রাকিবুল হাসান। ভারতের শেষ সাতটি উইকেট পড়েছে ২১ রানে। তার মধ্যে তিনটি রান আউট। এতগুলো রান আউট হলে যে কোনও দলের মনোবল নষ্ট হয়ে যায়। পাশাপাশি বোলিংয়ের সময়েও ভারতীয় অধিনায়ক প্রিয়মের কিছু সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের কাজটা সহজ করে দেয়।
রবি বিষ্ণুকে টানা স্পেল করাতে পারতেন অধিনায়ক প্রিয়ম। ছয় ওভারে ১৫ রানে চার উইকেট পাওয়ার পরে বিষ্ণুর আত্মবিশ্বাসও ছিল তুঙ্গে। কিন্তু সেই পরিস্থিতিতে সুশান্ত মিশ্রকে এনে রবির ছন্দ নষ্ট করে দেন প্রিয়ম। যে দিক থেকে রবি উইকেট পাচ্ছিল, সেই প্রান্ত পরিবর্তন করে ওকে নিয়ে আসে ভারত অধিনায়ক। ২২তম ওভারে অন্য প্রান্ত থেকে বল করতে এসে দশ রান দেন বিষ্ণু। এরপর ফের ২৯তম ওভারে ফেরানো হয় বিষ্ণুকে।
মাঝের সাত ওভার পেসার দিয়ে আক্রমণ করে ভারত। প্রয়োজনের চেয়ে স্পিনারদের কম ব্যবহার করেছে প্রিয়ম। অথর্ব আঙ্কোলেকরকে চার ওভারের বেশি বল করায়নি। ব্যবহার করতে পারেনি যশস্বীর লেগস্পিনও। ভারতীয় পেস বোলাররা বিশ্বকাপ জুড়ে দুরন্ত বল করলেও ফাইনালে ছিল একদম ছন্দহীন। বাংলাদেশের ১৭০ রানের মধ্যে ৩৩ রানই অতিরিক্ত। বিশ্বকাপের ফাইনালে এ ধরনের ভুল একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। সেই সঙ্গেই ফিল্ডিংয়ে ভারতকে পিছনে ফেলে দিয়েছে বাংলাদেশ।
ক্রিকেট বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বকাপ জিততে না পারলেও, ভবিষ্যতের দুই তারকাকে পেয়ে গেল ভারত। প্রথম জন অবশ্যই যশস্বী জাসোয়াল। দ্বিতীয় জন রবি বিষ্ণু। বাংলাদেশ ইনিংসের নবম ওভারে রবিকে দায়িত্ব দেয় অধিনায়ক প্রিয়ম গর্গ। তখন বিনা উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের রান ৫০। ১৬.১ ওভারের মধ্যে চার উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের স্কোর দাঁড়ায় ৬৫।
অনেকেই বিষ্ণুকে আফগান স্পিনার রশিদ খানের সঙ্গে তুলনা করছেন। রশিদের মতো রবিও মাথার পিছন থেকে বল ছাড়ে। ফলে লেগস্পিনের চেয়ে গতির সঙ্গে গুগলি করে ব্যাটসম্যানকে সমস্যায় ফেলে বিষ্ণু। গতকালের ফাইনালের ম্যাচে চারটি উইকেটই সে পায় গুগলিতে। গুগলির সঙ্গে ভারতের কিংবদন্তি লেগ-স্পিনার কুম্বলের মতো ফ্লিপারও যদি আয়ত্তে আনতে পারে বিষ্ণু, তা হলে ভারতীয় দলের দরজা আরও দ্রুত খুলে যেতে পারে তার জন্য।
বিডি প্রতিদিন/সিফাত আব্দুল্লাহ