নাগপুরে ইনিংস ব্যবধানে হার। দিল্লিতে পারফরম্যান্সে কিছুটা উন্নতি হলেও পরাজয়ই হয়েছে সঙ্গী। ভারত সফরে প্রথম দুই টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার এমন হতশ্রী দশা দেখে যদিও একদমই অবাক হননি মাইকেল ক্লার্ক। দলটির বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়কের মতে, একের পর এক ভুলের মাশুল দিচ্ছে তার উত্তরসূরিরা।
প্রথম টেস্টে ভারতের কাছে পাত্তাই পায়নি অস্ট্রেলিয়া। তিন দিনেই হারে ইনিংস ও ১৩২ রানে। দ্বিতীয় টেস্টেও তেমন লড়াই করতে পারেনি সফরকারীরা। এবারও তিন দিনে পায় ৬ উইকেটে হারের তেতো স্বাদ। ভারতের বিপক্ষে ২০২০ সালে ঘরের মাঠে ২-১ ব্যবধানে বোর্ডার-গাভাস্কার সিরিজ হেরেছিল অস্ট্রেলিয়া। টানা দুই টেস্টের হারে ট্রফি পুনরুদ্ধারের আশা এরই মধ্যে শেষ হয়ে গেছে তাদের। ভারতে এবারের সফরে কোনো প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেনি অস্ট্রেলিয়া। সিরিজ শুরুর আগে যা নিয়ে হয়েছিল অনেক আলোচনা।
বিগ স্পোর্টস ব্রেকফাস্ট পডকাস্টে ক্লার্ক বলেন, এটা ছিল সবচেয়ে বড় ভুলগুলোর একটি। যা দেখছি, তাতে আমি বিস্মিত নই। কারণ আমরা কোনো প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেনি। যা ছিল বড়, অনেক বড় ভুল। কন্ডিশনে অভ্যস্ত হওয়ার জন্য অন্তত একটি ম্যাচ খেলা উচিত ছিল।
নাগপুর টেস্টে ট্রাভিস হেডকে একাদশে না রেখে আলোচনার জন্ম দেয় অস্ট্রেলিয়া। দল নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুললেন ক্লার্কও। সঙ্গে ব্যাটসম্যানদের খেলার ধরনকেও কাঠগড়ায় তুললেন তিনি। ক্লার্ক বলেন, প্রথম টেস্টের দল নির্বাচনে ছিল বিশাল বড় ভুল। আর দ্বিতীয় টেস্টে (ভুল) সুইপিং, যা আমরা প্রথম টেস্টে যথেষ্ট দেখেছি। ইনিংসের শুরুতে সুইপ করার জন্য এই কন্ডিশন উপযুক্ত নয়। আর ইনিংসের শুরুতে কখনোই স্পিনের বিপক্ষে রিভার্স সুইপ করা সঠিক সিদ্ধান্ত নয়।
নাগপুরের স্পিন সহায়ক উইকেটে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানরা যেখানে মুখ থুবড়ে পড়ে, সেখানেই দুর্দান্ত ব্যাটিং উপহার দেয় ভারত। একমাত্র ইনিংসে তারা করেছিল ৪০০ রান। দিল্লিতে প্রথম ইনিংসে (২৬৩ রান) কিছুটা ভালো করেও দ্বিতীয়ভাগে ফের পথ হারিয়ে ফেলে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানরা। বিশেষ করে সুইপ ও রিভার্স সুইপ শট কাল হয় তাদের জন্য। ১১৩ রানে গুটিয়ে যাওয়া দ্বিতীয় ইনিংসে তাদের ৬ ব্যাটসম্যানই আউট হন সুইপ কিংবা রিভার্স সুইপ করে।
স্বাগতিকদের দেখে এই কন্ডিশনে ব্যাটিংয়ের ধারণা নেওয়ার পরামর্শ উত্তরসূরিদের দিলেন ক্লার্ক। তিনি বলেন, মনে হচ্ছে যে আমরা ভারতের ব্যাটিং দেখছিই না। আমরা কেন তাদের উদাহরণ হিসেবে নিচ্ছি না এবং এভাবে ভাবছি না যে, ‘ঠিক আছে, এই ছেলেরা এই কন্ডিশনের সঙ্গে পরিচিত এবং তারা এভাবে খেলছে।’ যখন তারা এভাবে এত ভালো খেলছে, তাহলে আমরা কেন ভিন্ন কিছু করার চেষ্টা করছি? আমরা ২০০ রান করতে পারলে আমাদের জেতার সম্ভাবনা ছিল... একসময় আমাদের স্কোরও ছিল ১/৬০।
প্যাট কামিন্সের নেতৃত্বের ধরনের দিকেও আঙুল তুলেছেন ক্লার্ক। দিল্লিতে ১১৫ রানের লক্ষ্যে ভারতের ৪ উইকেট তুলে নিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। আরও আক্রমণাত্মক হলে ম্যাচ জয়ের সম্ভাবনা তৈরি হতো বলে মনে করেন ২০১৫ বিশ্বকাপ জয়ী এই অধিনায়ক।
তিনি বলেন, আমাদের কৌশলের কী হয়েছে আমি জানি না। স্কোরবোর্ডে স্রেফ ১০০ রান ছিল আমাদের। এক পর্যায়ে, প্যাটি কামিন্স চারজন ফিল্ডার বাউন্ডারিতে রাখে। টেস্ট ম্যাচের তখনও আড়াই দিন বাকি। ওই অবস্থায় হয় ভারতকে একশর নিচে থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে, নয়তো হারতে হবে; যেকোনো একটা।
ক্লার্ক আরও বলেন, ২০ ওভারে হার বা দুই দিনে, একই কথা। তাই ফিল্ডারদের উপরে তুলে এনে সিলি পয়েন্ট, লেগ শর্টে রাখতে হবে। যদি বল টার্ন করে, বাউন্স করে…ব্যাটসম্যান সামান্য ভুল করলেই আউট হবে। অস্ট্রেলিয়াকে বোলিংয়ে এটাই করতে হতো। আমি জানি খুব অল্প রানের লিড ছিল। কিন্তু আমাদের তখনও জেতার জন্য চেষ্টা করতে হতো। আমাদের মিড-অফ, মিড-অন ফিল্ডার পেছনে ছিল, ডিপ পয়েন্ট, ডিপ স্কয়ার লেগে ফিল্ডার রাখা হয়েছিল।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ