ক্রিকেট মাঠে ভারত-পাকিস্তান লড়াই মানেই আলাদা উত্তেজনা। ক্রিকেটার, কর্মকর্তা, সমর্থক, ক্রিকেটপ্রেমী, আম জনতা-গোটা ক্রিকেট বিশ্বই তাকিয়ে থাকে এই ম্যাচের দিকে। দু’দেশের রাজনৈতিক দূরত্বের কারণে ২২ গজে এখন আর তেমন মুখোমুখি হয় না ভারত-পাকিস্তান। তাই কোনো প্রতিযোগিতায় বছরে দু’-এক বার দেখা হলেই চড়তে শুরু করে উত্তেজনার পারদ। সে উত্তেজনার পারদ শ্রীলঙ্কার মেঘলা আবহাওয়াতেও আঁচ কমার সম্ভাবনা নেই।
ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে পরাজয় ‘নিষিদ্ধ’। তবু একটি দলকে হারতেই হয় খেলার নিয়মে। ফুটবল, হকির মতো ম্যাচ ড্র রাখার সুযোগ নেই লিগ বা গ্রুপ পর্বে। রোহিত শর্মা, বাবর আজমদের এই তথ্য অজানা নয়। তাদের মধ্যে যতই বন্ধুত্ব থাকুক, মাঠের ভেতরে তার কোনো জায়গা নেই। ভারত-পাকিস্তান লড়াই ভারতীয় উপমহাদেশের ক্রিকেট সভ্যতার অবিচ্ছেদ্যই শুধু নয়, অপরিহার্য অংশ। বিশ্বের যে প্রান্তেই হোক, এই ম্যাচ ঘিরে উন্মাদনার কমতি থাকে না।
আইসিসির ক্রমতালিকা অনুযায়ী, ওয়ানডে ক্রিকেটে পাকিস্তান এখন এক নম্বর দল। ভারত রয়েছে তৃতীয় স্থানে। এই ম্যাচে আইসিসির র্যাঙ্কিংয়ের কোনো গুরুত্ব নেই। কোনো দিন ছিলও না। খাতায় কলমে দলগত শক্তির হিসাবও ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে কার্যত অপ্রাসঙ্গিক। এগিয়ে থেকে মাঠে নামে না কেউ। ক্রিকেটপ্রেমীরা তাকিয়ে থাকবেন শুধু ব্যাট বলের লড়াইয়ের দিকে। একদিকে বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা, শুভমন গিলদের সঙ্গে লড়াই হবে শাহিন শাহ আফ্রিদি, নাসিম শাহ, হারিস রউফদের। আবার বাবর আজম, মোহাম্মদ রিজওয়ান, ইফতিখার আহমেদদের চ্যালেঞ্জ জানাবেন যশপ্রীত বুমরা, মোহাম্মদ শামি, মোহাম্মদ সিরাজরা।
গেল বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর প্রথম বার মুখোমুখি হবে দু’দেশ। ২০১৯ বিশ্বকাপের পর প্রথম ৫০ ওভারের ম্যাচ খেলবে তারা। নেপালের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে নিজেদের পরখ করে নেওয়ার একটা সুযোগ পেয়েছে পাকিস্তান। রোহিতদের প্রথম পরীক্ষা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। চোট সারিয়ে দীর্ঘদিন পর দলে ফেরা শ্রেয়স আয়ারের কেমন ফর্মে আছেন, তার একটা আভাস পাওয়া যাবে। ব্যাটিং অর্ডারের চার নম্বর জায়গা নিয়ে রাহুল দ্রাবিড়দের চিন্তা বাড়বে অথবা কমবে। স্বস্তির হল, কোনো দলেই চোট-আঘাতের সমস্যা নেই।
নেপালকে হারিয়ে সুপার ফোরে পাকিস্তানের জায়গা প্রায় পাকা। তাতে অবশ্য বাবরের দলের চাপ মুক্ত থাকার সুযোগ নেই। কারণ, ভারতেরও দ্বিতীয় প্রতিপক্ষ নেপাল। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের আঙিনায় যারা নেহাতই শিশু। তাদের কাছে রোহিতেরা হারবেন, তা অতি বড় নেপাল সমর্থকও বিশ্বাস করেন না। তাই ভারত বাড়তি চাপ নিয়ে মাঠে নামবে এমন মনে করার কারণ নেই। দু’দলেরই সুপার ফোরে ওঠা এক রকম নিশ্চিত। ফলে আরও একটা ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ দেখতে পাবেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। এই হিসাব নিয়েও মাথাব্যথা নেই সমর্থকদের। জিততে হবে-এটাই প্রথম এবং শেষ কথা। গ্রুপের ম্যাচ হোক বা ফাইনাল, প্রদর্শনী ম্যাচ হলেও প্রত্যাশার চাপ নিয়ে মাঠে নামতে হয় ক্রিকেটারদের।
টস হওয়ার পর দু’দেশের রাস্তা ক্রমশ ফাঁকা হতে শুরু করে। ভিড় বাড়তে শুরু করে টেলিভিশনের সামনে। বাড়তে শুরু করে চাপ। চার, ছয় বা আউট হলে উদ্বেল হয় গ্যালারি। এক দেশের সমর্থকদের চিৎকার সীমানা পেরিয়ে পৌঁছে যায় অন্য দেশে।
এশিয়া কাপে এখন পর্যন্ত ১৩ বার মুখোমুখি হয়েছে ভারত-পাকিস্তান। জয়ের হিসাবে পাকিস্তানের চেয়ে কিছুটা ভারত। পাকিস্তানের পাঁচ জয়ের বিপরীতে ভারত জিতেছে ৭টি ম্যাচ। একটি ম্যাচ হয়েছে পরিত্যক্ত। এছাড়া এশিয়া কাপের ওয়ানডে ফরম্যাটে দু'দলের শেষ দুই ম্যাচে পাকিস্তানকে হারিয়েছিল ভারত।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত