১৮ অক্টোবর, ২০২১ ০৯:৪৯

লজ্জার হারে শুরু বিশ্বকাপ

মেজবাহ্ উল হক, মাস্কাট থেকে

লজ্জার হারে শুরু বিশ্বকাপ

স্কটল্যান্ডের উইকেট পতনের পর সাইফুদ্দিনকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন সতীর্থরা -এএফপি

দুই দলের পাওয়ার প্লেতেই ম্যাচের গতিপথ অনেক পরিষ্কার হয়ে যায়! প্রথম ছয় ওভারে স্কটল্যান্ড যেখানে এক উইকেট হারিয়ে ৩৯ রান করে সেখানে বাংলাদেশের  স্কোর দুই উইকেট হারিয়ে মাত্র ২৫। এরপর আর ম্যাচে ফিরতেই পারেনি মাহমুদুল্লাহর দল। তারপর ৬ রানের হারের লজ্জার হার। 

দিনের প্রথম ম্যাচে যে উইকেটে পাপুয়া নিউগিনির বিরুদ্ধে ১৩১ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১০ উইকেট হারে রেখে জিতে যায়, সেখানে ১৪১ রানের টার্গেটে  খেলতে নেমে ১০ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ করে ১৩৪। আগামীকাল দ্বিতীয় ম্যাচে সেই ওমানের বিপক্ষেই সাকিবদের ‘ডু অর ডাই’ ম্যাচ। মহা টেনশন। হারলেই স্বপ্নের টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে পড়তে হবে। বাংলাদেশ কি পারবে এই হারের লজ্জা থেকে বেরিয়ে জয়ের বন্দরে নোঙর  ফেলতে? ক্রিকেট অনিশ্চয়তার খেলা। তাই বলে কি এতটাই অনিশ্চয়তা যে ওমানের এই রানবন্যার উইকেটে স্কটল্যান্ডের মতো সহজ প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ১৪১ রানও করতে পারবে না! 

অথচ এই দলটাই আগের দুই সিরিজে ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মতো দলকে হারিয়েছে। হয়তো ঘরের মাঠে দুই পরাশক্তির বিরুদ্ধে সিরিজই টাইগারদের জন্য ‘কাল’ হয়ে গেছে। কেননা সিরিজ জয়ের নেশায় বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট যে ভুলেই গিয়েছিল বিশ্বকাপের প্রস্তুতির কথা। তা না হলে বিশ্বকাপের মতো আসরের আগে কেন ‘স্লো উইকেটে’ খেলবে বাংলাদেশ! যদিও এই হারের কোনো ব্যাখ্যা নেই! ম্যাচের পর সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারেননি অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদও। কেবল তার চোখে মুখে ছিল হতাশা ছবি।

নির্বাক নয়নে প্রেস কনফারেন্সে ক্যাপ্টেন বললেন, ‘উইকেট ভালো ছিল। কিন্তু আমরা ভালো করতে পারিনি। এই উইকেটে ১৪১ রান আহামরি কিছু নয়। আমাদের ব্যাটসম্যানরা সুযোগটা নিতে পারেননি। বোলাররাও ততটা ভালো করতে পারেননি।’ এই স্কটিশরা তাদের সেরাটা দেখিয়ে দিয়েছেন। বিশেষ করে ব্যাটিংয়ে। তারা প্রথম উইকেট পতনের পর ৮ রানের মধ্যে ৫ উইকেট হারিয়েছিল।

কিন্তু শেষের দিকে ক্রিস গ্রেভসের তান্ডবে ৫৩ রানে ৬ উইকেট হারানো দলটি শেষ পর্যন্ত ৯ উইকেটে করে ১৪০ রান। গ্রেভস মাত্র ২৮ বলে খেলেছেন ৪৫ রানের ইনিংস। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ইনিংসের শুরু থেকেই ধুকতে থাকে বাংলাদেশ। ব্যর্থ হন দুই ওপেনারই। সৌম্য সরকার ৫, লিটন দাস ৫। দুই প্রস্তুতি ম্যাচে দুর্দান্ত ব্যাটিং করে  সৌম্য সরকার একাদশে জায়গা করে নেন। তাকে জায়গা ছেড়ে দিতে নিয়মিত ওপেনার নাঈম শেখকে বেস্ট ইলেভেন থেকেই সরে যেতে হয়। কিন্তু সুযোগটা কাজে লাগাতে পারলেন না তিনি। মূল লড়াইয়ে সৌম্য বরাবরের মতোই ব্যর্থ। ডাবল ফিগারেই নিতে পারলেন না নিজের স্কোরকে।

ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ। আরেক ওপেনার লিটন দাসও নিজেকে মেলে ধরতে পারলেন। সৌম্যর মতো তার ইনিংসও ৫ রানেই গুটিয়ে গেল। তবে লিটনের আউটটি খানিকটা দৃষ্টিকটূ। স্কটিশ  বোলার হুইলের স্লোয়ার বুঝতে না পেরে মিড উইকেটে তুলে দিলেন সহজ ক্যাচ। ওয়ান ডাউনে নামা সাকিব আল হাসানকে দেখে মনে হচ্ছিল বেশ আত্মবিশ্বাসী। কারণ, দারুণ বোলিং করেছেন। মাত্র ১৭ রানে নিয়েছেন ২ উইকেট।

লঙ্কান বোলার লাসিথ মালিঙ্গাকে পেছনে ফেলে গতকালই টি-২০র ইতিহাসে সর্বোচ্চ উইকেট শিকার করেছেন। দারুণ ফিল্ডিং করে একটি ক্যাচও নিয়েছেন। ব্যাটিং সতর্কতার শুরুও করেছিলেন। কিন্তু আহামরি কিছু করতে পারেননি। ২৮ বল থেকে করেছেন মাত্র ২০। হয়তো সাকিবের মতো বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার রানের চেয়ে ৮ বল বেশি না হজম করতে ম্যাচের ফল অন্যরকম হতে পারত।

তবে সাকিবের আউটের পরও সুযোগ ছিল। বেশ কিছুদিন থেকে অফ ফর্মে থাকা মুশফিক এ ম্যাচে ফর্মে ফিরলেন। ৩৬ বলে খেলেছেন ৩৮ রানের এক ইনিংস। নিজে ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বের হতে পারলেও ‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’ নামের প্রতি সুবিচার করে দল রক্ষা করতে পারেননি। দলের বিপদের সময় উইকেটে থেকেও খেলতে পারলেন না ‘ক্যাপ্টেনস নক’।

২২ বলে ২৩ রান করে কেবল নিজের স্কোরকে একটুখানি বাড়ালেন। দুই বিগহিটার নুরুল হাসান ও আফিফ হোসেনও ফ্লপ। কেবল শেষ দিকে ৫ বলে ১৩ রান করে জয়ের ব্যবধান কমিয়েছেন মেহেদী হাসান। সম্মিলিত ব্যর্থতায় লজ্জা দিয়েই শুরু হলো স্বপ্নের বিশ্বকাপ মিশন।

বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর