রবিবার, ৭ জুলাই, ২০১৩ ০০:০০ টা

ডেভিড কপারফিল্ড

ডেভিড কপারফিল্ড

একটি ট্রেন ঢেকে দেওয়া হলো বিশাল কাপড় দিয়ে। উৎসুক জনতা অপেক্ষা করছে। এরপর কি হবে? যে লোকটি কাপড় দিয়ে ঢেকে দিচ্ছেন তিনি বলছেন গোটা ট্রেনটাই নাকি হাওয়ার সঙ্গে মিশে যাবে। সত্যিই তাই হলো। ট্রেনটি মুহূর্তেই হারিয়ে গেলো। মানুষকে এভাবেই তার জাদু শিল্প দিয়ে মুগ্ধ করেন ডেভিড কপারফিল্ড। নিউইয়র্কে ১৯৫৬ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন তিনি। জন্মের পর নাগরিক সমস্যায় পড়তে হয় ডেভিডকে। কারণ, বাবা ডেভিড কটকিন ছিলেন রাশিয়ান এবং মা রেবেকা ছিলেন ইসরায়েলের। যদিও পরে এ সমস্যা থেকে ডেভিডের পরিবার বের হয়ে আসে। ছোটবেলা থেকেই জাদুর প্রতি ডেভিডের অন্যরকম আগ্রহ ছিল। নিউজার্সিতে থাকতে মাত্র ১২ বছর বয়স থেকেই তিনি জাদুর ওপর শিক্ষা গ্রহণ শুরু করেন। মজার বিষয় ছিল ডেভিড ছিলেন আমেরিকার ম্যাজিশিয়ান সোসাইটির সর্বকনিষ্ঠ সদস্য। এমনকি মাত্র ১৬ বছর বয়সে তিনি নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাজিকের শিক্ষক হয়ে যান। বিশ্ববাসীর কাছে এ ব্যক্তিটির পরিচয় 'রহস্যে ঘেরা মানব' হিসেবে। এ ম্যাজিশিয়ান বলেন, 'ম্যাজিক যদিও চোখের ধাঁধা কিন্তু তারপরও ম্যাজিক ইজ এন আর্ট। আর্ট অব লাইফ'।

বছরে পাঁচশ'র বেশি স্টেজ শো করেন তিনি। শুভাকাঙ্ক্ষীরা মনে করেন বছরে এতো শো করা তার উচিত নয়। তাকে আরেকটু ধীরে এগুনো উচিত। এক সাক্ষাৎকারে এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'সত্যি কথা হলো, আমি যা করছি সেটাকে আমি খুব ভালোবেসেই করছি। আর কাজের অধিক চাপ নিয়ে কথা তো! আমি এখনো ক্লান্ত হয়নি। জাদুর শৈল্পিক আনন্দে আমিও ঘোরের মধ্যেই দিন কাটাচ্ছি। তবে যেদিন ক্লান্ত হব সেদিন ভেবে দেখব।' জাদুর প্রতি জীবনের শুরুতেই তার ভেতর আগ্রহ তৈরি হয়। সেটা তার দাদার সঙ্গে থেকে। তিনি একবার তাকে তাসের কার্ড দিয়ে জাদু দেখাচ্ছিলেন। তখন ডেভিডের বয়স মাত্র সাত। সে সময় ক্ষুদ্র এ জাদু তার ভেতরটা নাড়া দেয়। তবে দুঃখের বিষয় হলো_ তিনি যখন জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন ঠিক তার আগেই তার দাদা পৃথিবী ছেড়ে চলে যান। কিন্তু প্রতি রাতে ক্লান্ত হয়ে তিনি যখন ঘরে ফেরেন তখন তার জাদুর সব কৃতিত্ব দাদাকে উৎসর্গ করে দেন। ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত অসহায়ত্বের মধ্যে কেটেছে ডেভিডের জীবন। মূলত সামাজিকভাবে নিজেকে উপরের সারিতে নিয়ে যাওয়ার জন্যই ডেভিড জাদু শিল্পে মনোনিবেশ করেন। তিনি যখন জাদু শিখছিলেন এবং মানুষকে দেখানো শুরু করলেন ঠিক সে মুহূর্তে থেকেই সবাই তাকে আলাদা চোখে চিনতে শুরু করে। বিষয়টা ডেভিডকে অন্যরকম অনুভূতি এনে দেয়। আর যখন স্কুলে ভর্তি হয়ে অন্য সবাইকে জাদু দেখাতে শুরু করেন তখন ক্লাসের মেয়েরাও তার দিকে ভিন্ন দৃষ্টিতে তাকালো। মূলত এসব দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই নিজেকে জাদুশিল্পী হিসেবে তৈরি করেছেন তিনি। তবে বড় হয়ে এ শিল্পের প্রতি মোহ অনুভব করেন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, 'জীবনে চর্চার বিকল্প কিছু আমি পাইনি। শুধু জাদু নয়; আমি তরুণদের বলব, যদি তোমাদের অন্য কোনো ক্ষেত্রেও প্রতিভা থাকে। তবে সেই প্রতিভার সঠিক মূল্যায়ন একমাত্র চর্চা দিয়েই সম্ভব।' সামাজিক কর্মকাণ্ডেও পিছিয়ে নেই ডেভিড। প্রজেক্ট ম্যাজিক নামে তিনি একটি শো করে থাকেন। সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ ফান্ড কালেক্ট হয়। সে অর্থ দিয়ে বর্তমানে ৩০টি দেশে প্রায় ১০০০ হাসপাতালে স্ট্রোক রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

 

 

সর্বশেষ খবর