মঙ্গলবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

দখলে অযত্নে যাত্রীছাউনি

লাকমিনা জেসমিন সোমা

দখলে অযত্নে যাত্রীছাউনি

রাজধানীর অধিকাংশ যাত্রীছাউনির অবস্থাই এমন করুণ। দীর্ঘদিনের অযত্ম অবহেলায় টিন কিংবা লোহার পাতলা শিটে তৈরি ছাউনিগুলোতে মরিচা পড়ে ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। ছবি : জয়ীতা রায়

মাথার উপরে খোলা আকাশ। পাতলা লোহার শিটে তৈরি পেছন দিকের দেয়ালের অবস্থাও করুণ। যাত্রীছাউনি নাম হলেও নেই কোনো যাত্রী কিংবা ছাউনি। অযত্ম অবহেলা ও সংস্কারের অভাবে এভাবেই অকেজো পড়ে আছে রাজধানীর এ যাত্রীছাউনিটি। কারওয়ান বাজার থেকে ফার্মগেট আসতে রাস্তার ডান পাশেই দেখা যায় এ চিত্র। তবে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, শুধু ফার্মগেট সংলগ্ন এ যাত্রীছাউনিটিই নয়, রাজধানীর অধিকাংশ যাত্রীছাউনির অবস্থাই এমন করুণ।

জানা গেছে, কেবল ভাঙাচোরা পুরনো অবকাঠামোর জন্যই নয়; হকারদের আধিপত্য, ছিন্নমূল মাদকসেবীদের দৌরাত্ম্য এবং ফুটপাথের দোকানিদের কারণে যাত্রীদের তেমন কাজেই আসছে না ছাউনিগুলো। এমনকি দোকান ও বিজ্ঞাপন ভাড়া বাবদও কোনো রাজস্ব পাচ্ছে না সিটি করপোরেশন বা সরকারের সংশ্লিষ্ট কোনো দফতর। ফলে একদিকে যেমন লাখ লাখ টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার অন্যদিকে যাত্রীসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, দুই সিটিতে বর্তমানে প্রায় আড়াইশ যাত্রীছাউনি রয়েছে। এগুলোর মধ্যে অধিকাংশের অবস্থাই বেহাল। দীর্ঘদিনের অযত্ম অবহেলায় টিন কিংবা লোহার পাতলা শিটে তৈরি ছাউনিগুলোতে মরিচা পড়ে ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। সেখানে বসার জায়গা থেকে শুরু করে পেছনের দেয়াল কিংবা মাথার উপরের ছাউনি; সবই ব্যবহৃত হচ্ছে বিজ্ঞাপনের কাজে। ভারী বিলবোর্ডের চাপ সহ্য করতে না পেরে যাত্রীছাউনিগুলো প্রতিনিয়তই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অথচ এ বিলবোর্ডগুলোর বেশির ভাগই অবৈধ, যেগুলো থেকে সিটি করপোরেশন কোনো অর্থ পায় না। মিরপুরে ১০ নম্বর গোলচত্বরে বেশ পাকাপোক্তভাবেই নির্মাণ করা হয়েছে একটি যাত্রীছাউনি। সেখানে যাত্রীদের দাঁড়ানোর মতো তিল পরিমাণ জায়গা নেই। চা-সিগারেট, কনফেকশনারি ও ফ্লেক্সিলোডের দোকানে ভরে গেছে যাত্রীছাউনি। যাত্রীদের বসার জায়গায় বেঞ্চি পেতে ছাউনি দখল করে নিয়েছে চায়ের দোকানদাররা। অথচ শত শত যাত্রী ঝুঁকিপূর্ণভাবে রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে থেকেই বাসে উঠছে। মিরপুর থেকে রাজধানীর সবকটি রুটেই বাস যায় এ ১০ নম্বর গোলচত্বর হয়ে। ফলে ব্যস্ততম এ রাস্তাটির ওপর দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীদের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। নিয়মিত এ এলাকা থেকে বাসে চড়ে উত্তরা অফিস করতে যান এমন একজন যাত্রী বলেন, এখানে একটা যাত্রীছাউনি থাকলেও বসার কোনো জায়গা নেই। বেঞ্চগুলোতে বসতে গেলে চায়ের দোকানিদের সোজাসাপটা কথা, ‘চা-টা না খেলে উঠে যান। অকারণে বসতে পারবেন না।’ একইভাবে গুলিস্তান এলাকার একটি যাত্রীছাউনিতে গিয়ে দেখা যায়, দিনদুপুরে দুই ছিন্নমূল মাদকসেবী ঝিমুচ্ছে। পাশেই কয়েকজন স্কুলশিক্ষার্থী বাসের জন্য অপেক্ষা করছে। ফার্মগেট থেকে খামারবাড়ী যেতে সেজান পয়েন্ট সংলগ্ন মূল রাস্তার বাম পাশে বেশ বড় দুটি যাত্রীছাউনি রয়েছে। এ ছাউনি আদৌ কোনোদিন যাত্রীদের কল্যাণে এসেছে কিনা সন্দেহ। দীর্ঘদিন ধরেই সেখানে ভাসমান খাবারের দোকানসহ স্থায়ীভাবে গড়ে উঠেছে আরও বেশ কিছু দোকানপাট।

জানা যায়, আশির দশকে অবিভক্ত সিটি করপোরেশন রাজধানীর যাত্রীছাউনিগুলো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে বরাদ্দ দিয়েছিল। এসব বরাদ্দের মেয়াদও অনেক আগেই শেষ হয়েছে। কিন্তু এরপর আর সেগুলো নবায়ন করা হয়নি। ফলে সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের ছত্রছায়ায় অবৈধভাবে দখল করে ব্যবসা চালাচ্ছেন প্রভাবশালীরা। অনেকে আবার সরাসরি ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ফলে তাদের উচ্ছেদ করতে গেলেও বিভিন্ন ধরনের হয়রানির শিকার হতে হয়েছে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষকে।

যাত্রীছাউনি দখল করে দোকান বসানোর বিষয়ে একাধিক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বললেও দোকান ভাড়া ও যাত্রীছাউনির বিষয়ে কেউই কথা বলতে রাজি হননি। উত্তর সিটি করপোরেশনের সম্পত্তি বিভাগ জানায়, যাত্রীছাউনি থেকে তারা কোনো ভাড়া পায় না। যাত্রীছাউনিগুলো জবরদখল করেই ব্যবসা করছেন প্রভাবশালীরা। ব্যস্ততম শাহবাগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে দুটি যাত্রীছাউনি থাকলেও চারটি ওষুধের দোকান বানিয়ে সেগুলো দখল করে রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। যদিও দুটি ছাউনির দেয়ালেই উচ্ছেদের বিরুদ্ধে সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের স্থিতাবস্থার সাইনবোর্ড ঝুলানো হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, এ এলাকার দুজন প্রভাবশালী ব্যক্তি ছাউনিগুলো দখল করে এসব ব্যবসায়ীর কাছে ভাড়া দিয়েছেন। দোকানগুলোর এক কর্মচারী বলেন, তার মালিককে ভাড়া বাবদ মাসে ছয় হাজার টাকা দিতে হয়। অপর একটি দোকানের কর্মচারী বলেন, মাসে চার হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে তারা এ ব্যবসা চালাচ্ছেন।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর