বৃহস্পতিবার, ১১ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

অভিনেতা থেকে নেতা

রণক ইকরাম

রাজনীতিকে বলা হয় দুষ্টলোকের সর্বশেষ অবলম্বন। কিন্তু সব রাজনীতিবিদের ক্ষেত্রে কথাটি খাটে না। বিশ্বে এমন অনেক রাজনীতিবিদ রয়েছেন, যাদের কর্মকান্ড পৃথিবীর ইতিহাসে সব মানুষের জন্য অনুকরণীয় আদর্শ হয়ে আছে। কোন রাজনীতিবিদ কতটা আদর্শিক হতে পারেন সেটি নির্ভর করে তার মানসিকতা, দল, দেশ ও সংশ্লিষ্ট পটভূমির ওপর।  তবে রাজনীতিবিদ মাত্রই কমবেশি তারকাখ্যাতি থাকে। কিন্তু আগে থেকেই তারকাখ্যাতি রয়েছে এমন লোকজন যখন রাজনীতিতে জড়ান, তখন ব্যাপারটা কেমন হয়? হ্যাঁ, বিশ্ব ইতিহাসে এমন অনেক অভিনয়শিল্পী বা শোবিজ তারকা রয়েছেন, যারা শেষ জীবনে এসে রাজনীতির অঙ্গনে আলো ছড়িয়েছেন।  অভিনয় থেকে রাজনীতিতে এসে সাফল্য পাওয়া কিংবা আলোচিত হওয়া ব্যক্তিদের নিয়েই আমাদের এই আয়োজন।

 

আর্নল্ড শোয়ার্জনেগার

আর্নল্ড শোয়ার্জনেগার একজন অস্ট্রিয়ান-আমেরিকান বডিবিল্ডার, অভিনেতা, মডেল, ব্যবসায়ী এবং রাজনীতিবিদ। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের ৩৮তম গভর্নর ছিলেন। ছেলেবেলায় শোয়ার্জনেগার খেলাধুলায় ভালো ছিলেন এবং এ ব্যাপারে তিনি তার বাবার দ্বারায় প্রভাবিত হয়েছিলেন। তিনি ১৫ বছর বয়স থেকে ভারোত্তোলন শুরু করেন, কিন্তু এর অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করতেন। এ জন্য তেমন একটা স্বাস্থ্যবান না হলেও তিনি ভেবেছিলেন, জিমে গিয়ে শরীর গঠনে এবং অলিম্পিক লিফটিং করতে পারবেন। এক বক্তৃতায় শোয়ার্জনেগার বলেছেন, ১৭ বছর বয়স থেকে তিনি এ ব্যাপারে পরিকল্পনা শুরু করেন। তার বাবা চেয়েছিলেন তার মতো পুত্র শোয়ার্জনেগারও পুলিশ অফিসার হোক। অস্ট্রিয়ার গ্র্যাজ নামে এক শহরের একটি জিমে তিনি প্রথম শরীর গঠন শুরু করেন। এই শহরের এক সিনেমা হলে তিনি বিখ্যাত সব বডিবিল্ডার, যেমন- রেগ পার্ক, স্টিভ রিভস, জনি উইসমুলারকে বড় পর্দায় দেখার সুযোগ পেলেন। তাদের দেখে তিনি দারুণভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।

তিনি ২২ বছর বয়সে মিস্টার ইউনিভার্স হন। এ ছাড়া তিনি সাতবার মিস্টার অলিম্পিয়া প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। অবসর নেওয়ার পরও শোয়ার্জনেগার বডিবিল্ডিং বা শরীর গঠন জগতে একজন প্রখ্যাত ব্যক্তি। শরীর গঠন বিষয়ে তিনি একাধিক বই ও নিবন্ধ লিখেছেন। শোয়ার্জনেগার হলিউড চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করেন। ‘দ্য টার্মিনেটর’, ‘কোনান দ্য বার্বারিয়ান’, ‘প্রিডেটর’ তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র। শোয়ার্জনেগার রিপাবলিকান পার্টির একজন পদপ্রার্থী হিসেবে ২০০৩ সালের অক্টোবরে ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর নির্বাচিত হন এবং ২৩ নভেম্বর শোয়ার্জনেগার শপথগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে ২০০৬ সালের ৭ নভেম্বর তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হন। এই নির্বাচনে তিনি ডেমোক্রেটিক পদপ্রার্থী ফিল আঞ্জেলিডেসকে পরাজিত করেন। বর্তমানে তিনি রাজনৈতিক দল রিপাবলিকান পার্টির একজন সক্রিয় সদস্য।  কাজ করে যাচ্ছেন মানুষের কল্যাণে।

 

জর্জ মারফি

মার্কিন ইতিহাসে প্রথম সফলতম ব্যক্তি যিনি একজন সফল অভিনেতার পর একজন সফল রাজনীতিক

জর্জ মারফি জন্মগ্রহণ করেন ১৯০২ সালের ৪ জুলাই, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। তিনি পেশায় ছিলেন একজন নৃত্যশিল্পী, অভিনেতা এবং রাজনীতিক। মঞ্চ অভিনেতা সার্লি টেম্পলের হাত ধরে ১৯২৭ সালে গীতি এবং নৃত্য নির্দেশক হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন। ১৯৩০ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত একজন সফল গীতি এবং নৃত্য নির্দেশক হিসেবে আমেরিকান বড় বাজেটের হলিউড মিউজিক্যালে অবদান রাখেন। তবে ১৯৩৪ সালে হলিউড সিনেমায় তার অভিষেক ঘটে।

আমেরিকান প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগানের মতো অভিনেতা রাজনীতিক হিসেবে সমানতালে চলে তার পথচলা। সফলও হয়েছেন রাজনীতিতে। ১৯৪৪ থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত অভিনেতাদের সংগঠন ‘ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড’-এর প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫১ সালে সিনেমা জগতে স্বীকৃতিস্বরূপ অনারারি একাডেমি অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হন। ১৯৬৫ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত ক্যালিফোর্নিয়া থেকে নির্বাচিত মার্কিন সিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি মার্কিন ইতিহাসে প্রথম সফলতম ব্যক্তি যিনি একজন সফল অভিনেতার পর একজন সফল রাজনীতিকে পরিণত হন।  এ ক্ষেত্রে নিশ্চয় এই সফল মানুষের নাম উচ্চারিত হয় রোনাল্ড রিগান এবং আর্নল্ড সোয়ার্জনেগারের সঙ্গেই।

 

রোনাল্ড রিগ্যান

রাজনীতিক হিসেবে ১৯৬৬ সালে ক্যালিফোর্নিয়া প্রদেশের গভর্নর নিযুক্ত হন। মার্কিন রাজনীতিতে তার উপস্থিতি রাজনীতির পটপরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪০তম প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান। একজন সফল রাজনীতিক এবং অভিনেতা কেমন হতে পারে তার আদর্শ রোনাল্ড রিগ্যান। অভিনয় থেকে কেউ এভাবে রাষ্ট্রক্ষমতার শীর্ষে আরোহণ করতে পারে- এ ধারণার বিকাশ প্রেসিডেন্ট রিগ্যানের হাত ধরেই। আর এমন চাকচিক্যময় জীবনের কারণেই ইমেজের দিক থেকে আমেরিকার অন্য সব প্রেসিডেন্টকে ছাড়িয়ে গেছেন তিনি। ১৯১১ সালের ৬ ফেব্র“য়ারি যুক্তরাষ্ট্রে এই প্রতিভাবান ব্যক্তি জন্মগ্রহণ করেন। তার সিনেমা জগৎ হলিউডে অভিষেক ১৯৩৭ সালে। দেখতে দেখতে ৫০টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। বিখ্যাত টেলিভিশন অনুষ্ঠান জেনারেল ইলেকট্রিক থিয়েটার এবং ডেথ ভ্যালি ডেইজ-এর উপস্থাপক ছিলেন তিনি। সিনেমা জগতে তার অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিলড-এর সভাপতি হয়েছিলেন তিনি। একজন সফল রাজনীতিক হিসেবে ১৯৬৬ সালে ক্যালিফোর্নিয়া প্রদেশের গভর্নর নিযুক্ত হন। মার্কিন রাজনীতিতে তার উপস্থিতি রাজনীতির পটপরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তার অসামান্য ব্যক্তিত্বগুণের স্বীকৃতিস্বরূপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। তিনি একজন সুবক্তা হিসেবেও খ্যতি অর্জন করেছিলেন।

১৯৮০ সালে জিমি কার্টারকে হারিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। রেডিওতে বিভিন্ন টকশোতে তার উপস্থাপনা মনোমুগ্ধ করত শ্রোতাদের। তার অভিনীত বিখ্যাত সিনেমাগুলোর মধ্যে অল-আমেরিকান, কিংস র, বেডটাইম ফর বঞ্জো উল্লেখযোগ্য।  ২০০৪ সালের ১৫ জুন প্রতিভাবান এই আমেরিকানের প্রয়াণ ঘটে।

 

বেন জোন্স

বেন লুইস জোন্স বা সংক্ষেপে বেন জোন্স ১৯৪১ সালের ৩০ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একজন সফল অভিনেতা, চলচ্চিত্র গল্পকার এবং রাজনীতিক। ‘দ্য ডিউকস অব হ্যাজার্ড’ সিনেমার কোটার ডেভেনপোর্ট চরিত্রটির জন্য সর্বমহলে জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন। অনেকেই তাকে কোটার ডেভেনপোর্ট চরিত্রটির মতো একজন অগোছালো ক্রেজি, নোংরা কার ম্যাকানিক হিসেবে মনে করত। তার নিজের জীবনযাপনের আমূল পরিবর্তন আনার জন্য একজন ডেমোক্রেটিক হিসেবে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। অভিনয় জীবনে তিনি যেমন চরিত্রের মায়াজালে আবদ্ধ ছিলেন ঠিক রাজনীতিতে সাধারণ মানুষের কাছাকাছি পৌঁছতে পেরেছিলেন। তবে রাজনীতি জীবনের শুরুতেই তিনি হোঁচট খেয়েছিলেন। ১৯৮৬ সালে জর্জিয়া থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভ পদের জন্য ভোটে অংশগ্রহণ করলে তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্যাট সুইনডালের কাছে পরাজিত হন। তবে তার প্রত্যাশার বেশি ৪৭ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন। তবে দুই বছর পর ১৯৮৮ সালে প্রতিদ্বন্দ্বী প্যাট সুইনডালের বিপক্ষে খুব সহজেই জয়লাভ করেন।

 

শার্লি টেম্পল

হাতেগোনা যে কজন নারী অভিনয় থেকে রাজনীতিতে এসে আলোচিত হয়েছেন তাদের মধ্যে শার্লি টেম্পল অন্যতম। তার কাহিনিটা অবশ্য অন্যদের চেয়ে ভিন্ন। টেম্পলের চেহারার সঙ্গে অনেকেই লিন্ডসে লোহানের চেহারার মিল খুঁজে পান। টেম্পল ছিলেন একজন শিশু তারকা, যে কিনা ২১ বছর পর্যন্ত বিভিন্ন চলচ্চিত্রে অভিনয় করে গোটা হলিউড কাঁপিয়েছেন। ২১ বছর বয়সে তিনি রুপালি পর্দার রঙিন দুনিয়া ত্যাগ করেন। হলিউডে তার বিচরণ যতটা সাফল্যে ভাস্বর, রাজনীতির গরল মাঠে তার অবস্থানটা খুব বেশি সুবিধার হয়নি। রিপাবলিকান দলের হয়ে ক্যালিফোর্নিয়ার মেয়র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান টেম্পল। তবে তার রাজনৈতিক জীবনের শুরুতেই বড় একটি ধাক্কা তিনি কাটিয়ে ওঠেন দ্রুতই। তাকে ঘানার রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ করেন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন। এর পর জর্জ ডব্লিউ বুশের সময় তিনি যুগোস্লাভিয়ার রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ পান। রুপালি পর্দা আর রাজনৈতিক জীবনের মিশেলে শেষ পর্যন্ত শার্লি টেম্পল হয়ে ওঠেন একজন সফল কূটনীতিবিদ।

 

 

ক্লিন্ট ইস্টউড

পৃথিবীতে এমন কোনো সেলিব্রেটি রাজনীতিক নেই যিনি ছোট্ট শহরকেন্দ্রিক রাজনীতিতে ক্লিন্ট ইস্টউডকে হারাতে পারেন। ১৯৩০ সালের ৩১ মে জন্মগ্রহণকারী ক্লিনটন বা ক্লিন্ট ইস্টউড পেশায় ছিলেন একজন আমেরিকান চিত্র অভিনেতা, নির্মাতা, প্রযোজক, সুরকার, চিত্রকর এবং রাজনীতিক। ১৯৫৯-৬৬ সালে টেলিভিশন সিরিয়াল ‘রহাইড’-এ একজন সহঅভিনেতা হিসেবে অভিনয় জীবনে যাত্রা শুরু করেন। ‘ম্যান উইথ নো নেম’, ‘ডার্টি হ্যারি’, ‘দ্য গুড’ চরিত্রগুলো তাকে সত্তর ও আশির দশকে ‘কালচারাল আইকনে’ পরিণত করেছিল। ১৯৯২ সালে ‘আনফরগিভেন’ এবং ২০০৪ সালে ‘মিলিয়ন ডলার বেবি’ সিনেমাকে কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি অস্কার পুরস্কারের শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রকার এবং সেরা প্রযোজক ক্যাটাগরিতে জয়ী হন। এ ছাড়া মনোনয়ন পান সেরা অভিনেতা হিসেবে। তার বিখ্যাত দুটি কমেডিয়ান ঘরানার ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র অ্যাভরি, হুইচ ওয়ে বাট লুজ (১৯৭৮) এবং এটির সিক্যুয়াল এনি হুইচ ওয়ে ইউ ক্যান (১৯৮০)। একজন সফল রাজনৈতিক হিসেবেও আমেরিকার ইতিহাসে তিনি চিরস্মরণীয়। স্থানীয় এবং জাতীয় রাজনীতিতে তিনি সমানভাবে সফল। ১৯৯৮ সালের এপ্রিলের মেয়র নির্বাচনে তিনি তার নিজ শহর কারমেল বাই দ্য সি, ক্যালিফোর্নিয়ার মেয়র নির্বাচিত হন।

 

ফ্রেডরিক গ্র্যান্ডি

ফ্রেডরিক গ্র্যান্ডি বা সংক্ষেপে ফ্রেড গ্র্যান্ডি ১৯৪৮ সালের ২৯ জুন জন্মগ্রহণকারী একজন সফল রাজনীতিক, অভিনেতা। তিনি ক্যারিয়ার শুরু করেন কংগ্রেসম্যান উইলি মেইনির সহকর্মী হিসেবে। জীবনের শুরুটা রাজনীতি দিয়ে হলেও ধীরে ধীরে অভিনয় জগতে প্রবেশ করেন। টেলিভিশন অনুষ্ঠান ‘দ্য লাভ বেটি’-এ ‘গোঁফের’ চরিত্রটি তাকে একজন সফল অভিনেতার স্বীকৃতি দেয়। ১৯৭৭ সালের এ আলোচিত চরিত্রটি সর্বমহলে আলোড়ন সৃষ্টি করতে সক্ষম। হার্ভার্ড থেকে পাস করা উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তিটি রাজনৈতিক জীবনে রকেট গতিতে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। সিওক্স সিটি, আইওয়ার সূর্যসন্তান বলে বিবেচিত গ্র্যান্ডি ১৯৮৬ সালে একজন রিপাবলিকান হিসেবে ইউনাইটেড স্টেট হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের সদস্য নির্বাচিত হন। সেই সময় পিপল ম্যাগাজিনে খবর প্রকাশিত হয়, অভিনয় ক্যারিয়ার থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন রাজনৈতিক গ্র্যান্ডি। চার বছর কংগ্রেসে কৃষি, অফিসিয়াল ম্যানেজমেন্ট, শিক্ষা এবং প্রতিরক্ষা খাতে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘এইট ওয়াচডগ’ পুরস্কার যা ট্রেজারি অ্যাওয়ার্ড নামে বিবেচিত, তা লাভ করেন। তবে ১৯৯৪ সালে গভর্নর অব আইওয়া নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী টেরি ব্রানস্ট্যাডের কাছে পরাজিত হন। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি রেডিও টকশোতে ‘দ্য গ্র্যান্ডি গ্র“প’ নামক অনুষ্ঠানের উপস্থাপক হন।

 

আল ফ্রাংকেন

আল ফ্রাংকেন বর্তমান সময়ের অন্যতম অভিনেতা এবং রাজনীতিবিদ। তার জন্ম ১৯৫১ সালের ২১ মে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে। তবে তার অন্য পেশাগুলোর মধ্যে রয়েছে লেখক, কমেডিয়ান, চলচ্চিত্র গল্পকার, রেডিও উপস্থাপক। তিনি তারকাখ্যাতি পান স্যাটারডে নাইট লাইভ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। এ ছাড়া তিনি সর্বোচ্চ বিক্রয়ের রেকর্ডকারী কমিক বইয়ের লেখক হিসেবে সর্বজন স্বীকৃত।

একজন সফলতম ডেমোক্র্যাট দলের রাজনীতিবিদ হিসেবে হিলারি ক্লিনটন, হ্যারি রেড, স্টুয়ার্ট স্ম্যালির সঙ্গে উচ্চারিত হয় তার নাম। সিনেট নির্বাচনের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ব্যয়ের রেকর্ডধারী নির্বাচনে তিনি নর্ম কোলম্যানকে হারিয়ে মিনেসোটার সিনেটর নির্বাচিত হন। ২০০৯ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত তিনি জুনিয়র ইউনাইটেড স্টেট সিনেটর হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি একাধারে যেমন অনেক টেলিভিশন সিরিয়ালে অভিনয় করেছেন তেমনি অনেক সিনেমায় অভিনয় করেছেন। তিনি জাতীয় সিন্ডিকেটের রাজনৈতিক রেডিও টকশো ‘দ্য আল ফ্রাংকেন শো’-এর উপস্থাপক। বর্তমান সময়ে তিনি রাজনীতির পাশাপাশি অভিনেতা হিসেবে খুব ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।

 

ভারতীয় তারকারা

আমাদের এই উপমহাদেশের রাজনীতিতে, বিশেষ করে ভারতের রাজনীতিতে অনেক বড় বড় তারকা জড়িয়ে গেলেও শেষ পর্যন্ত সাফল্যের দেখা পেয়েছেন হাতেগোনা কয়েকজন।

হলিউড তারকারা বিপুল সমর্থন নিয়ে রাজনীতিতে এসে শেষ পর্যন্ত সাফল্যের দেখা পেলেও অনেকটাই উল্টো দৃশ্য চোখে পড়ে আমাদের এই উপমহাদেশের রাজনীতিতে। বিশেষ করে ভারতের রাজনীতিতে অনেক বড় বড় তারকা জড়িয়ে গেলেও শেষ পর্যন্ত সাফল্যের দেখা পেয়েছেন হাতেগোনা কয়েকজন। বলিউডের বিগ-বি অমিতাভ বচ্চনের কথাই ধরা যাক। অমিতাভ নিজেই যে খ্যাতির শীর্ষে আছেন তা কিন্তু নয়। তার পারিবারিক বলয়টাও অনেক বেশি সুসংহত। আজকের অভিষেক বচ্চনের বাবা অমিতাভ বচ্চন হচ্ছেন ভারতের প্রখ্যাত কবি হরিবংশ রায় বচ্চনের ছেলে। ক্যারিয়ারের বৃহস্পতি তুঙ্গে থাকা অবস্থাতেই রাজনীতিতে নাম লেখান অমিতাভ।

১৯৮০ সালে উত্তরপ্রদেশের এলাহাবাদ থেকে কংগ্রেসের হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন অমিতাভ। এরপর বোফর্স কেলেঙ্কারিতে তার নাম জড়িয়ে পড়ে। যদিও পরে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হন, তবু তিনি এসব ঝক্কি সামলাতে চাইলেন না। তার কাছে তার দর্শকদের ভালোবাসাই বড় হয়ে দাঁড়াল। তিনি অনুধাবন করলেন, রাজনীতি তার জন্য নয়।

তার জন্য পর্দাই বেশি নিরাপদ। ভারতীয় চলচ্চিত্রের আরেক দিকপাল বিনোদ খান্না ১৯৯৭ সালে ভারতীয় জনতা পার্টিতে যোগ দিয়ে পাঞ্জাব গুরুদাসপুর থেকে লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হন। এরপর ২০০২ সালে সংস্কৃতি ও পর্যটনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

ভারতীয় চলচ্চিত্রের প্রিয়মুখ-খ্যাত জয়াপ্রদা ফিল্মের জনপ্রিয়তা কাজে লাগিয়ে ৩২ বছর বয়সে তেলেগু দেশাম পার্টিতে যোগ দেন। এর কয়েক বছর পরই তিনি দলবদল করে যোগ দেন সমাজবাদী পার্টিতে। অমিতাভ পত্নী ও অভিনেত্রী জয়া বচ্চন সমাজবাদী পার্টি থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। কংগ্রেস থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জনপ্রিয় অভিনেতা গোবিন্দ।

এমজেআর বা এম জে রামাচন্দ্র কেবল ভারতের জনপ্রিয় অভিনেতাই ছিলেন না, তিনি তিন মেয়াদে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রীরও দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়াও আরেক জনপ্রিয় নায়িকা জয়ললিতা তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়াও ধর্মেন্দ্রসহ বলিউডের আরও অনেকেই জড়িয়েছেন রাজনীতির সঙ্গে। কলকাতার টালিউড কিংবা তামিল ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির অনেক তারকাই জড়াচ্ছেন রাজনীতির সঙ্গে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর