চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের জোররগঞ্জ ইউনিয়নের নন্দনপুর গ্রামের বাসিন্দা প্রদীপ চন্দ্র নাথ (৩২)। বন্যার পানি বাড়ার সাথে সাথে পাঁচ সদস্যের পরিবার নিয়ে শনিবার আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়েছিলেন। বুধবার পানি নেমে যাওয়ার পর বাড়ি গিয়ে দেখেন তার মাটির ঘর ভূমিতে মিশে গেছে। বাড়ির ভেতরের সব ফার্নিচারও ব্যবহার অনুপযোগী। এই অবস্থায় তিনি আবারো জেবি উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে ফিরে গেছেন।
হিন্দু অধ্যুষিত গ্রামটির আরেক বাসিন্দা রিপন চন্দ্র দাশ (৩৯)। পেশায় দর্জির কাজ করা এই যুবকও পানি নামার পর বাড়ি ফিরেছিলেন। কিন্তু বাড়ি গিয়ে দেখেন তার কাঁচাবাড়িটি ভেঙ্গে পড়েছে। টিনের চালটি পাশ্ববর্তী স্থানে পড়ে আছে। বাসার ভেতরের সবকিছুই ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
প্রদীপ ও রিপনের মতো এরকম শত শত পরিবারের মাথা গোঁজার ঠাঁই কেড়ে নিয়েছে সর্বনাশা বন্যা। বিশেষ করে মিরসরাই ও ফটিকছড়ি উপজেলায় হাজার হাজার পরিবারের ঘর ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত বুধবার থেকে সৃষ্ট বন্যার পানি নামার সাথে সাথে ক্ষতচিহৃগুলো সামনে আসছে। মাথা গোঁজার ঠাই, গবাদিপশু, পুকুরের মাছসহ প্রায় সবকিছুই ভেসে গেছে বানের জলে। ফলে পানি নামার পরও আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরতে পারছেন না ক্ষতিগ্রস্থরা। এখন তাদের দুশ্চিন্তা ঘরবাড়ি ঠিক করা নিয়ে।
জানতে চাইলে রিপন চন্দ্র দাশ বলেন, ‘কে কোথায় থাকবো, সেটা তো পরের ব্যাপার। কিন্তু এখন ঘরে ঢোকার মতো পরিস্থিতি নেই। ঘরের ভেতর খাট, আলমিরাসহ সবকিছুই নষ্ট হয়ে গেছে। ঘর ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে। রান্না করার সুযোগ নেই। শুকনো কাঠ নেই। এখন নতুন করে ঠিক করা ছাড়া বসবাস করার পরিস্থিতি নেই। আবার ঠিক করতে গেলে তো অনেক টাকা লাগবে। বুঝতেছিনা কি করবো।’
ক্ষতিগ্রস্ত প্রদীপ চন্দ্র নাথ বলেন, ‘পাঁচ জনের পরিবার আমার। আশ্রয়কেন্দ্রে শুকনো খাবার দেয় বেশি। এগুলো কতোদিন খাওয়া যায়। তাছাড়া ওখানে কতোদিন আর থাকা যাবে। নিজের ঘরটিতো ঠিক করতো হবে। কিন্তু কিভাবে কি করবো এখনো কিছুই বুঝে উঠতে পারছিনা।’
মিরসাইয়ের বিভিন্ন এলাকায় বর্নাতদের উদ্ধার ও ত্রাণসামগ্রী বিতরণে নেতৃত্ব দেয়া রেড ক্রিসেন্ট এ্যালমনাই চট্টগ্রামের সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম রায়হান বলেন, ‘ফেনী নদী লাগোয়া মিরসরাইয়ের বিভিন্ন ইউনিয়ন সর্বোচ্চ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফেনী নদী থেকে পানি পশ্চিমে প্রবাহিত হওয়ার সাথে সাথে ক্রমান্বয়ে উপক‚লের দক্ষিনাংশও প্লাবিত হয়েছে। আপাতত খাদ্য সামগ্রীর পাশাপাশি জরুরী চিকিৎসা সেবা দেওয়া দরকার। অনেকের মাঝে পানিবাহিত রোগের ঝুঁকি আছে।’
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. ছাইফুল্লাহ মজুমদার জানান, প্রাথমিক হিসেবে মিরসরাই, ফটিকছড়ি ও সাতকানিয়া উপজেলার ৩৩টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ইউনিয়নের ৫৮ হাজার ৪৩৮টি পরিবার সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কারো ঘরবাড়ি একেবারে নিশ্চিহৃ হয়ে গেছে। কারো কারো আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গবাদি পশু, হাঁস মুরগী, মৎস প্রকল্পের মাছ পানিতে ভেসে গেছে। অনেক ফসলের মাঠ নষ্ট হয়েছে।
মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজা জেরিন বলেন, ‘পানি নেমে গেলেও ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় অনেকে বাড়ি ফিরতে পরছেন না। অনেককে দীর্ঘমেয়াদে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এখনো পর্যন্ত সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা, স্বেচ্ছাসেবকরা নিজেদের সাধ্যমতো মানুষের মাঝে খাবার, নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী, প্রয়োজনীয় ওষুধ ও চিকিৎসা সরবরাহ করে চলছে। আগামীতে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে নজর দিতে হবে।’
বিডি প্রতিদিন/এএম