হত্যা ও সহিংসতায় জড়িতদের দ্রুততার সঙ্গে বিচারের আওতায় আনা, আন্দোলনে নিহতদের পরিবারগুলোকে সহায়তা করা ও ক্ষতিপূরণ দেওয়া, আহতদের সুচিকিৎসাসহ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার আহ্বান জানিয়েছে নাগরিক সংগঠন সুজন (সুশাসনের জন্য নাগরিক)।
একইসঙ্গে রাষ্ট্র সংস্কারের মধ্য দিয়ে একটি গণতান্ত্রিক-অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের দাবি জানিয়েছেন সুজন নেতৃবৃন্দ।
শনিবার বেলা ১১টায় রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে সুজন আয়োজিত এক মানববন্ধন থেকে এসব দাবি জানানো হয়। ঢাকা ছাড়াও সুজনের উদ্যোগে একই দাবিতে আজ সারাদেশের সকল জেলা ও বিভিন্ন উপজেলায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।
ঢাকার মানববন্ধনে সুজন নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, সুজন সহ-সম্পাদক জাকির হোসেন, সুজন নির্বাহী সদস্য ড. তোফায়েল আহমেদ ও অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস প্রমুখ।
সুজন কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মানববন্ধনের প্রতি সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত, হেলফ ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি খন্দকার শহীদুল ইসলাম ও বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্ল্যানিং এডিটর মনজুরুল ইসলাম প্রমুখ।
মানববন্ধন থেকে সুজন-এর পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি কিছু আহ্বান জানানো হয়। সেগুলো হলো : হত্যা, সহিংসতা, লুটপাট ইত্যাদিতে জড়িতদের চিহ্নিত করার জন্য জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে দ্রুত তদন্ত কমিটি গঠন করা; হত্যা ও সহিংসতায় জড়িতদের দ্রুততার সাথে বিচারের আওতায় আনা; আন্দোলনে নিহতদের তালিকা তৈরি করে সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলোকে সহায়তা করা ও ক্ষতিপূরণ দেওয়া; আহতদের সুচিকিৎসাসহ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা; সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলায় জড়িতদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা; রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা; সংবিধান সংশোধনের লক্ষ্যে রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরি করা; সংবিধানের গণতান্ত্রিক চেতনা পরিপন্থি ৭০ অনুচ্ছেদের সংস্কার করা এবং প্রধানমন্ত্রী পদের মেয়াদ নির্ধারণ করা; জনপ্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সকল সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণমুক্ত করা; আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক নির্বাচনের ব্যবস্থা করা; ‘না-ভোটে’র বিধান পুনঃপ্রবর্তন করা; নির্দলীয় ভিত্তিতে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন আয়োজন করা; স্থানীয় সরকারের কর্মকাণ্ডে সংসদ সদস্যদের হস্তক্ষেপ নিষিদ্ধ করা; সংরক্ষিত নারী আসন এক-তৃতীয়াংশে উন্নীত করা এবং প্রত্যক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা; ঋণখেলাপিদের তালিকা প্রকাশ করা; ‘সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট’-এর নিবর্তনমূলক ধারাসমূহ বাতিলসহ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করো; সৎ, যোগ্য ও নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করা; দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির যথাযথ বাস্তবায়ন এবং বিশেষ ট্রাইব্যুনালে দুর্নীতিবাজদের বিচার করা; তরুণদের নেতৃত্ব বিকাশে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিতভাবে ছাত্রসংসদ নির্বাচনের উদ্যোগ গ্রহণ করা; গুম, খুন ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করা; একটি শোষণহীন মানবিক রাষ্ট্র গড়ে তোলা ইত্যাদি।
বিডি প্রতিদিন/এমআই