নারায়ণগঞ্জের ঘটে যাওয়া বিএনপি-জামায়াত দুর্বৃত্তদের তাণ্ডব ও দলের নেতা-কর্মীদের ভূমিকা সম্পর্কে মুখ খুলেছেন স্থানীয় নেতারা। শামীম ওসমান এমপি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমি দেশের বাইরে ছিলাম। ফিরেই অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হই। কিন্তু আমাকে একজন হিন্দু ভদ্রমহিলা ফোন করে তার ও কিশোরী সন্তানের ওপর ঘটে যাওয়া বীভৎস ঘটনার বর্ণনা দিয়েছিলেন। তা শুনে আর হাসপাতালের থাকতে পারিনি। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে জামায়াত শিবির ও অগ্নিসন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, নারায়ণগঞ্জবাসীকে ধ্বংসলীলার হাত থেকে বাঁচাতেই মাঠে নেমেছিলাম। কে নামেননি বা নামতে পারেননি তা আমার কাছে কোনো ম্যাটার নয়। আমার মনে হয়, ক্ষমতার সুবিধা নিয়ে কারা দেশের এমন ক্রান্তি লগ্নে ঘুমিয়ে আছেন আর এই চরম মুহূর্তেও বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করছেন তাদের চিহ্নিত করার সময় এসেছে। দলের সাংগঠনিক ভিত্তিকে গোছানো ও মজবুত না করতে পারলে সামনে এর চেয়েও বেশি ধাক্কা খাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। নগরীর ১৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ অফিস ও জেলা-মহানগর আওয়ামী লীগ অফিসে হামলা ও আগুন দেওয়ার পরও অনেক শীর্ষ নেতাই সেখানে যাননি। এ প্রসঙ্গে শামীম ওসমান জানান, তারা কেন নামেননি এ প্রশ্নের উত্তর তারাই দিতে পারবেন। কেন্দ্রীয় নেতাদেরও এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া উচিত।
এ বিষয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা বলেন, আমি ও আমার সভাপতি আনোয়ার হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ বাদল ব্যতীত জেলা ও মহানগর পর্যায়ের কাউকেই দেখলাম না ক্ষতিগ্রস্ত আওয়ামী লীগ অফিসটি দেখতে গেছেন। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাইসহ অনেক সহ-সভাপতি আছেন, তারাও আসেননি একটি বারের জন্য। কাকে বলব এসব কথা। কর্মীদেরই কী উত্তর দেব। মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম জানান, নারায়ণগঞ্জের পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, এক শামীম ওসমান ছাড়া কোথাও কেউ নেই। পদ-পদবির জন্য শত শত কর্মী নিয়ে যাদের মিছিল করতে দেখি, কেন্দ্রীয় নেতারা এসে যাদের গুণকীর্তন করেন, তাদের কারও দেখা পাইনি। নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা হুমায়ুন কবীর মৃধা বলেন, জেলায় চারজন আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি আছেন, মেয়র আছেন, দলীয় উপজেলা, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আছে, দলীয় কাউন্সিলররা আছেন। কিন্তু এক শামীম ওসমান ও তার পন্থি লোকজন ছাড়া মাঠে দেখলাম না কাউকেই। জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মহসিন মিয়া জানান, শামীম ওসমান মাঠে নামার কারণেই নাশকতাকারীরা পিছু হটেছে, নগরী রক্ষা পেয়েছে। নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল জানান, জেলার সব ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা শামীম ওসমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, দেশের অন্যতম ব্যবসা কেন্দ্র নারায়ণগঞ্জ শহর ছিল তাণ্ডবকারীদের অন্যতম টার্গেট। শামীম ওসমান পুরো নগরীকে নিরাপদ করেছেন। বিকেএমইএর সহ-সভাপতি সোহেল সারোয়ার জানান, শামীম ওসমান অসুস্থ শরীর নিয়ে মাঠে নেমেছেন। তিনি মাঠে না নামলে শহরের পরিস্থিতি কী হতো, ভাবলেও গা শিউরে উঠছে।