বন্যায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিপর্যয় নেমে আসার ফলে চট্টগ্রামের বাজারগুলোতে সবজির সংকট দেখা দিয়েছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা ইচ্ছামতো দামে পণ্য বিক্রি করছেন। একেকটি পণ্য স্বাভাবিক দামের চেয়ে কেজিপ্রতি ২০ টাকা থেকে ছয় গুণ পর্যন্ত বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। ফলে সবজির বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে।
চট্টগ্রামে এই মুহূর্তে সবচেয়ে আলোচিত পণ্যটি হলো কাঁচা মরিচ। তিন দিন আগে যে কাঁচা মরিচ খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি ১৮০-২৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে সেই পণ্যটি ৭২ ঘণ্টার ব্যবধানে বিক্রি হচ্ছে ৯৫০ থেকে ১ হাজার টাকায়। আবার কোনো কোনো বাজারে একটি কাঁচা মরিচও বিক্রির জন্য নেই। এর বাইরেও টম্যাটো, বরবটি, কাঁকরোল, গাজরসহ অন্যান্য পণ্যও কেজিতে ২০ টাকা থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নগরীর কর্ণফুলী বাজার, কাজীর দেউড়ি ও চকবাজারের একাধিক ব্যবসায়ীর সঙ্গে সবজির দাম নিয়ে কথা হয়। তারা বলছেন, বন্যার কারণে পরিবহন সংকটে পণ্য সরবরাহ কমে গেছে। বগুড়া, ফরিদপুর, জামালপুরসহ উত্তরের যেসব জেলা থেকে চট্টগ্রামের বাজারে পণ্য আসে মহাসড়ক অচল হওয়ায় তা বন্ধ হয়ে গেছে। এ কারণে বাজারে পণ্যের সংকট দেখা দিয়েছে এবং দামও বাড়তি।
যদিও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যেসব পণ্যের সরবরাহ নেই কেবল সেগুলো নয়, বন্যা-সংকট পুঁজি করে বেশির ভাগ সবজির দাম বাড়িয়েছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। পাইকারি বাজার রিয়াজউদ্দিন বাজারে কাঁচা মরিচ কেজিপ্রতি ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যেটা খুচরা বাজারে এসে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকায়। আবার সংকটময় মুহূর্ত হওয়ায় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোরও এদিকে নজর দেওয়ার সময় নেই।
কাঁচা মরিচ ছাড়াও চট্টগ্রামের বাজারে গাজর কেজিপ্রতি ২০০, কাঁকরোল ১২০, বেগুন ১৩০, টমেটো ৪০০, ঝিঙে ১১০, ঢ্যাঁড়শ ৮০ ও পটোল ৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এসব সবজি তিন দিন আগে ২০ থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত কম দামে বিক্রি হয়েছে। এর বাইরে বাজারে পিঁয়াজ ১১০, রসুন ২২০ ও আদা ২৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আলু বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি। বাড়তি দামের বিষয়ে জানতে চাইলে কর্ণফুলী বাজারের সবজি বিক্রেতা আলী হোসেন বলেন, পাইকারি বাজারে বেড়ে গেলে আমরা কীভাবে কম দামে বিক্রি করব। এখন হয় বাড়তি দামে বিক্রি করতে হবে, নইলে ব্যবসা বন্ধ রাখতে হবে।
এ প্রসঙ্গে রিয়াউদ্দিন বাজার আড়তদার কল্যাণ সমিতির সভাপতি ফারুক শিবলী বলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে তিন দিন ধরে গাড়ি আটকে আছে। অনেক সবজি পচে গেছে। চট্টগ্রাম পর্যন্ত আসতে পারছে না। এ কারণে সংকট দেখা দিয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ঠিক হলে দাম কমে যাবে।’ এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বিভাগীয় উপপরিচালক ফয়েজ উল্ল্যাহ বলেন, ‘আমরা নিয়মিত বাজার তদারকি করছি। এই মুহূর্তে সবজির সরবরাহ কিছুটা কম, এটা ঠিক। কিন্তু যে পণ্য থাকবে না, সেটা প্রয়োজনে বিক্রি বন্ধ থাকবে। পণ্য অল্প থাকলে বাড়তি দাম নেওয়ার সুযোগ নেই। আমরা খোঁজখবর নিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে শিগগিরই ব্যবস্থা নেব।’